১৪ দিন অপহরণের সময় কি ঘটেছিল? সে ঘটনা জানাল সোহাগ

shuhagডেস্ক রিপোর্টঃ ‘বাড়ি থেকে গাড়িতে তোলার পর আমার হাত-পা ও চোখ কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা একটানা বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর গাড়িটি একটি জায়গায় গিয়ে থামে। এরপর আমাকে একটি বাসার ভেতরে নিয়ে গিয়ে টয়লেটের ভেতরে আটকে রাখা হয়। হাত ও পা বেঁধেই আটকে রাখা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে অল্প খাবারও দিত তারা।’
কথাগুলো বলছিলেন অপহরণের ১৪ দিন পর চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে উদ্ধার হওয়া রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সাইফুজ্জামান সোহাগ।
সোহাগ আরো বলেন, ‘প্রথম দিন গাড়ির মধ্যেই আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা একটানা বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর আর তেমন নির্যাতন করা হয়নি।’
রাজশাহী থেকে অপহরণের ১৪ দিন পর চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে উদ্ধার হওয়া সোহাগকে আজ বুধবার সাড়ে ৮টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে নগরীর রাজপাড়া থানায় নেওয়া হয়। অপহরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহাগকে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোহাগকে রাজশাহীতে আনার পর সরাসরি তাঁকে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসায় ছিলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সাখাওয়াত হোসেন রানা। তিনি জানান, সোহাগ শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। সোহাগকে হাসপাতালে আনার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন সোহাগের মা শিরিন জামান ও সোহাগের স্ত্রী ফারজানা রহমান।
এর আগে দুপুরে সোহাগের বাবা আক্কাস উজ্জামান মোবাইল ফোনে জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে তাঁর ছেলে সোহাগ ফোন করে জানায় সে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা তাঁর চোখ বেঁধে মিরসরাইয়ে ফেলে গেছে। খবর পেয়ে তিনি ঢাকায় অবস্থানরত তার শ্যালককে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে বলেন। দুপুরে সোহাগকে মিরসরাই থেকে নিয়ে তাঁরা ঢাকার ধানমণ্ডিতে পৌঁছান।
আক্কাস উজ্জামান আরো জানান, দুপুর দেড়টার দিকে ছেলেকে নিয়ে ঢাকা থেকে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। তাঁর ছেলে ভালো আছে, তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলে জানান তিনি। অপহরণের পর থেকে এতদিন তাঁকে চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। তবে কারা অপহরণ করেছিল, সে বিষয়ে সে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
সোহাগকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসার সময় তার সঙ্গে ছিলেন সোহাগের বাবা আক্কাস উজ্জামান, শ্বশুর শেখ রেজাউর রহমান দুলালসহ আত্মীয়স্বজনরা।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমান জানান, অপহরণের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহাগকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
গত ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে র‍্যাবের পোশাকধারী ছয়-সাতজন দুর্বৃত্ত রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া পশ্চিমপাড়া এলাকায় সোহাগের বাড়িতে যায়। র‍্যাবের পোশাক পরা দেখে বাড়ির লোকজন দরজা খুলে দিলে তারা সোহাগের ঘরে ঢুকে ল্যাপটপ ও মোবাইলের মেমোরি কার্ডসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চায়। সেগুলো নেওয়ার পর তারা সোহাগকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে সোহাগের বাবা ও শ্বশুর র‍্যাব রাজশাহীর সদর দপ্তর ও বোয়ালিয়া থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে নেয়নি। এরপর ছেলের সন্ধান চেয়ে ১১ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করেন সোহাগের বাবা আক্কাসউজ্জামান। ওই ঘটনায় ১৩ ডিসেম্বর রাতে রাজপাড়া থানায় সোহাগের বাবা আক্কাসউজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় র‍্যাব ও ডিবির অজ্ঞাতপরিচয় সাত সদস্যকে আসামি করা হয়।
এরপর পুলিশ অপহরণের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে দুজনকে আটক করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে গত সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এঁরা হলেন ঢাকার দক্ষিণখান থানার ফাইজাবাদ এলাকার আবদুল আউয়াল খানের ছেলে ও রুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ইঞ্জিনিয়ার ফারজাদুল ইসলাম মিরন (২৮) এবং রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকার শওকত আলীর ছেলে ও রুয়েটের সিভিল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইসফাক ইয়াসিফ ইপু (২১)।