সততার অনন্য নজির সুনামগঞ্জের আমজাদ

amzadসুনামগঞ্জ সংবাদদতাঃ সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুধপুর গ্রামের হতদরিদ্র রিকশাচালক আমজাদ আলী (৪৫)। দুই দশক ধরে সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালান। গত এক বছরে দুবার টাকা পেয়ে মালিককে ফেরত দিয়েছেন। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে সুনামগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর হারানো নগদ ১৫ হাজার টাকা, এক লাখ ২০ হাজার টাকার একটি স্বাক্ষর করা চেক এবং একটি ফাঁকা চেক পেয়ে মালিককে খুঁজে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমজাদ। তিনি সুনামগঞ্জ রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সুনামগঞ্জের জনদরদি ও নির্লোভ জননেতা আলফাত উদ্দিন মোক্তার। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আমজাদ আলী সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালাতে আসেন। এখন স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে থাকেন শহরের আলীপাড়া আবাসিক এলাকায়। রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ টাকা রোজগার করে টেনেটুনে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তাঁর তিন সন্তানকে শত অভাবের মধ্যে তিনি বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করাচ্ছেন। গত সোমবার বিকেলে শহরের ষোলঘর এলাকার রামকৃষ্ণ মিশনের সামনে একটি মানিব্যাগ দেখতে পান আমজাদ। মানিব্যাগটি কুড়িয়ে দেখতে পান এতে নগদ ১৫ হাজার টাকা, দুটি চেক, জরুরি কিছু কাগজ ও একটি মুঠোফোনের সিম রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সিমটি তাঁর মুঠোফোনে তুলে সংরক্ষিত নম্বরে কল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নম্বরটি ডিসকানেক্ট দেখতে পান। পরে তিনি রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবিমল চক্রবর্তী চন্দনের বাসায় এসে ঘটনা খুলে বলেন। চন্দন ও আমজাদ আলী এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য স্থানীয় একটি দৈনিকের অফিসে আসছিলেন। পথে বিহারি পয়েন্টে এসে মানিব্যাগ হারানোর মাইকিং শুনতে পান। পরে তাঁরা ওই মাইকওয়ালাকে আটকে ঘটনা খুলে বলেন। খবর পেয়ে ছুটে আসেন মানিব্যাগের মালিক শহরের মধ্যবাজারের অসীম রায়। রাত সাড়ে ৮টায় মালিকসহ ওই দুজন দৈনিক সুনামকণ্ঠ কার্যালয়ে এসে সাংবাদিকদের সামনে মানিব্যাগ, নগদ টাকা ও ব্যাংকের দুটি চেক তুলে দেন। এ সময় অসীম রায় খুশি হয়ে তাঁকে কিছু টাকা দিলে ওই টাকাও ফিরিয়ে দেন আমজাদ। রিকশা শ্রমিক নেতারা জানান, গত বছর রমজান মাসে আমজাদ সুনামগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের সামনে শহরের আরপিন নগরের আরিফ চৌধুরীর ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডেল পান। পরে তিনি ওই বান্ডেলটি পৌর মেয়র আইয়ুব বখত জগলুলের কাছে দিয়ে আসেন। আইয়ুব বখত জগলুল শহরে মাইকিং করিয়ে মালিক খুঁজে ওই টাকা মালিকের হাতে তুলে দেন। ওই সময় মালিক রিকশাচালক আমজাদ আলীকে খুশি হয়ে কিছু টাকা দিতে চাইলে তিনি সেই টাকাও ফিরিয়ে দেন। এভাবে শত অভাবের মধ্যে সন্তান-সন্ততি নিয়ে থাকার পরও একের পর এক হারানো টাকা পয়সা ও মূল্যবান সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সুনামগঞ্জের মানুষ তাঁকে আলাদা চোখে দেখে। রিকশাচালকদের কাছে তিনি এখন নায়কের মতো। তাঁর সংগঠন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা তাঁকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। শত অভাবের মধ্যে থেকেও তিনি সততাকে জয় করায় তাঁরা তাঁকে অভিনন্দন জানান। আমজাদ আলী বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার দরিদ্র বাবার কাছ থেকে সততার পাঠ নিয়েছি। শত অভাবে দিনযাপন করলেও বাবা ছিলেন নির্লোভ। তিনি আমাদের উপদেশ দিয়েছিলেন, জীবনে যেন কোনো মানুষের সম্পদে লোভ না করি। বাবার কথাই আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।’ সুনামগঞ্জ রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুবিমল চক্রবর্তী চন্দন বলেন, ‘আমজাদ আলী আমাদের সংগঠনের অহংকার। তিনি বারবার তাঁর সততার পুরস্কার দিচ্ছেন। এক বছরের মাথায় দুইবার নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র পেয়ে তিনি মালিক খুঁজে সেই সম্পদ অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। এরাই আমাদের সমাজের সোনার মানুষ।’