ভারতীয় গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের হুবহু মিল পাচ্ছে পুলিশ

j16rMtEFBygyYS_originalডেস্ক রিপোর্টঃ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) তৎপরতা সম্পর্কে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের আগেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিল ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-এনআইএ। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে এনআইএর এক এসপির নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি টিম ঢাকায় র‌্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। এসময় তারা ডিবি ও র‌্যাবকে বাংলাদেশে জেএমবির তৎপরতা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দেয়।

রিপোর্টে বলা হয়, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের মতো কোনো ঘটনা বাংলাদেশে জেএমবিরা ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যে কোনো জনাকীর্ণস্থানে ভয়ঙ্কর ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। এজন্য তাদের হাতে প্রচুর বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এরা পশ্চিমবঙ্গে আর্থিকভাবে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি বলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।

eFiJZIHPJYbezATTEFMvT2_originalআর সেই রিপোর্টে থাকা বিভিন্ন তথ্যের হুবহুই মিল পাচ্ছে বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত কয়েকজন জেএমবি নেতা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্ত এলাকায়। তারা সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে ভারতের মোবাইল ফোনের সিমকার্ডও ব্যবহার করে। ভারতের জঙ্গিদের (সন্ত্রাসী) সঙ্গে কথা বলে। আবার ভারতের সীমান্ত থেকে তাদের দেশের জঙ্গিরা বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ব্যবহার করে কথা বলছে। ফলে প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।

আর ওই রিপোর্টের বেশ কয়েকটি প্রমাণও মিলেছে সম্প্রতি। গত শুক্রবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সারাদেশে যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠান-আয়োজন চলছিল, ঠিক তখনই রাজশাহীর বাগমারার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। আর এতে হামলাকারী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এছাড়া গুরুতর আহত হয় আরো তিন মুসল্লি। জুমার নামাজের সময় উপজেলার সৈয়দপুর মচমৈল চকপাড়া কাদিয়ানি জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার এ ঘটনা ঘটে।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দ ডহচি গ্রামের ইসকন মন্দিরে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এ সময় হামলাকারীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ও দুটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধও হয়। তারও কয়েকদিন আগে অর্থাৎ গত ৫ ডিসেম্বর দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলার কান্তজিউ মন্দিরে রাস মেলায় বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। গত ২৬ নভেম্বর মাগরিবের নামাজ শেষে বগুড়ার শিবগঞ্জের হরিপুর-চককানু গ্রামে অবস্থিত শিয়া মসজিদে বন্দুকধারীদের গুলিতে মুয়াজ্জিন নিহত ও ইমামসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন।

এদিকে দুইদিন আগে রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন মিরপুর-১ নম্বরের একটি বাসা থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই সঙ্গে সেখান থেকে বিশেষ হ্যান্ডগ্রেনেডসহ বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। যেটি ছিল গ্রেনেড তৈরির কারখানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই কারখানায় তৈরি করা বোমা দিয়ে বিদেশিসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল জেএমবির জঙ্গিদের। ভারতীয় গোয়েন্‌দা সংস্থার প্রতিবেদনেও মিরপুর এলাকায় জেএমবির আস্তানার কথা উল্লেখ ছিল।

এ বিষয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, পশ্চিমবঙ্গের খাগড়গড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ যে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছে তাতেও মিরপুর ও যাত্রাবাড়ীতে দুই আস্তানার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে মিরপুরে জেএমবির যে আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে সেটিই ওই আস্তানা কি না সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত তথ্য পায়নি পুলিশ। এ রকম আরো একাধিক জঙ্গি আস্তানা ঢাকা ও ঢাকার উপকণ্ঠ সাভার, নারায়াণগঞ্জ, কেরনীগঞ্জ এবং গাজীপুর কেন্দ্রিক রয়েছে বলে কিছু তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

মিরপুরের জেএমবির এ আস্তানা সম্পর্কে ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মিরপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে ১৮টি গ্রেনেড ও বোমার পাশাপাপাশি গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম ও গ্রেনেড তৈরির বেশকিছু নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) পাওয়া গেছে। ওই ম্যানুয়াল অনুযায়ী জেএমবির অনেক কর্মকাণ্ড চলতো। ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল জেএমবি। জঙ্গিদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা।’

ডিবির বোমা অপসারণ ও নিষ্ক্রয়করণ দলের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই জঙ্গি আস্তানায় গত চার মাসে ১০ জনকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, মিরপুরের ওই জঙ্গি আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির পাশাপাশি সেটি তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হতো। ওই আস্তানা থেকেই পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলাসহ চলমান জঙ্গি কর্মকাণ্ডের গ্রেনেড ও বোমা সরবরাহ করা হচ্ছিল। এছাড়া ইতোপূর্বে উদ্ধার হওয়া গ্রেনেডের সঙ্গেও মিরপুরের জেএমবির আস্তানায় পাওয়া গ্রেনেডের মিল আছে।’

অবশ্য পুলিশের দাবি, এনআইএর দেয়া প্রতিবেদনের আগেই পুলিশ ও র‌্যাব জেএমবির বর্তমান কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামিনে মুক্তি পাওয়া জেএমবির নেতাকর্মীদের নজরদারীতে রাখা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার ব্যাপারে একটি নির্দেশনাও দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে কিছু কিছু স্থানে জেএমবির হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।