অতিথিদের সংবর্ধনায় বন্দুকের ঝাঁঝালো গুলি !
এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী: অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এশিয়া মহাদেশের ঐতিহ্যবাহী হাকালুকি হাওর। পৃথিবীর প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। মুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬শ প্রজাতির পরিজায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১শ ৫০ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে আসে। কিন্তু এর দুই তৃতীয়াংশেরই অবস্থা বিপন্ন ও নাজুক। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাতাসে শীতের ছোয়া লাগতেই শুরু হয়ে গেছে অতিথি পাখির আনাগোনা। বাংলাদেশে সাইবেরিয়া থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেধে অতিথি পাখি আসে। উত্তর গোলার্থ অর্থাৎ বরফাচ্ছন্ন শীত প্রদান দেশ থেকে কনকনে ঠান্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ আবহাওয়ায় সুখ অনুভব করতে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসে অতিথি পাখি হয়ে আমাদের দেশে। সূর্যোজ্জল, রৌদ্রজ্জল পরিবেশ ও ঠান্ডা রোদের মিশেল আবহাওয়ার দেশ বাংলাদেশ। শীতের প্রারম্ভেই ওদের পাখনার ঝাপটায় সৃষ্ট নান্দনিক ছন্দে মুখরিত হয় ওঠে বাংলার প্রত্যন্ত জনপদ, নদনদী, খালবিল, হাওর, বিল, জলাশয় ও বিস্তির্ন চরাঞ্চল। অতিথিদের গুঞ্জনে কুঞ্জনে সবুজ বন-বনানি পরিবেষ্টিত রুপসি বাংলার নির্জন প্রান্তর তখন সেজে উঠে নতুন সাজে। প্রতি বছরের মতো এবারো বিচিত্র রঙ ও বর্ণের পাখি আসছে এখানে। গরম আবহাওয়ায় খাদ্যের নিশ্চয়তা পেতে পুরো শীত মওসুমে এরা উড়ে বেড়াবে হাকালুকি হাওর এলাকায়। আর বসন্তের শুরুতেই তাদের অস্থায়ী নিবাস গুটিয়ে নিজ নিজ দেশের উদ্দেশ্যে উড়াল দেবে এরা। শীত মওসুম এলেই অতিথি পাখির আগমনের অপেক্ষায় থাকেন পাখিপ্রেমিরা। পাখিদের এমন মুখরিত দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে অনেককেই দেখা যায় হাওরের আশে পাশে। ওরা হাওরপাড়ের হিজল, করচ, বরুণ, আড়াং গাছেই গড়ে তোলে তাদের অস্থায়ী নিবাস। দুপুর বা বিকেলে হাকালুকির কয়েকটি বিলে পাখিদের খাবার নিয়ে ঝগড়া কিংবা খাদ্য সংগ্রহের দৃশ্য এখন নিত্য ব্যাপার। হাওরপাড়ের স্থানীয় অধিবাসীরা জানালেন, ইতোমধ্যে বড় বড় দলে হাওরের পিংলা, চাতলা, পরতি, চৌকিয়া, হাওরখাল, মালাম, গৌড়কুড়ি, নাগুয়া, তুরল, ফুটবিলে বিভিন্ন জাত ও রঙের অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায়। ক’দিন পর পাখিদের কিঁচিরমিচির আওয়াজে হাওরপাড়ের চার পাশ মুখরিত হয়ে উঠবে। উপজেলার ভূকশিমইল, সুজানগর ও জায়ফরনগর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, তাদের প্রতিবেশী অনেকেই এসব বিলে বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদ পেতে জাল ও বিষটোপ দিয়ে প্রতিদিন ভোরে, বিকেল ও রাতে পাখি ধরছে শিকারিরা। এছাড়াও ভোজন পিয়াসীরা সৌখিনের ন্যায় বন্দুকের ঝাঝাঁলো গুলি দিয়ে প্রকাশ্যে পাকি শিকার করছে। আর এসব পাখি বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় ভোজনরসিকদের কাছে। এ ছাড়া হাওরের পাশের বাজার কিংবা মৌলভীবাজার, সিলেট বিভাগীয় শহরেও বিক্রি হচ্ছে এসব অতিথি পাখি। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, বিভিন্ন সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করে শিকারীরা তাদের সহযোগীদের নিয়ে পাখি শিকার করে বিক্রি করে। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: কামরুল হাসান জানান, ইতোমধ্যে পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। কোনো ব্যাক্তি পাখি শিকারীদের দেখতে পেলে সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসনকে জানানোর জন্য বিশেষ অনুরোধ রহিল। “বাংলাদেশ হাওর বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ” সভাপতি হাজী সিরাজ উদ্দিন আহমদ বাদশা জানান, শীতে পাখিগুলো মাত্র আসতে শুরু করেছে। এ সুযোগে একশ্রেণীর অসাধু পাখি শিকারীরা ওদের নিধনে ফাঁদ পাততে শুরু করেছে। এদের কবল থেকে অতিথি পাখি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের শিগগির কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।