সিলেটের রাজন হত্যার রেশ না কাটতেই গোলাপগঞ্জে শিশুকে নির্যাতন করে হত্যা
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটে বর্বরোচিত রাজন হত্যাকান্ডের পর এবার শিশু শাকিল হত্যার ঘটনায় কেঁপে উঠলো সিলেটের গোলাপগঞ্জ। শিশু শাকিলকে তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী রাতভর নির্যাতনের এক পর্যায়ে হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেয়। সেখানে শিশুটির লাশ শেয়াল-কুকুর খেয়ে হাড়গুলো রেখে যায়। গত ৩০ ডিসেম্বর বুধবার গোলাপগঞ্জের নোয়াই দক্ষিণভাগ কান্দিপাড়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে ২ জানুয়ারী শনিবার পুলিশ শিশুটির হাড়গুলো উদ্ধার ময়না তদন্তের জন্যে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ ঘাতক সায়েদ আলীসহ তিনজনকে আটক করেছে। আটক সায়দ আলী (২৮), উপজেলাধীন নেয়াই দক্ষিণভাগ কান্দিপাড়া গ্রামের মৃত মৌর আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় অন্যান্য আটককৃতরা হলো, সায়েদের তার বড় ভাই তেরা মিয়া ও বোনের জামাই রুসম আলী। তবে পুলিশ জানিয়েছে তেরা ও রুসমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। শিশু শাকিলকে পারিবারিক আক্রোশের জের ধরে হত্যা করা হয়েছে বলে আটককৃতরা জানিয়েছেন। শিশু শাকিলকে নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনা নিয়ে পুরো গোলাপগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী ও বিভিন্ন রাজনেতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঘাতক সায়াদ ও তার সহযোগীদের ফাঁসির সর দাবী জানিয়েছেন।
মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, অভিযোগকারী বেদেনা বেগমের ছোট ভাই ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নোয়াই দক্ষিণভাগ কান্দিপাড়া গ্রামের মৃত মৌর আলীর ছেলে সায়েদ আলীসহ তার কয়েকজন সহযোগী গত ৩০ ডিসেম্বর বুধবার রাত ৯টার দিকে বেদেনার ভাইয়ের স্ত্রী পারভিনের পূর্বের স্বামীর ঘরের শিশু সন্তান শাকিলকে বর্তমান স্বামী সায়েদ আলী বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যায়। সে শাকিলকে ঢাকা দক্ষিণ মাদারখা পাড়া এডভোকেট সুরুজ আলীর পাহাড়ী টিলার মধ্যে রাতভর নির্যাতন করে গাছের সাথে হাত-মুখ বেঁধে ফেলে। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শাকিলের শরীরের বিভিন্ন অংশ মুখমন্ডল, পেট, পিছনের দিকে আঘাতে আঘাতে শাকিলকে হত্যা করে সায়াদ ও তার সহযোগীরা। পরে তারা শাকিলের লাশ জঙ্গলে ফেলে চলে যায়।
জঙ্গলে দুদিন ধরে ফেলে থাকা মৃত শিশুটির লাশ শিয়াল ও বিভিন্ন প্রাণী প্রায় ৭০ ভাগ খেয়ে ফেলে। ২ জানুয়ারী শনিবার স্থানীয় লোকজন জঙ্গলে হাড়-গুড় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে কঙ্কালগুলো উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। এদিকে তিন ধরে নিখোঁজ শাকিলের মা এমন সংবাদ পেয়ে খবর পেয়ে শাকিলের মা ও তার পরিবারের লোকজন থানায় গিয়ে শাকিলের শার্ট প্যান্ট দেখে সনাক্ত করেন। এরপর বেরিয়ে আসে শাকিল হত্যার আসল ঘটনা ও রহস্য।
এরপর তদন্তে নামেন গোলাপগঞ্জ থানার এস আই ফরিদ। তিনি গত রোববার ভোর ৪টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিলেট জেলার ফেঞ্ছগঞ্জ থানার শাহ মালুমের মাজার থেকে সয়াদকে গ্রেফতার করেন এসআই ফরিদ। অপর দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার সায়েদের বোনের জামাই রুসম আলী ও তার বড় ভাই তেরা মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি একেএম ফজলুল হক শিবলী। এ ঘটনা নিয়ে উপজেলা ও পৌর সদরে তোলপাড় চলছে।