বদলে যাচ্ছে সিলেট নগরীর দৃশ্যপট

সিলেটের রিকাবীবাজারে চলছে চার লেন সড়ক নির্মাণ (ছবি সমকাল)
সিলেটের রিকাবীবাজারে চলছে চার লেন সড়ক নির্মাণ (ছবি সমকাল)

ডেস্ক রিপোর্টঃ অবকাঠামো উন্নয়ন ও কয়েকটি সড়ক সংস্কার হলে সিলেট নগরীর চেহারাই পাল্টে যাবে। এ লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। বড় ধরনের পরিবর্তন হবে আগামী জুলাই মাসে; নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর হলে। কারাগারের এই জায়গায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। নগরীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে ঐতিহ্যবাহী কিস্ফন ব্রিজ পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণের কাজও শুরু হচ্ছে অচিরেই। রিকাবিবাজারের কবি নজরুল চত্বর থেকে পুলিশ লাইন পয়েন্ট পর্যন্ত সড়ক চার লেন করার কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি নগরীর আরও কয়েকটি সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। নগরীর উপশহরে দেশের প্রথম
পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা এলাকায় বিদ্যুৎ লাইনসহ সব ধরনের তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সিসিক।
এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে আধ্যাত্মিক নগরী হিসেবে পরিচিত সিলেট একই সঙ্গে পর্যটন নগরী হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসেন। এ ছাড়া নগরবাসীর জন্যই সুস্থ ও সুন্দর একটি নগর অত্যাবশ্যক। এমন বিষয় মাথায় রেখে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা অবশ্যই ভালো। তবে সবকিছু নির্ভর করবে প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর। এই প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সরকারের প্রশংসা করবে। তিনি বলেন, আমাদের যারা অভিভাবক রয়েছেন, তারা এই প্রকল্পগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আরও উদ্যোগ নেবেন_ এটাই কাম্য।
গত ১১ জানুয়ারি নগরীর উপকণ্ঠ বাদাঘাটে নতুন কারাগারের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, নগরীর বন্দরবাজার থেকে কারাগার স্থানান্তরের পর সিলেট মহানগরীর ফুসফুস হবে পুরনো জেল। ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে পুরনো কিছু স্থাপনা রেখে এটাকে সিলেট মহানগরীর সেন্ট্রাল পার্ক করা হবে। ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে; নামকরণের চিন্তাভাবনা চলছে। সময়মতো তা জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, কারাগার স্থানান্তর হওয়ার পর এ জায়গায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া নগরীর জল্লারপারের জল্লাছড়া (খাল) আমরা দখলমুক্ত করে খনন কাজ শুরু করেছি। জল্লাছড়া খনন শেষে এখানে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খালের দু’পাশে ওয়াকওয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে; যাতে জিন্দাবাজারে শপিং করতে আসা নগরবাসী চাইলে একটু বিনোদন পান। চাইলে খালে নৌকা চড়ার সুযোগও দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা সিলেট নগরীকে আধুনিক ও জঞ্জালমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘আলোকিত সিলেট’ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে তিনি নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারেননি বলে বিরোধী দল অভিযোগ করে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সেই সময় নগরীর বন্দরবাজার থেকে কারাগার স্থানান্তরের উদ্যোগ নেন অর্থমন্ত্রী। ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর উপকণ্ঠ বাদাঘাটে নতুন কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তর হচ্ছে আগামী জুলাই মাসে। ইতিমধ্যে কারাগারের ৮৫ শতাংশ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছুদিন সিলেট কারাগারে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কারাগারের যে সেলে ছিলেন, তার স্মরণে জেলখানা স্থানান্তরের পর ওখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স সার্ভিসেস প্রজেক্টের (এমজিএসপি) আওতায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে সিসিক। এ অর্থের মধ্যে নগরীর হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে কি্বন ব্রিজ পর্যন্ত সড়ক চার লেন করা হবে। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নুর আজিজুর রহমান বলেন, এ প্রকল্পে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর নগরীর রিকাবিবাজার-মিরের ময়দান পর্যন্ত সড়ক চার লেনের কাজ আগামী দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। অন্যদিকে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, চার লেন করে এই সড়কটি নগরীর সুবিদবাজার পর্যন্ত নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। মূলত সুরমা নদীর ওপর কাজিরবাজার সেতু নির্মাণের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সড়ক প্রশস্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর উদ্বোধন করেন। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ি থাকায় আপাতত এ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ লামাবাজার পয়েন্ট এলাকা প্রশস্ত করা যাচ্ছে না বলে জানান সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
নগরীর উপশহরে দেশের প্রথম পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে প্রস্তাবিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ প্রকল্পসহ সিলেট বিভাগের বিদ্যুতের উন্নয়নে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ কাজের জন্য এক হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে তা একনেকের বৈঠকে অনুমোদিত হলেই দ্রুত কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে উপশহরে আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল লাইন স্থাপন প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় হয়ে তা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে গেছে বলে শুনেছি। একনেকের অনুমোদন পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। প্রস্তাবনায় উপশহরের সাড়ে সাত কিলোমিটারের ১১ কেভি লাইন মাটির নিচে স্থাপন করতে ১৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং ৪০০ ভোল্টের ২৮ কিলোমিটার লাইনকে পাতাল লাইনে স্থাপন করতে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।