নিউইয়র্কে বিশ্ব হিজাব দিবস পালিত

বিশ্বহিজাব দিবসে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি- এনা।
বিশ্বহিজাব দিবসে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা: ধর্মীয় স্বাধীনতা মানেই ধর্মান্ধতা নয়, কোন ধর্মেই সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসীদের স্থান নেই। সকল ধর্ম বিশ্বাসীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠার নামই বিশ্ব শান্তি। হিজাবীরা সন্ত্রাসী নয়, এটা আমাদের ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বব্যাপী মুসলিম বিরোধী মিথ্যা প্রচারণা ও রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণেই আজকে হেইট ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন ইসলাম ধর্ম বিশ্বাসীরা। এর থেকে উত্তরণে মুসলিমদের পাশাপাশি সব ধর্মের অনুসারিদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি (নিউইয়র্ক সময়) সোমবার সকালে নিউইয়র্কের ম্যানহটানের ‘সিটি হল স্টেপস’র সামনে অনুষ্ঠিত বিশ্বহিজাব দিবসে নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে বাংলাদেশীসহ ভিন্ন ভাষার মুসলিম নারীরা অংশগ্রহণ করেন এবং শ্লোগানে শ্লোগানে ইসলাম বিরোধী মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানান। এর আগ থেকেই প্রচুর পরিমাণ এনওয়াইপিডি সদস্য সিটি হলের চারপাশ নিরাপত্তার বেস্টনির আওয়তায় নিয়ে আসেন।
২০১৬’র বিশ্ব হিজাব দিবসের সাথে একাত্মতাা পোষণ করেন ম্যানহাটন বোরো প্রেসিডেন্ট গেল ব্রিওয়্যার, আরব আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্কের নির্বাহি পরিচালক লিন্ডা সারস্যুর, সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন এন্ড স্কলারশিপের পক্ষে মাজেদা উদ্দিন এবং বিশ্ব হিজাব দিবসরে প্রবর্তনকারি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাজমা’সহ বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের নারী নেত্রীরা এবং নিউইয়র্ক সিটির বেশ কয়েকজন ইলেকটেড ওইমেন অফিসিয়ালরা অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, নিউইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে হেইট ক্রাইমের উত্থানে মুসলিম বিরোধী প্রচারণা এবং রাজনীতিবিদদের উস্কানিমূলক বক্তব্য দায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প’র ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব ও বক্তব্য অতীতের চেয়ে আরো হেইট ক্রাইমকে উস্কে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এতে মুসলিম ও অমুসলিম বিভিন্ন সংগঠনসহ সিটির মুসলিম কমিউনিটির নারী নেত্রীরা অংশ নেন। ‘উই কভারড হেয়ার; নট আওয়ার মাইন্ড’ এ বিশ্বাসকে বুকে ধারণ করে তারা বলেন, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র শান্তির ধর্ম যেখানে ঘৃণার কোন স্থান নেই। এসময়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রত্যেক ধর্মের স্বাধীনতা রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা দীপ্ত শপথও করেন বিশ্ব হিজাব দিবসের অংশ নেয়ারা।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নাজমা একটি অনলাইন হিজাব স্টোর খুলেন। ইসলামে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও হেইট ক্রাইম দূর করতেই তার ওই প্রয়াস বলে জানান তিনি। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। নাজমার সাথে একাত্মতা পোষণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হিজাবী নারীরা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে শুরু করেন। যাতে তারা তুলে ধরেন নাজমার মতো আরো অনেকেই তাদের কর্মক্ষেত্র কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
এরপর ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারী, নাজমা www.worldhijabday.com নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেইসবুকে World Hijab Day নামের একটি ফ্যান পেইজ চালু করলেন। সেই সাথে নাজমাসহ বিশ্বের সকল ধর্ম বিশ্বাসী নারীরা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ১লা ফেব্রুয়ারি একদিনের জন্য হলেও হিজাব পরিধান করে নানা ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের নারীরা হিজাব পরিহিতবস্থায় এই দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানি কর্মসূচিতে অংশ নেন। ২০১৩ সালের ১লা ফেব্রুয়ারিতে এতে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের বিভিন্ন ধর্মের নারীরা অংশ নেন। তবে, এবছর ১শ ৪০টিরও বেশী দেশ দিবসটি পালন করছে বলে জানানো হয় নিউইয়র্কের কর্মসূচি থেকে।