কিশোরগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে দৌড়ঝাঁপ, জল্পনা-কল্পনা
ডেস্ক রিপোর্টঃ বেশ কিছু দিন ধরে একেবারেই অন্য চেহারায় কিশোরগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র স্টেশন রোডে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। এতদিন দলীয় এ কার্যালয়টিতে দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় পাহারায় থাকা পুলিশের অবস্থানই ছিল দৃশ্যমান। কিন্তু সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দ্রুতই বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। সকাল-সন্ধ্যায় নেতাকর্মীদের আনাগোনা বাড়তে থাকে দলীয় কার্যালয়ে। সম্মেলন অনুষ্ঠানের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে নেতাকর্মীদের সেই আনাগোনাও ততই বাড়ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যারাতে পদপ্রত্যাশী নেতা ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের সরব পদচারণায় মুখর এখন আওয়ামী লীগ কার্যালয়। গভীর রাত পর্যন্ত চলছে জম্পেশ আড্ডা। সম্ভাব্য পদপ্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিং ছাড়াও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন জেলা, উপজেলা ও পৌর নেতাদের সঙ্গে। দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছরের সাংগঠনিক স্থবিরতা কাটিয়ে নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝেও। আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামে আয়োজন করা সম্মেলনকে ঘিরে তাই ব্যাপক কৌতূহল ও উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। এছাড়া নতুন নেতৃত্ব বিশেষ করে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসছেন, এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই দলটির মধ্যে। খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নিজ জেলার এ সম্মেলনের দিকে নজর রাখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৭ সালে। এ অবস্থায় গত মাসে কেন্দ্র থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য ১৯শে ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। ১৯ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে চলা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য এর আগে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ২০১৪ সালে বেশ জোরেশোরে জেলা সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ নিয়ে ওই বছরের ১৩ই সেপ্টেম্বর জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে। সভায় ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তারিখ ঘোষণাতেই থেমে ছিল সে সম্মেলন আয়োজন। বরং সম্মেলন আয়োজনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয় ও গৃহদাহ চরমে ওঠে। সম্মেলনকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকার কারণে করিমগঞ্জ, পাকুন্দিয়া ও ভৈরবে দলীয় কর্মকাণ্ড পড়ে ১৪৪ ধারার কবলে। তবে এবার যেকোন মূল্যে সম্মেলন আয়োজন করা হবে বলে বলছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ লক্ষ্যে গত ২৩শে জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভাও করেছে। এতে উপজেলা/পৌর কমিটিগুলোর সম্মেলনের চিন্তা বাদ দিয়েই জেলা সম্মেলন আয়োজনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্মেলন উপলক্ষে জেলা সদরে অবস্থানকারী নেতৃবৃন্দকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের জন্য বর্ধিত সভা থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদকে সভাপতি, তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত শামসুল হক গোলাপ মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলামকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে তিন বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হয়। ৬৩ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির সভাপতি মো. আবদুল হামিদ সপ্তম সংসদের প্রথমে ডেপুটি স্পিকার ও পরে স্পিকার, নবম সংসদে দ্বিতীয় মেয়াদে স্পিকার এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৯৯ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক গোলাপ মিয়া, ২০০৭ সালের ১৪ই অক্টোবর ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন ঠাকুর, ২০০৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিন্নাতুল ইসলাম, ২০১৩ সালের ৫ই মার্চ সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন এবং ২০১৫ সালের পহেলা ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম পট্টু মিয়া মৃত্যুবরণ করেন। কমিটিতে থাকা অন্যদের মধ্যে সহসভাপতি ফয়সল আলম এবং চার সদস্য শ্যামল ঘোষ, আনোয়ার হোসেন, সোহরাব উদ্দিন ও হুমায়ুন কবিরও মারা গেছেন। এছাড়া কমিটির কয়েকজন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় এবং দুই জনকে বহিষ্কার করায় কমিটিতে সক্রিয় নেতাদের তালিকা এখন হাতেগোনা। বর্তমানে ওই কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ২য় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘ এ সময়ে দলের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব আসেনি। যে কারণে নেতৃত্বে আসার মতো অনেক যোগ্য নেতাকর্মী পদবঞ্চিত থাকার পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা বিরাজ করছিল। বিগত প্রায় এক দশক ধরে একমাত্র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজলকে নিয়মিত দলীয় কার্যালয়ে হাজিরা দিতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সরব হতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। পদ-পদবি পেতে তারা শুরু করেছেন দৌড়ঝাঁপ।
তবে নেতৃত্ব নির্বাচন ভোটে হবে নাকি কেন্দ্রের মনোনীত নাম ঘোষণা করা হবে এ নিয়ে অন্ধকারে রয়েছেন নেতারা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত কয়েকটি জেলার সম্মেলনে ভোট ছাড়াই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা দেয়ায়, এখানেও উন্মুক্ত সমাবেশে কেবল সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। আর এ কারণে সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের ব্যাপক কৌতূহলের পাশাপাশি চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সম্ভাব্য সভাপতি হিসেবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট প্রিন্সিপাল এম এ রশিদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পিপি শাহ আজিজুল হকের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মাহমুদ পারভেজ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ডের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুলের নাম আলোচিত হচ্ছে।