অরক্ষিত বিসিক, উপেক্ষিত নিরাপত্তা

14833ডেস্ক রিপোর্টঃ ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সিলেটের খাদিমস্থ বিসিক শিল্প নগরী। ২৭.৫ একরের এই শিল্প নগরীতে এখন পর্যন্ত নির্মিত হয়নি সীমানা দেওয়াল। নেই ফটকও। ফলে পুরো অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বিসিক। বিসিকের কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই। আভ্যন্তরীণ সড়কে নেই বাতি। প্রায় ২৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও আজ পর্যন্ত উপেক্ষিত থেকে গেছে এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় খাদিমস্থ বিসিকের ভেতরেই খুন হন দুই শ্রমিক। খুন হওয়া দু’জনই ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বনফুলের কর্মচারী। বিসিকের ভেতরে ঢুকে দুই শ্রমিকদের হত্যা করে নির্বিঘ্নেই পালিয়ে যায় ঘাতকরা। রবিবার পর্যন্ত খুনিদের সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
মোহম্মদ রাজু ও তাপু মিয়া নামের এই দুই শ্রমিককে খুন করা ও খুনের পর ঘাতকরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে বিসিক শিল্প নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। পুরো শিল্প নগরীটি অনেকটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানকার শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা।
খাদিমস্থ বিসিক শিল্প নগরীর ১১৯ টি প্লটে ৭৪ টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক। এদের বেশিরভাগই বিসিকের ভেতরেই থাকেন। বেশকিছু শিল্প কারখানা ও বিশাল শ্রমিকরা থাকলেও এই শিল্প নগরীর নিরাপত্তার বিষয়টি থেকে গেছে উপেক্ষিত।
বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তারা জানান, খাদিমস্থ বিসিকের সীমানা দেওয়াল নির্মাণ, নৈশপ্রহরি নিয়োগ ও সড়কবাতি লাগানোসহ কিছু উন্নয়নমূলক কাজের একটি প্রস্তাবনা গত নভেম্বরে বিসিকের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
তবে এই প্রকল্প এখনো পাশ হয়নি বলে জানান খাদিম বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা সৈয়দ বখতিয়ার উদ্দিন আহমদ। বিসিক শিল্প নগরীর নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। তাই উন্নয়ন বা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। আমরা শিল্প মালিকদের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার অনুরোধ করেছি।
তিনি বলেন, খুনের ঘটনার পর আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এই এলাকায় টহল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।
তবে নিরাপত্তা নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষের এই উদাসীনতা ও কর্মকর্তাদের দায়সারা বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এখানকার শিল্প মালিকরা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে একাধিকার বিসিক কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান তারা।
খাদিমস্থ বিসিক শিল্প নগরী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুমায়ুন কবির সিদ্দিকী বলেন, আমরা কোনো দাবি জানালেই এখানকার কর্মকর্তারা বলেন বাজেট নেই। অথচ আমাদের কাছ থেকে প্রতিবছর সার্ভিস চার্জ নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সার্ভিস দেওয়া হয় না। নিরাপত্তার ব্যাপারে বিসিক কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন।
রুমায়ুন কবির বলেন, আমরা এখন বিসিক এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপনের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু বিসিক কর্তৃপক্ষ এই দাবিরও বিরোধিতা করছেন।
শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আইনুল মিয়া বলেন, কোনো প্রস্তাব দিলেই বিসিক কর্মকর্তারা বলেন, আমরা নিজেরা করে নিতে। এমনকি সীমানা দেওয়ালও নাকি আমাদের করতে হবে। নূন্যতম কোনো সুবিধা না পেলে আমরা বিসিকে আসলাম কেনো?
আইনুল মিয়া বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় নিরাপত্তার জোরদার করতে বিসিক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। ফটক নির্মাণ, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ, সড়ক বাতি লাগানোর দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এসবের কোনটাই বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, শুক্রবার দুর্বৃত্তদের হাতে রাজু ও তাপু নামের দুই শ্রমিক খুন হওয়ার পর শনিবার সকালে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে বিসিকের সকল কারখানার শ্রকিমরা। এসময় শ্রমিকরা বিসিকের ভেতরে শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এই দাবিতে সিলেট-তামাবিল সড়কও অবরোধ করে শ্রমিকরা।
আশরাফ আলী নামের এক শ্রমিক জানান, বিসিকের পক্ষ থেকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচী দেওয়া হবে। নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের পাশাপাশি পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনেরও দাবি জানান তিনি।
বনফুল কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, নিহত দুই শ্রমিকের জানাযা শনিবার তাদের গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। হামলায় আহত অপর শ্রমিক রাসেল আহমদ এখনো সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সিলেট শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানান, এই ঘটনায় আটককৃত পংকি, রকি ও জামালকে আজ (রোববার) আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। সোমবার এই রিমান্ডের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।