মেজরটিলায় স্ত্রীকে প্যাথেডিন ইনজেকশন দিয়ে নির্যাতন : ছুরিকাঘাতে ঝাঝরা
ডেস্ক রিপোর্টঃ ১১ বছর আগে ইসলামপুর এলাকার শামীম খানের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো জকিগঞ্জের সুমির। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে সুমির উপ নির্যাতন শুরু করেন শামীম। নির্যাতন ঢাকতে সুমিকে প্যাথেডিন ইনজেকশন দিতেন শামীম। তাতেই ক্ষান্ত না হয়ে সর্বশেষ স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালান তিনি।
সর্বশেষ মঙ্গলবার বিকালে পরিবারের লোকজন অজ্ঞান অবস্থায় নির্যাতিত সুমিকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। আর নির্যাতনকারী শামীমকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে শাহপরাণ থানায়।
সুমির পরিবারের লোকজন জানান, বিয়ের পর কিছুদিন ভাল কাটলেও এর পর থেকেই সুমির উপর শুরু হয় নির্যাতন। বিয়ের বছর পূর্ণ হতে না হতেই কোল জুড়ে আসে ফুটফুটে সন্তান। তার নাম রাখা হয় তাহনু আক্তার। এভাবে কাটতে থাকে সুমির জীবন। তাহনুর জন্মের তিন বছর পর আরো একটি সন্তান আসে সুমির ঘরে। তার নাম রাখা হয় তাকিব। দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই ১১ বছর ধরে মুখ বুঝে সংসার করছেন সৈয়দা জেরিন আক্তার সুমি।
একপর্যায়ে স্বামীর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বামী শামীম খান নির্যাতন ঢাকতে স্ত্রী সুমিকে প্যাথেডিন ইনজেকশন দিতে শুরু করে। তাতেই ক্ষান্ত হয়নি শামীম। সর্বশেষ স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায়। তাহনু ও তাকিব মাকে নির্যাতন না করার জন্য বাবার কাছে আবদার করে। কিন্তু ক্ষুদ্ধ শামীম সন্তানদের সামনেই সুমিকে ছুরিকাঘাত করে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।
সুমির উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে শামীমের বৃদ্ধ মা ফোন দিয়ে সুমিকে যেকোন উপায়ে উদ্ধার করার জন্য জানান। সুমির শাশুড়ির ফোন পেয়ে পরিবারের লোকজন পুলিশ নিয়ে গিয়ে উদ্ধার করে তাকে। এ সময় সুমি অজ্ঞান ছিলেন। তার শরীর থেকে রক্ত ঝরছিল। তার গায়ে ছিল একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। ঘরে পাওয়া যায় প্যাথেডিন ইনজেকশনের খালি বোতল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাঠানো হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে সুমি হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬ নং ওয়ার্ডে চিকিসাধীন।
নির্যাতিত সুমির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১১ বছর আগে শহররতলীর মেজরটিলা ৭৫-এ ইসলামপুর এলাকার শামীম খানের সঙ্গে বিয়ে হয় জকিগঞ্জ উপজেলার ৯ নং মানিকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সৈয়দ মঈন উদ্দিনের মেয়ে সুমির। বিয়ের কিছুদিন ভাল গেলেও হঠাৎ করেই বদলে যান শামীম। যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করেন সুমির উপর।
স্বামীর নির্যাতন মাথায় নিয়েই অনেক কষ্টে আগলে রাখেন সংসার। দুটি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্যাতনের কথা মুখ খোলে বলেননি পরিবারের কাউকে।
সর্বশেষ মাসখানেক আগে সুমিকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন শামীম। পরে সুমির মা ও অন্যান্যদের কাছে শামীম মাফ চাইলে সবাই তাকে ক্ষমা করে সুমিকে তার হাতে তুলে দেন। এরপর থেকেই তার উপর নতুন মাত্রায় শুরু হয় নির্যাতন। প্রায়ই সুমির উপর প্যাথেডিন ইনজেকশন পুশ করা হত বলে পরিবারের লোকজন জানান।
সুমির মা আলেয়া বেগম বলেন, বড় কষ্ট করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সাধ্যমত সব দিয়েছি। তাকে এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে আমি তার শাস্তি চাই।
এ ব্যাপারে শাহপরাণ থানার ওসি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় শামীমকে আটক করা হয়েছে। পরিবারের লোকজন মামলা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।