১৪ বছর ধরে আটকে আছে বিয়ানীবাজারের পৌর নির্বাচন

13136ডেস্ক রিপোর্টঃ বিয়ানীবাজার সদর পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও পৌরবাসীর জীবনমানের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। এই দীর্ঘ সময়ে পৌরসভার কোন নির্বাচন না হওয়ায় প্রশাসক কেন্দ্রীক চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। ফলে পৌরবাসীর প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির বেশ ফারাক। কাঙ্খিত উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে পৌরবাসী।
নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ব্যপ্তি ঘটানোর লক্ষে ২০০০ সালে ৬ নং বিয়ানীবাজার ইউনিয়ন পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিক্ষা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিবছরই বাজেট ঘোষণা করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে পৌরসভার সামগ্রিক উন্নয়নে তথা জনগণের কল্যাণে এ বাজেটগুলো কতটুকু ব্যয় হয়।
কাঙ্খিত উন্নয়ন দূরে থাক পৌরবাসীর মৌলিক অধিকার পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজ। আর এই ব্যর্থতার জন্য তাঁরা দায়ী করেছেন পৌর প্রশাসক তথা কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা, অজ্ঞতা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের সুদূরপ্রসারি চিন্তা চেতনার অভাবকে।
পক্ষান্তরে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবী, তাঁদের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই। তাঁদের অভিযোগ সরকারিভাবে বিশেষ বরাদ্দ না হলে কাঙ্খিত উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে নগর পিতা নির্বাচন করা হলে কাঙ্খিত উন্নয়নর দেখা কখনো পাবেনা পৌরবাসী।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার ইউনিয়ন পৌরসভার উন্নীত হওয়ার পর থেকে প্রশাসনিক কাজ চলছে প্রশাসক দিয়ে। এই দীর্ঘ সময়ে একজন প্রশাসকই পৌরসভা দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি তফজ্জুল হোসেন। নির্বাচন নিয়ে পৌরসভার অধিবাসীরা হতাশা থেকে নির্বাচন দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনও করেছিলেন। কিন্তু পৌরবাসীর আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটছে না আইনী জটিলতার কারণে।
পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে এ পর্যন্ত ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার ৩টি নিষ্পত্তি হলেও বর্তমানে ৮টি বিচারাধীন রয়েছে। পৌরসভাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আইনি জটিলতা তৈরীর করার জন্য পৌরবাসী দায়ি করেন পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনকে।
পৌরবাসীর অভিযোগ, গত ১৪ বছর থেকে উচ্চ আদালতে তফজ্জুল হোসেন একের পর এক রীট পিটীশন দায়ের করায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বত্যয় ঘটাচ্ছেন। বিয়ানীবাজার ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসাবে ২০০১ সালে প্রথম রীট পীটিশন (২৩৭৫/২০০১) উচ্চ আদালতে দাখিল করেন তফজ্জুল হোসেন।
২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দুর্নীতির অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করলে মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে আবারও তিনি উচ্চ আদালতে তিনি আরেকটি (৯০৬/২০১৩) রীট আবেদেন করেন। এই রীট আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত তাকে স্বপদে বহাল রাখার আদেশ জারি করেন। এ রীট আবেদনের শুনানী উচ্চ আদালতে অব্যাহত রয়েছে।
পৌরবাসীর অভিযোগ রয়েছে, নিজের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে তফজ্জুল হোসেন নিজে এবং নিজ বলয়ের লোক দিয়ে একাধিক রীট আবেদেন এবং সীমানা সংক্রান্ত মামলাগুলো উচ্চ আদালতে দায়ের করিয়েছেন। এসব দায়ের করা মামলায় তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে একজন বাদী সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে অবহিত করেন।
