সিলেট বিসিক: নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

bcic_sylhet
ফাইল ফটো

ডেস্ক রিপোর্টঃ নগরীর গোটাটিকর বিসিক শিল্প নগরীতে শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ৬১ টি। তবে এগুলোর একটিরও নেই নিজস্ব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিসিকে নেই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও।

ফলে বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যে ভরাট হয়ে থাকে বিসিক এলাকার ড্রেন-সড়ক। এসব বর্জ্যের দুর্গন্ধে পুরো শিল্প নগরীই পরিণত হয়েছে অনেকটা ভাগাড়ে। শিল্প কারখানাগুলোর অপরিশোধিত তরল বর্জ্যরে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।

জানা যায়, শিল্প কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক। তবে গোটাটিকর বিসিকের একটি কারখানারও নেই তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।

তবে বিসিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চেয়ে এখানকার বড় সমস্যা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বিসিকের ভেতরেই পানি জমে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। দিনদিন এই সমস্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গোটাটিকর বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা শেখ ফজলল হক বলেন, এই বিসিক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। তৎকালীন অবস্থা বিবেচনায় এখানকার অবকাঠামো গড়ে ওঠেছিলো। কিন্তু এখন শিল্প কারখানার প্লট থেকে সড়ক অনেক উঁচু হয়ে গেছে। তাছাড়া তখন বিসিকের পানি ড্রেনের মাধ্যমে পাশের হাওরে গিয়ে পড়তো। এখন হাওর ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠেছে। ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের যথেষ্ট ড্রেন আছে। কিন্তু পানি যেতে পারছে না। ড্রেনে আটকা পড়ছে। ড্রেন উপচে সড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

এই সমস্যা দিনদিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সড়ক ও জনপথকে অনুরোধ করেছি, তারা তাদের জায়গায় পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল গোটাটিকর বিসিক শিল্প নগরী পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা হানিফি বোর্ড মিল ও খাদ্যজাত শিল্প প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ভিউ ইন্ডাস্ট্রিকে দ্রুত ইটিপি স্থাপনের সুপারিশ প্রদান করেন।

বিসিক পরিদর্শনে যাওয়া পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেটের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানকার বেশিরভাগ কারখানারই ইটিপির প্রয়োজন নেই। কারণ এসব কারখানা থেকে তরল বর্জ্য হয় না। যে দুটি কারখানার ইটিপি জরুরী তাদের আমরা ইটিপি স্থাপনের কথা বলেছি। এখন আমরা বিষয়টি তদারকিতে রেখেছি।

তিনি বলেন, এখানকার বড় সমস্যা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা। ফলে পানি জমে পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যস্ত হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা বিসিক কর্তৃপক্ষকে বলেছি।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকা প্রসঙ্গে বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা বলেন, এগুলো তো কারখানা মালিকরাই করবে। আমরা বিভিন্ন সময় তাদের এ ব্যাপারে চিঠি দেই। তবে ইটিপি স্থাপন অনেক ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় ছোট ছোট কারখানার ক্ষেত্রে তা সম্ভবও নয়।

এই বিসিকের পাশেই আবাসিক এলাকা। বিসিকের ভেতরের সড়ক দিয়েই আবাসিক এলাকার লোকজন চলাচল করে। ফলে এখানকার বর্জ্যরে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা। অনেক সময় কারখানার বর্জ্য আবাসিক এলাকার ভেতরে ঢুকে পড়ে বলেও অভিযোগ তাদের।

এ ব্যাপারে খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ভিউ ইন্ডাস্ট্রিজ (রসমেলা)-এর চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সুমন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিসিক থেকে আমাদের ইটিপি করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু জায়গা ও অর্থের অভাবে তা এখনও করতে পারিনি।

ইটিপি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন জানিয়ে সুমন বলেন, দূষণ ঠেকাতে আমরা একটা গর্ত করে তরল বর্জ্য সংরক্ষণ করি। তারপর তা নিজেরাই অন্যত্র ফেলে আসি।

বিসিক শিল্প নগরী শিল্প মালিক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, ইটিপি বাধ্যতামূলক হলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এক্ষেত্রে তদারকিরও অভাব রয়েছে। খাদ্যজাত শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য মারাত্মক দূষণ তৈরি জানান, এই বিসিক খাদ্যজাত শিল্পকারখানাই আছে ৩২টি।

মঈন উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন এখানকার বর্জ্যগুলো অপসারণ করে। তবে অপসারণের আগে তা পরিশোধন করা হয় না।