বিশ্বনাথে মাদ্রাসার প্রিন্সিপালসহ মা-বোনকে পুলিশের নির্যাতন

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সংবাদ সম্মেলন

Biawanath (Sylhet) Photo=23.01.16বিশ্বনাথ প্রতিনিধি: সিলেটের বিশ্বনাথে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদনিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও মাসিক আল-ফারুক সম্পাদক মাওলানা শিব্বির আহমদসহ তাঁর মা, বোন, ও ভাই কে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে পুলিশি নির্যাতনে ক্ষুব্ধ উপজেলাবাসি। একটি পরিবারের উপর পুলিশ অমানবিক নির্যাতন করায় আজ ওই ঐতিহ্যবাহি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধংসের দারপ্রান্তে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক রয়েছেন দু:চিন্তায়। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে গতকাল শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে মাদ্রাসা কৃর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা শামছুল ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বিশ্বনাথে মাদরাসা ছাত্র সালমান হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও প্রিন্সিপালের মুক্তির দাবি ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান এবং অজ্ঞাত খুনিদের খুঁজে বের করে দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, সম্প্রতি মাদরাসার ছাত্র সালমান আহমদ অজ্ঞাত খুনীদের হাতে র্নিমমভাবে খুন হয়েছে। এই র্নিমম হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জাননো হয়। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাই। সালমান খুনের পর জামিয়ার পক্ষ থেকে প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ বাদি হয়ে থানায় মামলা করতে চাইলে প্রথমে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। পরে লিখিত অভিযোগ করা হয়। যার রিসিভ কপি তাদের হাতে রয়েছে। তাছাড়া মাদ্রাসাা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে না যেতে প্রশাসন কর্তৃক পরামর্শ দেয়া হয়। পুলিশ প্রশাসনের কথা মতো শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই স্থানীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত চলে আসছে। কিন্তুু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ এবং সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদকে প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মরহুম মুহতামিম আল্লামা শায়খ আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (রহ.) এর বয়োবৃদ্ধা সহধর্মীনী এবং তার মেয়েকে থানায় নিয়ে মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। এর আগে জামিয়ার শিক্ষা সচিব মুফতি ইব্রাহীম খলীল, সহকারী শিক্ষক মাওলানা ফখরুদ্দীন আহমদ ও ছাত্র মুশাহিদুল ইসলামকেও একই ভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে অমানবিক আচরণ ও চরমভাবে মানষিক নির্যাতন করা হয়। একই ভাবে জামিয়ার ছাত্র ও প্রিন্সিপালের ছোট ভাই মুহসিনউদ্দিন নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারের প্রায় নয় দিন পর আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেন।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, সন্তানতূল্য ছাত্র সালমান আহমদের খুনীদের গ্রেফতার পূর্বক সর্বোচ্ছ শাস্তি দাবি জানানো হয়। ওই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চাই। সঙ্গে সঙ্গে নিরপরাধ প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ এবং মাওলানা বশির আহমদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবী জানাচ্ছি। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিরীহ কোনো ছাত্র-শিক্ষক যেন অযথা হয়রানীর শিকার না হন, এজন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদকে থানায় নিয়ে তার সাথে অশ্লালিন আচরণ ও নির্যাতন করায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, থানা পুলিশ যাকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, সবাইকে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করেছে। তাদের একথা বলানোর জন্য খুব নির্যাতন করেছে। তারা যেনো এই খুনের ব্যাপারে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও মাদ্রাসার কোনো শিক্ষকের নাম বলে। প্রশাসনের এহেন সন্দেহজনক আচরণে আশংকা হচ্ছেÑমাদরাসার ছাত্র সালমান হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রকৃত খুনীদের রক্ষা করতেই এবং এলাকাবাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিতেই মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সালমান হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কোনো বিশেষ মহল যেন ফায়দা হাসিল করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
