পরকীয়ার জেরে বিউটিশিয়ান মুন্নিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে

সিলেট জেলা প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

Press Clubডেস্ক রিপোর্টঃ মুন্নীর স্বামী লিটনের সাথে ভাবি রত্না ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কথা বলতো, রত্নার প্ররোচনায় এবং তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে লিটন ক্রমশঃ বেপরোয়া হয়ে উঠে। বিয়ের কিছুদিন পর লিটন মুন্নির ৩ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। স্বর্ণ বিক্রির টাকা দিয়ে লিটন তার অপকর্মের সাথী রত্নাকে বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে নিয়ে যেত আর সেই সাথে দিত রকমারী উপঢৌকন। স্বর্ণ বিক্রির টাকা শেষ হয়ে গেলে লিটন স্ত্রী মুন্নীকে প্রতিদিন টাকা দেয়ার জন্য জোর-জবরদস্তি করতো। টাকা না দিলে মুন্নীকে নানাভাবে নাজেহাল বা টানা-হেঁচড়া করতো। মাতাল অবস্থায় বাড়ি এসে মুন্নির সাথে অশালীন আচরণ এমনকি মারপিটও করতো। অশ্রাব্য গালিগালাজ করে পিত্রালয় থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলত। গত ২৫ জুন বৃহস্পতিবার রাতে লিটন এবং তার পরিবারের লোকজন মুন্নীকে বাপের বাড়ী থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দেয়ার জন্য চাপাচাপি করতে থাকে। এ সময় মুন্নী প্রায় ৭ মাসের গর্ভবতী। সে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্বামীর পরিবারের সবাই মিলে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের অমানবিক ও পৈচাশিক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মুন্নী পিত্রালয়ে চলে যায়। স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে চায়নি। শেষপর্যন্ত অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং নিকটাত্মীয়রা তাকে স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। সকলের মুখের দিকে চেয়ে একান্ত অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও শেষপর্যন্ত আতঙ্কিত মুন্নী স্বামীর সংসারে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই যাওয়াই যে তার শেষ যাওয়া হবে, তা কে জানতো? মুন্নি পিতার বাড়ি থেকে সুস্থ সুন্দর ভাবে স্বামীর বাড়িতে গেলেও ফিরলো লাশ হয়ে। স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে মুন্নিকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে।
বুধবার সিলেট জেলা প্রেসকাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে উপরোক্ত এ অভিযোগ করেন নিহত মুন্নির বড় বোন সিলেটের সদর দক্ষিণ তথা দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের ধরাধরপুর গ্রামের স্বর্গীয় ব্রজেন্দ্র দেবনাথের মেয়ে জয়ন্তী বালা দেবী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, তারা ৩ ভাই ৩ বোন। জয়ন্তী বালা দেবী ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থ। ছোট বোন মুন্নী দেবনাথ শিল্পী লেখাপড়া শেষ করে যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিউটিশিয়ান পেশায় নিয়োজিত হয়। সে দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজের সন্নিকটে গোল্ডেন মাকের্টে ‘জি হারবাল বিউটি পার্লার’ নামে মহিলা ও শিশুদের একটি রূপচর্চা প্রতিষ্ঠান চালু করে। এই সুবাদে একপর্যায়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের গোজারকান্দি গ্রাম নিবাসী ক্ষিরোদ চন্দ্র নাথ ও শেফালী রাণী দেবনাথের ছেলে লিটন চন্দ্র দেবনাথের সাথে মুন্নীর পরিচয় হয়। পরিচয়কে পরিণয়ে রূপান্তর করতে দুই পরিবার সম্মত হয়ে সামাজিকভাবে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে বিগত ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রমতে তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের পর কিছুদিন তাদের দাম্পত্য জীবন সুখ ও শান্তিতে চলছিল। কিন্তু লিটন একজন মাদকসেবী তা কেউ জানতো না। মদ-গাঁজা সেবন ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। স্ত্রীর কাছ থেকে প্রায়ই জোরপূর্বক টাকা-পয়সা নিতে শুরু করে সে। মুন্নির সহোদর মেঝো ভাই অভিনয় দেবনাথ মিন্টুর স্ত্রী ৪ সন্তানের জননী রত্না রাণী দেবনাথ ননদ মুন্নীর স্বামী লিটনের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে,
