বাউল শাহ আবদুল করিম জীবনভর মানুষের জয়গান গেয়েছেন

01111-1ডেস্ক রিপোর্টঃ ভারতের আসাম বিশবিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড.তপোধীর ভট্রাচার্য বলেছেন বাউল স¤্রাট আবদুল করিম জীবনভর মানুষেরই জয়গান গেয়েছেন। তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে আমাদেরকে একত্রিত করে গেছেন। গতকাল সোমবার নগরীর রিকাবীবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটরিয়ামে শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো দৈনিক প্রথম আলো।
তিনি বলেন, শাহ আবদুল করিম এমন একজন মানুষ যার গান ও জীবনচারণ শুনলে, সামনে থেকে পেছনে, পেছন থেকে সামনে ফিরে যেতে হয়। তাঁকে নিয়ে রচিত বই গুলো যত পড়ি তত মুগ্ধ হই।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে করিম, রাধারমন,হাসন,দুরবীন,শীতালং শাহ, তাঁরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি রক্ষার্থে তাঁদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাদের না বাঁচাতে পারলে আমরা কোন অপসংস্কৃতি নিয়ে বাঁচব।
ড. তপেধীর বলেন, অসাম্প্রদায়িকতাই ছিল বাউল শাহ আব্দুল করিমের জীবনদর্শন। তিনি মনেপ্রাণে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেন। তার গানসহ প্রতিটি কর্মে ওই বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রথম আলো যুগ্ম সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন,বাউল আবদুল করিম একজন বড় প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন। বড় বিস্ময়ও তিনি। এক’শ বছর আগে জন্ম নেয় একজন মানুষ কত চিরকালিন-আধুনিক ও সমকালিন হতে পারেন এর উজ্জ্বল দৃষ্টিান্ত বাউল করিম। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আধুনিক এই সময়েও করিমের গান সব সময় আমাদের নতুন প্রজন্ম মনভরে শুনে। কারণ তার গানের মধ্যে মানুষের কথা ও সহজিয়া ভাষায় প্রাচীনের কথা ফুটে ওঠেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমি বাউল করিমকে শ্রদ্ধাকরি ভালোবাসি কারণ তাঁর কাছ থেকে আমি অসাম্প্রদায়িকতা শিখেছি। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি একারণে যে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করেও তিনি সাম্রাজ্যবাদ, সামান্তবাদ ও শ্রেণী বৈষ্যমকে বুঝতে পেড়েছেন এবং তার গানের মাধ্যমে সেটিকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। করিম আমাদের তস্কর শ্রেণিকে আমাদের চিনিয়েছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. স্বপ্না ভট্রাচার্য বলেন, শাহ আবদুল করিম একজন সাদামাটা মানুষ ছিলেন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো তরুণ প্রজন্মের কাছে দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। তারা ভাল গাইছে। তবে তাঁদের প্রতি আমার অনুরোধ তারা যেন সঠিক সুর ও লয়ে গান গায়।
শাহ আবদুল করিম তনয় শাহ নূরজালাল বলেন, আবদুল করিম তাঁর গানের মাধ্যমে মানুষের দু:খ,কষ্ট তুলে ধরেছেন। নিজে সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহন করেছেন বলে সাধারণ মানুষের দু:খ, কষ্ট বুঝতেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, করিম জীবদশায় যে দু:খ, কষ্ট ও অবহেলা পেয়েছেন। আর কোন বাউল যেন এভাবে অবহেলিত না হন। সে দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। বাউলদের যেন জীবিত অবস্থায় সম্মান জানানো হয়। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাউল করিম নিজের জন্য কোনো দিন কিছুই চাননি। তবে তিনি তাঁর অবহেলিত ভাটির মানুষের দুঃখ লাগবের স্বপ্ন দেখতেন। তাদের দুঃখের কথা গানের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু আজ করিমের শতবর্ষ জন্মদিনে তাঁর নিজ উপজেলায় কোনো কর্মসূচি নেই এটা আমাদের পিড়া দেয়।
এদিকে বিকেল পৌনে ৫টায় সিলেটের নজরুল অডিটোরিয়ামের মুক্তমঞ্চে ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম গানের সাথে ছন্দা নৃত্যালয় মনমুগ্ধকর নৃত্যের মাধ্যমে ও ১০০ মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন ড. তপোধীর ভট্রাচার্য।
দ্বিতীয় পর্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন ছিলেন কলকাতা থেকে আগত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক। তিনি প্রায় ঘন্টাব্যাপি একের পর এক করিমের গাণ গেয়ে শুনান। এছাড়া তিনি ওই গাণগুলো চুলছেড়া বিশ্লেষণ করেন। যা দর্শক স্রোতাদের মুগদ্ধ করে। গান সুর আর কথায় করিম বন্দনায় মেতে ওঠেন তিনি, মাতিয়ে রাখেন দর্শকস্রোতাদেরও। সংগীত পরিবেশন করেন হিমাংশু বিশ^াস, ফজলুল করিম তুহিন, লিঙ্কন দাশ, শাহ আবদুল করিম’র শীষ্য আবদুর রহমানসহ অনেকেই।
শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক কবি শুভেন্দু ইমামের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তি নাজমা পারভীনের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলে মেটোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহউদ্দিন, লেখিকা স্বপ্না ভট্টাচার্য, লেখক আনিসুল হক, কবি তুষার কর। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তৃতা করেন করিম গবেষক সাংবাদিক সুমনকুমার দাশ।