আগামী ২৮ জানুয়ারী ২০১৬ইং অত্র জামিয়ার ৫৭তম বার্ষিক ইসলামী মহা সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে অবিলম্বে মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদের মুক্তি দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য আরও বলেন, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ইসলামী বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া বিশ্বনাথ মাদরাসার ৫৭তম বৎসরে উপনিত হয়েছে। জামিয়ার ইতিহাসে এমন কোনো র্দুঘটনা কখনো ঘটেনি। গত ৩০ ডিসেম্বর সকালে জামিয়া মাদানিয়ার ফজিলত ১ম বর্ষের ছাত্র সালমান আহমদ এর লাশ উপজেলার নতুনবাজার এলাকার তফজ্জুল আলী কমপ্লেক্সের মধ্যেবর্তী সড়কের পাশ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে। এঘটনায় মাদানিয়া মাদরাসার পক্ষ থেকে বিশ্বনাথ থানায় সালমান হত্যার বিচার চেয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয় এবং তাৎক্ষণিক মাদরাসার পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে সালমানের বাড়িতে গিয়ে তাকে দাফন ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সান্তনা দিয়ে আসি। প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে এতোদিন কোনো রকম আন্দোলন-কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ জনক হলেও সত্য, সালমানের মায়ের মামলায় প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও মুহসিনউদ্দিন নাঈমকে জড়িয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ন মিথ্যা, কল্পনা প্রসূত ও অনুমান নির্ভর। আর এই মিথ্যা, অনুমান নির্ভর অভিযোগের ভিত্তিতেই মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল, শিক্ষক এবং ছাত্রকে আসামি করা ও গ্রেফতার করা খুবই দুঃখজনক। সালমান সন্তানের মতো, কোনো প্রিন্সিপাল বা শিক্ষক তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্রকে কখনও খুন করতে পারেন না। কিন্তু আজ মিথ্যার আশ্রয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদকে জড়ানো হয়েছে। তারা ষড়যন্ত্রের শিকার। তাই অবিলম্বে আমাদের শিক্ষকদ্বয়ের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় যে কোনো পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনকেই এর দায়ভার নিতে হবে।
দেশের প্রাচীনতম ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, জামিয়া মাদানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম হযরত মাওলানা শায়খ আশরাফ আলী বিশ্বনাথী (রহ.) ২০০৫ সনে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের তাঁর সন্তান মাওলানা শিব্বির আহমদ জামিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পিতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে তিনি আজ দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মাসিক আল-ফারুক সম্পাদক ও জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ কোন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নন, কোনদিনও ছিলেন না, এখনও নয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও জামিয়ার শিক্ষক মাওলানা বশির আহমদকে গ্রেফতার করে এবং নিরীহ ছাত্র-শিক্ষকদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করে ঐতিহ্যবাহী এ দ্বীনি শিক্ষাগারকে ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে করে জামিয়ার প্রাশাসনিক বিভাগসহ সবকটি বিভাগ, বিশেষ করে সকল স্তরের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার চরম ব্যাঘাত ঘটছে।
চাই আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র সালমান খুনের রহস্য উদ্ঘাটন হউক। বিষয়টি প্রতিকারের মাধ্যমে সরকারও পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বির আহমদ ও তার পবিরার সম্পর্কে যে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগ সালমানের মা কুতুবি বেগম এনেছেন তার সঠিক তদন্ত করার জন্য সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি কামনা করছি। সালমান হত্যার ঘটনায় মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল পরিবারকে হয়রানি না করার জন্যও পুলিশের উর্ধবতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মাওলানা ক্বামরুল ইসলাম ছমির, সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আব্দুল করীম, মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা ঈজাদুর রহমান, মাওলানা সালিম আহমদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম, জমিয়ত নেতা মাওলানা মুখতার হোসাইন, মাসিক আল ফারুক সহকারী সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মুকিত, মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মন্নান, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা হাফিজ শাহেদ আহমদ, মাওলানা বিলাল আহমদ, মাওলানা তাফাজ্জুল হোসাইন মুক্তাগাছী, মাওলানা আব্দুল মতিন, মাওলানা হাসান বিন-ফাহিম, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল জামিল, হাফিজ মুজাহিদুল ইসলাম, মাওলানা হাফিজ ফয়জুর রহমান, হাফিজ খসরুজ্জামান, শহিদুর রহমান প্রমুখ।