কিনব্রিজ ঘিরে ‘ক্রাইম জোন’ পুলিশের পাতানো আটক বাণিজ্য

ZZZZZ

ডেস্ক রিপোর্ট ::  সুরমা নদীর ওপর কিন ব্রিজ এক সময় ছিল সিলেট নগরের একমাত্র প্রবেশদ্বার। বর্তমানে একমাত্র থাকার গৌরব হারিয়ে ফেললেও ঐতিহ্য হারায়নি। ঐতিহাসিক এই ব্রিজ এলাকায় কছুদিন ধরে ‘ক্রাইম জোন’ গড়ে ওঠেছে। বেশ ক’টি চক্র বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে চলেছে ব্রিজের উত্তরপ্রান্ত ও দক্ষিণপ্রান্ত এলাকায়। এ বিষয়ে পুলিশ সবকিছু জানলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এর ফলে দিন-দিন এ এলাকায় অপরাধ বিস্তার ঘটছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজ ওপর আছে একটি ঝাপ্টা পার্টি। এরা কিনব্রিজ দিয়ে পথচারী ও রিকশারোহীদের ব্যাগ-মোবাইল ফোন হঠাৎ টান মেরে ছিনতাই করে দৌঁড়ে পালায়। এই চক্রে আছে অন্তত ৩০ জন ছিঁচকে ছিনতাইকারী। চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে জমশেদ, জাহাঙ্গির ও লাম্বু সুমন।
ব্রিজটি ঘুরে দেখা গেছে, কিনব্রিজের উত্তরপ্রান্তের অংশে গাঁজা বিক্রির একটি চক্র গড়ে ওঠেছে। এরা রিকশাচালক সেজে গাঁজার পুরিয়া বিক্রি করে। এখানে রিকশাচালকেরা এসে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করে থাকে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া তরুণরাও এসে পুরিয়া কিনে নিয়ে যায়।
কিনব্রিজের এই গাঁজা বিক্রেতা চক্রের পেছনেই আছে ভাসমান যৌনকর্মী চক্র। এখানে পথচারী তরুণদের যৌনকর্মী দেখিয়ে ব্রিজের নিচে নিয়ে চক্রটি জিম্মি করে মোবাইলফোন-টাকাপয়সা নিয়ে ছেড়ে দেয়। আবার একই চক্রটি যৌনকর্মীদের তরুণ খদ্দেরদের হাতে তুলে দেয়। এই চক্রের সঙ্গে পুলিশের কিছু সদস্যের গোপন যোগসাজশ রয়েছে। রিকশায় ওঠামাত্রই খবর চলে যায় টহল পুলিশের কাছে। পুলিশ এসে উভয়কে ধরে খদ্দেরের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। যৌনকর্মীরা বকশিশ ছাড়াই ছাড়া পেয়ে যায়। অনেক তরুণ এই চক্রের ফাঁদে পড়ে দামি মোবাইলফোন ও টাকা হারাচ্ছেন। এই চক্রের মূল হোতারা হচ্ছে, পপি , কল্পনা ও রহিম।
কিনব্রিজের নিচেই পর্যটকদের জন্য রয়েছে ওয়াকওয়ে। এই ওয়াকওয়ের এক কোণে রয়েছে একটি পাবলিক টয়লেট। টয়লটেটি লিজ নিয়েছেন ছড়ারপাড়ের এক ব্যক্তি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ওয়াকওয়েতে বসা চটপটির দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন,‘ এদের অনেক পেটাই, তবু এখান থেকে বিদায় হয় না। তারপরও টহল পুলিশকে দিয়ে নিয়মিত টাইটের ওপরে রাখি।’
এদিকে, কিনব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তে ঝালোপাড়া-ভার্থখলা অংশে গড়ে ওঠেছে নানা অপরাধ জোন। এখানে মৌবন মার্কেটের সামনে রঙধনু হোটেলের সামনে রয়েছে একটি ইয়াবা চক্র। এরা শহরে ঢুকতে তরুণদের কাছে ইয়াবা বিক্রি করে। র‌্যাব অনেকবার এখানে অভিযান চালিয়ে বিক্রেতাদের ধরলেও চক্রটির মূল হোতা শহিদ ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাই বন্ধ হচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। ব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তে ঝালোপাড়া খেয়াঘাটে মুক্তা নামের ব্যক্তি ফেনসিডিল ব্যবসা করে আসছেন বলে অভিযোগ আছে। দক্ষিণ ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তের হোটেল ফারুকির পেছনে রয়েছে অঘোষিত যৌনপল্লি। এখানে সন্ধ্যার পরই ভাসমান যৌনকর্মীরা অবাধে বিচরণ করে। এতে ব্রিজ দিয়ে যাতায়াতকালে অনেক তরুণ এই পল্লিতে গিয়ে বিপথগামী হচ্ছে। শুধু তাই-ই নয়, পুলিশ এসে পাতানো আটক দেখিয়ে টাকা-মোবাইলফোন নিয়ে ছেড়ে দেয়। দক্ষিণ সুরমা ফাঁড়িতে নিয়ে বিকাশে টাকা নেওয়া হয় বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
কিনব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তে গড়ে ওঠেছে জুয়ার একটি বড় স্পট। এটি নিয়ন্ত্রণ করে কালা মানিক নামে পরিচিত ব্যক্তি। কালা মানিকের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় মাদক মামলা আছে। তবু রহস্যজনক কারণে সে আটক হচ্ছে না। উল্টো পুলিশের নাকের ডগায় আখতারের কালোনির এই জুয়ার স্পটটি চালিয়ে আসছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, কিনব্রিজের দক্ষিণপ্রান্তের নাজুর কলোনিতে গাঁজার ব্যবসা চলে আসছে। এখানে নাজু নামের এক নারী কয়েকজন বিক্রেতার মাধ্যমে গাঁজা বিক্রি করে থাকেন। গতকাল বৃহস্পতিবারও র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে এই স্পট থেকে ১০ কেজি গাঁজাসহ একজন বিক্রেতা আটক হয়েছে।
দক্ষিণ সুরমা ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ উপ পরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘ মানিকের বেশ ক’টি জুয়ার আসর আছে, খবর পেয়েছি। তার ওপরে একটি মাদক মামলা আছে। তাকে ধরারও চেষ্টা চালিয়ে আসছি। কিন্তু সে এতদিন আত্মগোপনে ছিল। শুনেছি, সম্প্রতি এসে আবার জুয়ার আসর চালু করেছে। তার সম্পর্কে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে।’