কারাগারে স্বামীকে গাঁজা দিতে গিয়ে ধরা পড়লেন স্ত্রী
ডেস্ক রিপোর্টঃ স্বামী কালু মিয়া কারাবন্দি। মাদকাসক্ত। সঙ্গে মাদকের ব্যবসাও করতেন। মাদক মামলায় মাস খানেক ধরে বন্দি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। স্ত্রী দেখা করতে গেলে গাঁজা পাঠাতে বলেছিল। কারাগারের ভেতরে একদিকে নিজের খাওয়া চলবে, অন্যদের কাছে বিক্রিও করা যাবে। স্বামীর এই আহ্বানে সাড়া দেন ইয়াসমিন বেগম। জিন্সের প্যান্টের ভেতরের দিকে দুই সেলাইয়ের মাঝখানে কৌশলে গাঁজা ভরে দেন। এমনভাবে সেলাই করে দেন যে প্যান্টের পকেট হাতড়িয়ে বা ঝাঁকি দিয়েও বোঝার উপায় নেই। লম্বা সেলাইয়ের মাঝখানে গাঁজা। কিন্তু কপাল মন্দ তার। কারারক্ষীদের কাছে শেষে ধরা খেতেই হলো তাকে। কারারক্ষীরা জিন্স প্যান্টের সেলাই খুলে উদ্ধার করলেন আধা কেজির মতো গাঁজা। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় তাকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে ৫০ দিনের কারাবাসের দণ্ড দেয়া হয়। সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা। অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাবাস। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকালে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ওই নারী প্যান্টের ভেতর এমনভাবে গাঁজা নিয়ে এসেছিলেন যে, সাদা চোখে প্যান্টটি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। এর ভেতর থেকে গাঁজা উদ্ধার করে আমরাও রীতিমতো বিস্মিত। পরে চকবাজার থানা পুলিশকে খবর দেয়া হয়। এই ঘটনার পর কারাবন্দিদের কেউ পোশাক দিতে চাইলে তা খুটিয়ে খুটিয়ে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকালে একটি অফ হোয়াইট কালারের জিন্সের প্যান্ট ও শীতের কাপড় নিয়ে আসেন ইয়াসমিন। এসব কাপড় স্বামীকে দেয়ার জন্য কারারক্ষীদের দ্বারস্থ হন তিনি। স্বামী কালু মিয়া মাস খানেক ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেই বন্দি। মাদকাসক্ত স্বামীর নেশার চাহিদা মেটাতে জিন্সের প্যান্টের ভেতর বিশেষ কায়দায় গাঁজা ঢুকিয়ে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। কারারক্ষীদের তল্লাশির সময় প্যান্টটি স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন বেশি মনে হয়। কিন্তু পকেট হাতিয়ে বা ঝাঁকি দিয়েও ভেতরে কিছু পাওয়া যায়নি। পরে প্যান্টটি উল্টানো হয়। তখনই বোঝা যায় ইয়াসমিনের চাতুরী। প্যান্টের পায়ের অংশের দুই সেলাইয়ের মাঝে লম্বা করে শেষ পর্যন্ত কিছু একটা ঢোকানো। পরে সেলাই কেটে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় গাঁজা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াসমিন জানান, স্বামীর গাঁজার নেশা। আগের সাক্ষাতের সময় এভাবে গাঁজা দিতে শিখিয়ে দিয়েছিল। তাই স্বামীর অনুরোধে গাঁজা ভরে দিয়েছিল সে। কারা কর্মকর্তারা জানান, গাঁজাসহ ইয়াসমিনকে চকবাজার থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে থানা পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ইয়াসমিনকে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই বছর আগে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ বাওরনগরের বাসিন্দা কালু মিয়া ও ইয়াসমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের আগ থেকেই কালু মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক মামলায় কারাগারে ঢোকার পর ভেতরে মাদক বিক্রির ধান্দায় সে স্ত্রীকে দিয়ে গাঁজা নেয়ার চেষ্টা করে। এক শ্রেণির অসাধু কারারক্ষীর সহায়তায় কারাগারের ভেতরে মাদক বিক্রিও করা যায়। কালু এই সুযোগ নিতে চেয়েছিল হয়তো। তবে তার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে কারারক্ষীদের কারণে।