মারতে মারতে তৃতীয় শ্রেণীর শিশুকে অজ্ঞান (ভিডিও সহ)
ডেস্ক রিপোর্টঃ বরগুনার একটি কোচিং সেন্টারে অঙ্ক করতে না পারায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়েছেন শিক্ষক। একপর্যায়ে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
শিশু শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগে আজ শুক্রবার বিকেলে জহিরুল ইসলাম বাদল নামের ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাদল বরগুনার রোডপাড়া শহিদ স্মৃতি সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বরগুনার কলেজ রোডে বিজয় বৃত্তি কোচিং নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন।
আহত শিশু শিক্ষার্থীর নাম ইসরাত জাহান মালিহা (৯)। সে বরগুনার ক্যালিক্স একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। পাশাপাশি সে বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করে। বর্তমানে সে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
শুক্রবার সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বেত্রাঘাতের কারণে মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
মালিহার বাবা মো. জামাল সিকদার জানান, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার বিকেলেও মালিহা বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে কোচিং করতে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোচিং সেন্টারের মালিক ও পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বাদল মালিহাকে একটি অঙ্ক করতে দেন। মালিহা অঙ্কটি করতে না পারায় তিনি মালিহাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন। প্রহারের একপর্যায়ে মালিহা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর মালিহার জ্ঞান ফিরলে বাদল তাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখান।
জামাল সিকদার আরো বলেন, কোচিং শেষে রাত ১০টার পর মালিহা বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তাঁরা মালিহার গায়ে প্রচুর প্রহারের চিহ্ন দেখতে পান। পরে তাঁরা মালিহাকে নিয়ে বরগুনা সদর থানায় যান। এ খবর শুনে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকও সদর থানায় উপস্থিত হয়ে বাদলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য তাঁর গাড়িতে করে মালিহাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
জামাল সিকদার জানান, মালিহার বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এ অবস্থায় মালিহা আগামীকালের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে তিনি সংশয়ে রয়েছেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকে শিক্ষক বাদল পলাতক থাকায় এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাঁর স্ত্রী আয়েশা আক্তার মুক্তাকে বৃহস্পতিবার রাতে হেফাজতে নেয়। এ সময় তাঁর দুই শিশুসন্তানও বাধ্য হয়ে মায়ের সঙ্গে থানায় যায়। সারা রাত পুলিশ হেফাজতে থেকে শুক্রবার দুপুরে তারা বাড়ি ফেরার অনুমতি পায়।
শুক্রবার সকালে আহত মালিহাকে দেখতে এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে উপস্থিত হন বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, ‘মালিহার চিকিৎসায় যাতে কোনো ত্রুটি না হয়, সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বাদলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর কোচিং সেন্টারটিও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।’
মালিহার মামা মো. বেলাল হোসেনসহ একাধিক স্বজন জানান, মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক প্রহারের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ক্ষতস্থান থেকে এখনো রক্ত ঝরছে বলে তাঁরা জানান।
মালিহার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. রুস্তম আলী জানান, মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য প্রহারের চিহ্ন আছে। বেশ কিছু স্থানে প্রহারের ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
সিভিল সার্জন বলেন, গতকালের চেয়ে মালিহার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাদল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে তিনি অবৈধভাবে কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা ও ব্যবসা করেন। এর আগেও শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ প্রাথমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আটক করে তাঁর কোচিং সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন জানান, শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বাদলকে শুক্রবার বিকেলে শহরের নাথপট্টি লেক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে।