বাড়িতে ‘যৌনপল্লী’, ধরা মানবাধিকার কর্মকর্তা
ডেস্ক রিপোর্টঃ মানিকগঞ্জে একটি মানবাধিকার সংগঠনের জেলা সভাপতিকে নিজের বাড়িতে যৌনপল্লী গড়ে তোলার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেন বাবু নামের ওই ব্যক্তি আইন সহায়তা কেন্দ্রের (আসক) জেলা সভাপতি। সোমবার রাতে একজন যৌনকর্মীসহ পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বেশ কয়েকজন যৌনকর্মী ও খদ্দের এ সময় পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার এসআই আশুতোষ ভৌমিক জানান, আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেনের বাড়ি মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজারসংলগ্ন নারাঙ্গাইতে। ওই বাড়িতেই তিনি মিনি যৌনপল্লী গড়ে তুলে ব্যবসা করছিলেন। পরিচয় আড়াল করতে বাড়ির প্রবেশমুখে লাগিয়েছেন আসকের বিশাল সাইনবোর্ড। টিনশেড ওই বাড়িতে রয়েছে ৫৫টি খুপরি ঘর। খবর পেয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় দৌড়াদৌড়ি করে বেশ কয়েকটি ঘর থেকে খদ্দের ও মেয়েরা পালিয়ে যায়। আটক করা হয় এক যৌনকর্মীসহ বাড়ির মালিক ফেরদৌস বাবুকে।
পুলিশের অভিযান চলার খবর পেয়ে এ প্রতিবেদক সেখানে গিয়ে দেখতে পান বাড়ির প্রধান গেটে আসকের সাইনবোর্ড। পাশের দেয়ালে আরেকটি সাইবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নিরিবিলি পরিবেশে মহিলা মেস হিসেবে রুম ভাড়া দেওয়া হয়।’ ওই বাড়ির কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, এখানে যারা থাকছে, তাদের বেশির ভাগই রিকশাচালক, শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায়, এ বাড়িতে অনৈতিক কর্মকাণ্ড হয় জেনেও তারা বাধ্য হয়ে বসবাস করছে। কিছু বললেই বাড়ির মালিক তাদের ভয়ভীতি দেখান। বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে আসবাবপত্র কেড়ে নেওয়া হয়। যে কারণে ভয়ে তারা বাড়ি ছাড়তেও পারে না।আটক যৌনকর্মী জানান, বাইরে থেকে আসা খদ্দের দিয়ে ওই বাড়ির ২০-২৫টি ঘরে অনৈতিক কাজ চলে। এ ছাড়া এখানকার যৌনকর্মীরা ভাড়ায় বাইরে যায়। বাড়ির মালিক বাবু ও সোবহান নামের তাঁর এক আত্মীয় সবকিছু তদারক করেন। তাঁরা প্রতিটি যৌনকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন পান। তিনি আরো জানান, বাবুর নেতৃত্বেই এ বাড়িতে মদ, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশার আসর বসানোর পাশাপাশি এসবের ব্যবসা চলে।
এলাকাবাসী জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই বাবু এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। প্রতিবাদ করলেই তাঁর ভাড়াটে মেয়েদের দিয়ে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার সংগঠনের নামে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন গ্রুপ সক্রিয়। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নামধারী ব্যক্তি এ সংগঠনের পরিচয়ে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার লোকজনকে আইনি সহায়তা দেওয়ার নামে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে। মানুষকে জিম্মি করে তারা মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, জমি নিয়ে বিরোধসহ বিভিন্ন মামলার বাদী-বিবাদীকে আসকের নামে নোটিশ দিয়ে তিনি ও তাঁর লোকজন চাঁদা আদায় করেন। এমনকি বিচারের নামে মারধরের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ধরনের কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। সত্যতা পেলে বাবুর বিরুদ্ধে মামলা হবে।
তবে মানিকগঞ্জ সদর থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেন বাবু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে আসকের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক নিউটনের মোবাইলে ফোন দিলে তিনি অসুস্থ জানিয়ে তাঁর সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তিকে মোবাইলটি ধরিয়ে দেন। এ সময় তিনি নিজেকে একটি বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকের সম্পাদক বলে উল্লেখ করেন।
তাঁর সঙ্গে থাকা সংগঠনটির পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ততার অভিযোগে আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেন বাবুকে এক বছর আগে আসক থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে মানিকগঞ্জে আসকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আবদুস সোবহান মৃধা।
সূত্র মতে, আবদুস সোবহান মৃধা আগে কৃষি ব্যাংকের গাড়ি চালাতেন অর্থাত্ স্টাফ আনা-নেওয়ার কাজ করতেন। বর্তমানে মাদকাসক্ত এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অন্যায়-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
বিষয়টি জানিয়ে এমন ব্যক্তিকে সংগঠনটির জেলা সভাপতি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ যদি তার ব্যক্তিগত তথ্য গোপন করে জেলা সভাপতি হওয়ার জন্য আবেদন করে থাকে, তবে আমাদের তো তা জানার কথা নয়।’ আর আসকের নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো অন্যায় করে থাকলে এ-সংক্রান্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে আসকের আরেক পরিচালক তসলিম মিয়া জানান, মানিকগঞ্জে আবু সাবাহ ফেরদৌস হোসেন বাবুই আসকের সভাপতি। মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তিনি শুনেছেন।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বলেন, গতকালের ঘটনাটি তিনি জানেন না। তবে মানবাধিকার সংগঠনের নামে কেউ কোথাও কোনো অন্যায় করে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।