উচ্চ আদালতে সীমানা সংক্রান্ত দায়ের করা মামলার (৭৬০৭/০৯) বাদী রাজা মিয়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন তিনি সীমানা সংক্রান্ত এ মামলার বিষয়ে অবহিত নন। তার বাড়ি পৌরসভার সীমানা এলাকার ধারে কাছেও নয়।
লিখিত পত্রে উল্লেখ করেন প্রতারণায় আশ্রয় নিয়ে পৌর প্রশাসক তার দায়ের করা পৌর শহরের মাঝবাজারে মৎস্য আড়ত সংক্রান্ত ব্যবসায়িক মোকাদ্দমা সহকারি ম্যাজিস্ট্রেট বিয়ানীবাজার আদালত (০৯/০৭) এবং হাইকোর্টে রীট পিটিশন (৭৬০৭/০৯) দায়ের করা মামলাটি সীমানা সংক্রান্ত মামলা হিসাবে উচ্চ আদালতে নথিভুক্ত করিয়েছেন।
অথচ আমার দায়ের করা মামলা সীমানা সংক্রান্ত কোন মামলা ছিল না বলে দাবি করে তিনি উল্লেখ করেন, মামলার মেধা পরিবর্তন করে আদালতের সাথে প্রতারণার করা হয়েছে এবং একই সাথে আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সিলেট বিভাগের ১৭ পৌরসভার নির্বাচন সংক্রান্ত যে তালিকা পাঠিয়েছে তাতে ২০০১ সালে পৌরসভায় উন্নীত বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাম ছিল না। এ বিষয়টি জানাজানি হলে পৌরবাসীর মধ্যে হতাশা নেমে আসে। বিশেষ করে যারা পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির প্রত্যাশায় ছিলেন তারাই সবচেয়ে বেশী হতাশ হয়েছেন।
বিয়ানীবাজার পৌরসভা এবং বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরসভা ২০০১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘটিত হয়। প্রশাসক হিসাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহীকে দায়িত্ব দিলে মন্ত্রণালয়ের আদেশের উপর হাইর্কোটে রীট পীটিশন দায়ের করেন বিয়ানীবাজার ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তফজ্জুল হোসেন।
তার দায়ের করা রীট পীটিশন (২৩৭৫/২০০১) এর আলোকে আদালত পৌরসভার প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। ২০০৯ সালের ১৩ জুলাই পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেনের রীট পীটিশনটি আদালত বাতিল করেন।
একই বছর সুপ্রীম কোর্টে তিনি আরও একটি আপীল (১৪২৫/০৯) করেন। এছাড়া উচ্চ আদালতে পৌরসভার সীমানা সংক্রান্ত ৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পৌরসভার শ্রীধরা গ্রামের আবদুল ফাত্তাহ্ (১৩৭৩/০২), নয়াগ্রামের ফখরুল হুদা খান (২৯৯৮/০২), নবাং গ্রামের আবদুল মন্নান (৪২৫১/০২), নিদনপুর গ্রামের মনির আলী (২৩২৫/০২), লুৎফুর রহমান খান (৩০৩৫/০৩), কুড়ারবাজার ইউনিয়নের লাউঝারি গ্রামের আলকাছ আলী (৯১৪/০৯), কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির চাটাল এলাকার রাজা মিয়া (৭৬০৭/০৯) এবং পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (৯০৬/২০১৩) মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও পৌরসভার খাসাড়িপাড়া গ্রামের অধিবাসী জাকির হোসেন বলেন, একই সময় গোলাপগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়েছিলো। সেখানকার নাগরিকরা ভাগ্যবান তারা এ পর্যন্ত তিনবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছেন। এবার ভোট দেবেন। কিন্তু আমরার দুর্ভাগ্য এখনো পর্যন্ত পৌরসভা ভোট কী জিনিস বুঝতে পারিনী। তিনি অভিযোগ করেন, পৌরপ্রশাসক ও তার অনুগত কয়েক কমিশনার আদালতে সীমানা সংক্রান্ত মামলা দায়ের করায় এ প্রতিবন্দ্বকতা তৈরী করছেন।
নিজ বলয়ের লোক দিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করিয়েছেন এরকম অস্বীকার বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন বলেন, উচ্চ আদালতে একাধিক মামলা থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমিও নির্বাচনের পক্ষপাতি, কিন্তু আদালতের নিদের্শনার বাইরে কারো যাবার সুযোগ নেই।
তিনি জানান, এর মধ্যে স্থগিত থাকা ৫টি মামলা (সীমানা সংক্রান্ত) নিষ্পত্তি হয়েছে আরও ৪টি মামলা বিচারাধীন।