‘এ প্লাস’ মেয়াদোত্তীর্ণ কৌটা : প্রতিবাদী বাবাকে লাঞ্ছনা, হাউ মাউ করে কাঁদল শিশু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাজশাহীতে ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইন চলাকালে মেয়াদোত্তীর্ণ কৌটা নিয়ে প্রতিবাদ করায় এক বাবাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাঁকে মারতে দেখে হাউ মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশু ছেলে। এ ঘটনায় আশপাশের মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে প্রায় এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে ওই কেন্দ্রে ক্যাপসুল খাওয়ানো। আজ শনিবার সকালে সারা দেশের মতো রাজশাহী নগরীতেও ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়। কর্মসূচি চলাকালে সকালে নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মথুরডাঙ্গা এলাকার একটি কেন্দ্রে শিশু ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভিটামিন ‘এ প্লাস’ ক্যাপসুল খাওয়াতে এসেছিলেন জিন্নানগর এলাকার মিজান উদ্দিন। তিনি এসে দেখেন যে কৌটা থেকে ক্যাপসুল বের করা হচ্ছে, তার মেয়াদ ২০১০ সালের জুলাই মাসে শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি দেখে তিনি প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, এই ক্যাপসুলের কৌটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। কেন এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হচ্ছে। যদি কোনো বাচ্চার ক্ষতি হয়, তার দায়দায়িত্ব কে নেবে। বিষয়টি জানিয়ে তিনি বেসরকারি টেলিভিশনের এক ক্যামেরাপারসনকে ফোন দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হন। এ সময় আয়োজকরা তাঁদের বোঝান, বিতরণের সুবিধার জন্য তাঁরা পুরোনো কৌটা ব্যবহার করছেন। আসলে ক্যাপসুল মেয়াদোত্তীর্ণ নয়। তাঁরা সাংবাদিকদের ২০১৭ সাল পর্যন্ত মেয়াদ আছে এমন একটি কৌটাও দেখান।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিকরা চলে যাওয়ার পরপরই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা মিজান উদ্দিনের ওপর চড়াও হন। তাঁরা তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাঁরা টেনেহিঁচড়ে তাঁকে একটি ঘরের ভেতরেও ঢোকানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর হাত ধরেছিল ছেলেশিশু। বাবাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বাবার হাত থেকে তার হাত ছুটে যায়। ভয়ে শিশুটি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এ সময় একজন নারী এসে শিশুটির হাত ধরে তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর বেলাল আহম্মেদ এসে বিষয়টি মিটমাট করে দেন। জানতে চাইলে বেলাল আহম্মেদ বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা থেকে এমনটি হয়েছে। আসলে ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ নয়। বিতরণের সুবিধার্থে পুরোনো কৌটা ব্যবহার করা হয়েছে। আমার হস্তক্ষেপে আবার ক্যাপসুল খাওয়ানো শুরু হয়।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ এফ এম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি। তাঁর দাবি, সেখানে সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মচারী ছিল না। ওরা সবাই ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী। পুরোনো কৌটা ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি কৌটায় ৫০০টি করে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে একেকটি ওয়ার্ডের চাহিদা অনুযায়ী কৌটাভর্তি ক্যাপসুল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু একেকটি ওয়ার্ডে অনেক ক্যাম্প করায় কোনো কোনো ক্যাম্পে দেড় শ থেকে ৩০০টি ক্যাপসুলের প্রয়োজন দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে নতুন কৌটা খুলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ক্যাম্পগুলোতে ক্যাপসুল ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। ফলে সব ক্যাম্পে নতুন কৌটা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এর আগে আজ সকালে নগর ভবনে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাপসুল ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম। নগরীর ৩৮৪টি কেন্দ্রে এই ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়।