দেশে অসাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে : নিউইয়র্কে নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। ছবি- এনা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান। ছবি- এনা।

নিউইয়র্ক থেকে এনা : দেশের অসাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো আবারো মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব মোকাবেলায় রবীন্দ্র নাথ ও নজরুলের আদর্শকে ধারণ করে লড়াই- সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। গত ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় (নিউইয়র্ক সময়) কুইন্সের এস্টোরিয়াস্থ নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আয়োজিত
জাতিসংঘে নিযুক্ত নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এ সব কথা বলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি আরো বলেন, গেল ২৪ নভেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম কোন প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমনে। ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’ উৎসবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আজকে যেভাবে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী অসাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে, তাদের দমনে কবি গুরু রবীন্দ্র নাথ এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের চেতনাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এ দু’জন কবি সব সময়ে তাদের লেখা কবিতা, গান ও গল্পে সেক্যুলারিজমের কথা বলে গেছেন। লড়াই- সংগ্রাম করেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। যার ফলশ্রুতিতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে আমাদের মহান মহান স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

অনুষ্ঠানে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনসহ সুধীর একাংশ। ছবি- এনা।
অনুষ্ঠানে স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেনসহ সুধীর একাংশ। ছবি- এনা।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের আদর্শ ও চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লড়াইয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান স্থায়ী প্রতিনিধি। এছাড়াও কোন গোষ্ঠী যাতে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয় সজাগ থাকতে হবে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন।
সুন্দর এ আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। চৌধুরী সুলতানা পারভীনের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে অংশ নেন নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন এমপিসহ প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, সাংবাদিক লেখক ও কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস।
সোহরাব উদ্দিন এমপি বলেন, নজরুল এবং রবীন্দ্র নাথকে আলাদা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। অপ্রিয় হলে সত্য আমাদের দেশে নজরুল এবং রবীন্দ্র ভক্তরা নিজেদের পছন্দকে ছাপিয়ে দিতেই তাদের আলাদা করে ফেলেন।
হাসান ফেরদৌস বলেন, নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তারা দু’জনই বাংলা ভাষার ও সম্পদ ও সংস্কৃতির সম্পূরক।
আলোচনা শেষে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন কনস্যুলেট পরিবারের সদস্যরা। সেলিমা আশরাফের পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কাদেরী কিবরিয়াসহ অন্যরা। ‘রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী’ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মনোমুগ্ধকর এ আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশী কম্যুনিটি নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যজন জামাল উদ্দিন হোসেন, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ, বিটিভির সাবেক প্রযোজক বেলাল বেগ, যুবক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডের আহ্বায়ক আব্দুল মুকিত চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহীম হাওলাদার, মূলধারা ও কম্যুনিটি নেতা আবদুস শহীদ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. টমাস দুলু রায় প্রমুখ।