রত্না সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার পাগলা শংকমর্দন গ্রাম নিবাসী রাজকুমার দেবনাথের মেয়ে। রত্না অতিশয় চতুর এবং অসৎ, নষ্টা ও ভ্রষ্টা চরিত্রের মহিলা। লিটনের সাথে রত্নার পরকীয়া সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে গত ৫ ডিসেম্বর শনিবার মুন্নির পিত্রালয়ের পাশের বাড়িতে একটি গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুন্নীর স্বামী লিটন ভাবী রত্নার ঘরে আসে। তাকে অত্যন্ত অস্থির ও বিহ্বল দেখাচ্ছিল। বার বার পানি পান করতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত প্রেয়সী রত্নার সাথে শলাপরামর্শ করে রাত অনুমান ২টার দিকে লিটন মুন্নির মায়ের ঘরে এসে বলে, ‘তোমাদের বোন মুন্নী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি এইমাত্র মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি।’ খবর পেয়ে মুন্নির বোনসহ আত্মীয়-স্বজন সবাই মিলে লিটনদের বাড়ীতে গিয়ে দেখতে পান গলায় একটি বিকট দাগ নিয়ে মুন্নীর নিথর দেহ একটি খাটের উপর শুয়ানো। কিন্তু সাধারণতঃ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার যে সব ‘আলামত’ থাকে, মুন্নীর বেলায় তার কোনটিই চোখে পড়ে না। পাশাপাশি মুন্নীর শ্বশুড়বাড়ির সকলের অতিমাত্রার ‘স্বাভাবিক’ আচার-আচরণ মুন্নির পরিবারের সদস্যদের আরো সন্দিহান করে তুলে। ঘটনাটি রহস্যজনক, পরদিন সকাল ১১টায় এসএমপি’র মোগলাবাজার থানার এসআই কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করে এবং ফাঁসির আলামত হিসেবে মাত্র ২ হাত অর্থাৎ ৩ ফুট লম্বা একটি পাটের রশি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করে। মাত্র ২ হাত রশি দিয়ে একজন মানুষ কিভাবে ফাঁসিতে ঝুলতে পারে, তা কারো বোধগম্য নয়। মুন্নীর শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের ‘স্বাভাবিক’ এবং পুলিশের ‘রহস্যজনক’ আচরণ উল্লেখযোগ্য। মুন্নীকে ওর শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের যোগসাজসে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় এসআই কামরুজ্জামান লাশ ময়না তদন্তে পাঠাবার কথা বলে একটি সাদা কাগজের নীচে মুন্নির বোন ভাইসহ অন্য সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে যান। স্বাক্ষর দেওয়ার পরে তারা জানতে পারেন, সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেয়াই নাকি মুন্নীর হত্যার বিচারের সব পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসআই কামরুজ্জামান স্বাক্ষর দেয়া উক্ত সাদা কাগজে থানায় অপমৃত্যুর মামলা নথিভূক্ত করেছেন। খবর পেয়ে মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি খায়রুল ফজল অজ্ঞাত কারণে মুন্নির স্বজনদের মামলাটি গ্রহণ করেনি। মুন্নীর ঘাতক স্বামী লিটন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের যোগসাজশে এবং অর্থের বিনিময়ে থানা পুলিশকে বশীভূত করেছে। থানায় মামলা দায়েরে ব্যর্থ হয়ে মুন্নির বোন জয়ন্তী বালা দেবী গত ১০ ডিসেম্বর পুলিশ কমিশনারের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ময়না তদন্তের পর মুন্নীর মরদেহ পিত্রালয়ে সমাহিত করা হয়েছে। মুন্নীর ময়না তদন্ত রিপোর্টও নিজেদের পক্ষে নিয়ে যেতে ঘাতক লিটনরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশংকা করছেন জয়ন্তী বালা দেবীসহ অন্যান্যরা । মুন্নী দেবনাথ শিল্পী হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ কমিশনার বরাবরে দেয়া অভিযোগটি এজাহাররূপে গণ্য করার দাবি জানানো পাশাপাশি স্ত্রী হত্যাকারী ঘাতক স্বামী লিটন দেবনাথ, শ্বশুড় ক্ষিরোদ দেবনাথ, শাশুড়ি শেফালী দেবনাথ, ননদ জ্যোতি দেবনাথ, মিথিলা দেবনাথ, তৃপ্তি দেবনাথ এবং ভাবী রত্না দেবনাথসহ মুন্নী হত্যায় জড়িত সকলকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে এবং লিটন ও রত্নার মোবাইল কললিস্ট সংগ্রহের মাধ্যমে হত্যা রহস্য উদঘাটনের জোর দাবি জানানো হয়, এ ছাড়া প্রয়োজনে সমাহিত মুন্নীর মরদেহ সমাধিস্থল থেকে পুনরায় উত্তোলন করে উচ্চপর্যায়ের চিকিৎসক দল দিয়ে পুনঃময়না তদন্তের দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এলাকার মুরব্বি এ্যাডভোকেট জাকির হোসেন জিতু, হাজী মোঃ খছরু মিয়া, আব্দুল বাছিত সোহেল, মুন্নীর মা সুশীলা বালা দেবী, কাকা শৈলেন্দ্র দেবনাথ, ছোট ভাই প্রদীপ দেবনাথ, ভগ্নিপতি নিখিল দেবনাথ প্রমুখ।