জামিন নামঞ্জুর, হাজত থেকে পালালেন এসআই

Fleedডেস্ক রিপোর্টঃ পুলিশি হেফাজতে ফারুক হোসেন কামাল নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দুই উপপরিদর্শকসহ (এসআই) তিনজনের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার সকালে আদালতের দেওয়া এ আদেশের পর সন্ধ্যায় আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়েছেন এক এসআই।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিরা হলেন কাফরুল থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান ও মো. রেজাউল করিম পাটোয়ারী এবং সোর্স বাবু ওরফে রতন ওরফে বাবু মিয়া।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়েছেন এসআই রেজাউল করিম পাটোয়ারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালতের এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বিষয়টি জানিয়েছেন। পরে পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি প্রসিকিউশন) কামরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে গেছেন এসআই রেজাউল করিম পাটোয়ারী।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তৈয়ব এনটিভি অনলাইনকে জানান, দুই এসআই হাইকোর্ট থেকে প্রথমে দুই মাসের আগাম জামিন পান। পরে তাঁরা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যন্ত জামিন পান। ওই আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আজ তিন আসামি বিশেষ জজ আদালত ৫-এ আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। বিচারক তাঁদের জামিনের আবেদন নাকচ করে আজ কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আইনজীবী আবু তৈয়ব আরো জানান, মামলাটিতে পুলিশ ৩০৪ ধারায় (অপরাধজনক প্রাণনাশ) আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও আদালত তা আজ নাকচ করে সরাসরি হত্যার অভিযোগে ৩০২ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এবং মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্যও দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের মৃত জামাল হকের ছেলে ফারুক হোসেন কামাল রাজধানীর কাফরুল এলাকায় থেকে উপ-ঠিকাদারির কাজ করতেন। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় আসামি এসআই নুরুজ্জামান ও সোর্স রতন কাফরুলের ভাণ্ডারী স্টিলের দোকান থেকে ফারুক হোসেনকে মামলা আছে বলে কাফরুল থানায় নিয়ে যান।

ওই দিন রাত ১১টায় বাদী থানায় গেলে থানাহাজতে তাঁর ভাইয়ের চিৎকার শুনতে পান। পুলিশকে ম্যানেজ করে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলে ফারুক এসআই নুরুজ্জামান ও সোর্স রতনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে বলেন। টাকা না দিলে মেরে ফেলবে বলে জানান।

এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি ফারুককে কাফরুল থানার ৫৭(২)১২ নম্বর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত আসামির শরীরে জখমের চিহ্ন দেখে রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।

পরে ২২ ফেব্রুয়ারি কারাগারে ফারুক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কারা হাসপাতালে তাঁর রক্তবমি হলে তাঁকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় মারা যান ফারুক।

এ ঘটনায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত ফারুকের বোন পারভীন হক। পরে আদালত মামলাটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন।

চলতি বছরের ১ মার্চ ঢাকার সিএমএম আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় দণ্ডবিধির ৩৪২/৩০৪/১১৪/১০৯ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন।