৩৭ বছর পর সীমান্তহাটে দেখা হলো মা-ছেলের

1260_b4ডেস্ক রিপোর্টঃ দীর্ঘ ৩৭ বছর পর বৃদ্ধ মা সৌর বালা ও ছেলে জগদীশ সূত্রধরের দেখা হলো ছাগলনাইয়া সীমান্তহাটে। বৃদ্ধা সৌর বালা ২ ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের কাজীরদিঘি গ্রামে বাস করতেন। ১৯৭৯ সালে তার বড় ছেলে কাজের সন্ধানে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সমরগঞ্জে যান। এরপর সেখানেই বিয়ে করেন। থেকে যান সেখানেই। ছেলেকে দেখতে বৃদ্ধার স্বামী  হরিনাথ সূত্রধর ভারতে গিয়ে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার খবর শুনে স্বামী ও ছেলেকে দেখতে সৌর বালাও সমরগঞ্জে যান। সেখান থেকে আর বাংলাদেশে আসতে পারেননি। প্রথমে কয়েক বছর জন্মভূমি বাংলাদেশের কথা তাঁর খুব মনে পড়ত। বাংলাদেশে থাকা তার অপর ছেলের জন্য কান্নাকাটি করতেন। বড় ছেলেকে বলেতেন তাকে বাংলাদেশে পাঠাতে। কয়েক বছর দুই ভাইয়ের মধ্যে চিঠিপত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ হত। এ অবস্থায় ১০-১২ বছর পর বৃদ্ধাকে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশে তার ছেলে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছে। কিন্তু ছোট ছেলের কথা কিছুতেই ভুলতে পারেননি বৃদ্ধা। সব সময় ছেলে, প্রতিবেশী ও এলাকার কথা মনে পড়লেও বাংলাদেশে আসার সুযোগ হয়নি বৃদ্ধার। ছাগলনাইয়ার মোকামিয়া ও ভারতের শ্রীনগর সীমান্তে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তহাট চালুর কথা লোকমুখে শুনেছেন। অনেক বাংলাদেশী এবং ভারতীয়রা কাঁটাতারের বেড়ায় বিছিন্ন হয়ে থাকলেও সীমান্তহাট চালুর পর দু’দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসে স্বজনদের সঙ্গে সহজে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। এমন খবর শুনে নাড়ি ছেঁড়া ধন ছেলে জগদীশকে দেখার জন্য মন ছটফট করতে থাকে বৃদ্ধা সৌর বালার। অপরদিকে, ছেলে আর্থিক অনটনের কারণে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে ভারতে যেতে না পারলেও অনেকের কাছে শুনেছেন তার মা ও ভাই এখনো ভারতের সমরগঞ্জেই আছেন। সীমান্তহাট চালুর পর কয়েক দফা হাটে এসে স্থানীয় লোকজনের কাছে মায়ের খোঁজ নিতে থাকেন। অবশেষে কিছুদিন আগে বৃদ্ধার এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে মাকে সীমান্তহাটে আসার জন্য খবর দেয় জগদীশ। খবর পেয়ে হাটের দিন গুণতে থাকেন সৌর বালা। গত ৯ই ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ ৩৭ বছর মা ছেলের মিলন হয় সীমান্তহাটে। এ সময় দুই জনের পরনেই ছিল সাদা ধুতি এবং হাতে চলার সঙ্গী লাঠি। মাকে দেখেই ছেলে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর ছেলেকে দেখেই বৃদ্ধা মা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘ওরে জগদীশ এতদিন কোথায় ছিলি বাবা। কত রাত কেদেঁছি তোর জন্য।’ মাকে পেয়ে ছেলে জগদীশ বলে ওঠেন, মরার আগে তোকে একবার দেখার বড় আশা ছিল মা।