স্বপরিবারে আত্মগোপনে শাবির সেই শিক্ষক
ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রাইভেটকার চাপায় দু’জনের নিহতের পর স্বপরিবারে আত্মগোপনে চলে গেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলাম।
শনিবার দুপুরে শাবির প্রধান ফটকের সামনে ড. আরিফুল ইসলামের প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ হারান এক কলেজ শিক্ষকসহ দু’জন। আহত হন তিন জন। ড. আরিফুল নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে গাড়ি চালানো শিখছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। একপর্যায়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে তিনি পথচারীদের ধাক্কা দেন।
এতে নিহত হন লেখক ও কলেজ শিক্ষক শেখ আতাউর রহমান ও তাঁর মামা গিয়াস উদ্দিন। আহত হন আতাউর রহমানের মেয়ে রাহিবা আক্তারসহ তিনজন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়া এই মেয়েকে নিয়ে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় দেখাতে নিয়ে গিয়েছেন আতাউর রহমান।
এদিকে, দুর্ঘটনার পরপরই শাবি শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলাম স্বপরিবারে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিলেট জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেন এই প্রতিনিধিকে বলেন, দুর্ঘটনার পরথকেই শিক্ষক আরিফুল ইসলামের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। স্ত্রীসহ তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। আখতার জানান, এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, ড. আরিফুল ইসলাম ক্যাম্পাসের বাইরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর তিনি শাবি ক্যাম্পাসের ভেতরেই অবস্থান করছেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে একাধিকবার ড. আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে শিক্ষক হিসেবে ড. আরিফুল ইসলাম বেশ জনপ্রিয় ও ক্যাম্পাসে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন শাবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। শাবি শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী সুদীপ্ত দাশ এ দুর্ঘটনার পর তাঁর ফেসবুকে লিখেছেনঃ-
আরিফ স্যার ভালো মানুষ, সাদাসিধে মানুষ। শিক্ষক হিসেবে তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। কিন্তু স্যারের অর্বাচীনতা এবং অপরিণামদর্শীতার কারণে নিভে গেল দুটি প্রাণ। গাড়ি চালনায় শিক্ষানবিশ, সম্পূর্ণ আনাড়ি আরিফ স্যার কোন বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি ড্রাইভ করতে গেলেন তা আমাদের কারুরই বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কবে থেকে শৌখিন মধ্যবিত্তদের ড্রাইভিং প্র্যাকটিস জোন বানানো হয়েছে তার উত্তর একমাত্র প্রশাসনই দিতে পারবে।
বার বার দাবি ওঠা সত্বেও প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি চলাচল নিয়ে কোন সুর্নিদিষ্ট বিধিবিধান প্রণয়ন করেনি। যত নিয়ম কেবল রিকশা আর টমটমের জন্য প্রযোজ্য।এর আগে ক্যাম্পাসের এক কি:মি রাস্তায় বহিরাগত বখাটেদের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন কেমিক্যাল বিভাগের একজন শিক্ষক।ক্যাম্পাস অরক্ষিত এবং অনিরাপদ রাখার সম্পুর্ণ দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
আজকের ঘটনার পরে দেখলাম প্রকটর স্যার যথারীতি আরিফ স্যারকে ডিফেন্ড করে দায় অস্বীকারমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এ এক অদ্ভুত কমিউনিটি ফিলিংস বটে! দায় অস্বীকারের রাজনীতিও বলা যায়।
যে দুটো জীবন ঝরে গেল তার পেছনে যদি আরিফ স্যারের দায় থাকে তাহলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হোক। যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করা হোক স্যারের কাছ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি বিশ্ববিদ্যালয় অনুভুতিগ্রস্ত নই।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মারা গেলে ভাঙচুর করে সিলেট -সুনামগঞ্জ মহাসড়ক বন্ধ করে দেবো আর খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের আনাড়িপনায় দুটো প্রাণ ঝরে গেলেও চুপ করে থাকবো সেই পাবলিক আমি নই। এই অপরাধ যদি আমার বাপ করতো তখনো আমি একই কথা বলতাম।