সাকা-মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর

147_91753সুরমা টাইমস ডেস্কঃ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

শনিবার রাত ১২টা ৪৫ মিনিট থেকে ১২টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে তাঁদের মত্যুদণ্ড কার্যকর হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান।

দণ্ড কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান ও রাজু। সময় আইজিপি (প্রিজন) সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, অতিরিক্ত আইজি (প্রিজন) কর্নেল মুহাম্মদ ফজলুল কবির, ডিআইজি (প্রিজন) গোলাম হায়দার, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মালেক মৃধা, কারা হাসপাতালের চিকিৎসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

উভয়ের পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দুইজনেরই মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে। আজ রাতেই উভয়ের লাশ তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এরপরই শুরু হয় ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া। তাদের সঙ্গে দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা।

আপিল বিভাগ গত ১৮ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে তাদের মৃত্যুদণ্ড রিভিউ করার আবেদন খারিজ এবং পর দিন আদেশের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশ করে। ট্রাইবুনালের মাধ্যমে একই দিন সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে রায়ের আদেশ পৌঁছে দেয়। কারা কর্মকর্তারা সাথে সাথে তা দুই আসামিকে পড়ে শোনান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সে সময়কার আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মুজাহিদের আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মুজাহিদ।

অবশেষে গত ১৮ নভেম্বর আপিল বিভাগের চূড়ান্ত আদেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কার্যক্রম। সবশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগ থাকে আসামিদের সামনে। নানা নাটকীয়তার পর শনিবার বিকালে জানানো হয় সাকা ও মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় হয়ে সেই আবেদন বঙ্গভবনে গেলে রাতে তা নাকচ করেন রাষ্ট্রপতি। তবে সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ উভয়ের পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো আবেদন তারা করেননি।