নদী ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে সিলেট সদর উপজেলার ৬টি গ্রাম
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সুরমার অব্যাহত ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে মোগলগাঁও ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম। এরই মধ্যে ঘর বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছে অন্ততঃ ৩০টি পরিবার। ভাঙ্গন স্থলে দুই বছর ধরে কনক্রিটের তৈরী ব্লক ও পাথর ফেলে রাখলেও রহস্যজনক কারণে তা বসানো হচ্ছেনা। অন্যদিকে, সুরমার সর্বনাশা ভাঙ্গন প্রতি বছর কেড়ে নিচ্ছে নদীর তীরবর্তী অসহায় জনগোষ্ঠির ঘরবাড়ি। একদিকে ‘ভাঙ্গন’ অন্যদিকে ‘চর’ সৃষ্টির খেলায় তীরবর্তী মানুষের ভাগ্যে দুর্দশা নেমে এলেও জনপ্রতিনিধিদের চোখে যেন পড়ছেইনা।। এনিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের শেষ নেই। সিলেট শহরের নিকটবর্তী বৃহত্তর লামাকাজী এলাকা। ঐ এলাকায়ই অবস্থান সিলেটের সাথে সুনামগঞ্জের সেতুবন্ধনকারী এম এ খান সেতু। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে সেই সেতুটিও পড়েছে হুমকীর মুখে।
আর সেই সেতুর পাশের গ্রামগুলোর মানুষের দুঃখ হয়ে আছে সুরমার সর্বনাশী ভাঙ্গন। লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, খিত্তারগাঁও, মোল্লারগাঁও, চানপুর এই গ্রামগুলো আজ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। নদীর সাথে এই গ্রামগুলোর অনেকটা হারিয়েছে নিজস্ব মানচিত্র। সরেজমিনে গিয়ে জানা গেল, সুরমার প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে ভাঙ্গন। নদীর পূর্বপার এম এ খান সেতুর উত্তর পাশে ভাঙ্গনের প্রবল সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরের নদীর পানি কমার সাথে হঠাৎ করে বেড়ে যায় ভাঙ্গন। এর ফলে গত দুই মাসে অন্ততঃ ৩০টি পরিবারের ঘর বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে সুরমায়।
স্থানীয়রা জানালেন, সুরমা নদীর গোবিন্দগঞ্জ অংশে ভাঙ্গনে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও লামাকাজী লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, খিত্তারগাঁও, মোল্লারগাঁও, চাঁনপুর এলাকায় নদী শাসনের কোন উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী থেকে নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বারবার ভাঙ্গন প্রবল এলাকা পরিদর্শন করলেও কার্যতঃ কেউ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এলাকাবাসী বার বার আশ্বাসের বাণী শুনলেও তা কখনো রূপ পায়নি বাস্তবে। অন্যদিকে, নদীর পূর্ব পারে ভাঙ্গন লিলা চললেও পশ্চিম পারে গড়ে উঠেছে বিশাল চর। বর্তমানে সেই চর ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের দখলে। একদিকে ঘর বাড়ি ও ফসলী জমি বিলীন হলেও অন্যদিকে জেগে উঠা চর তৈরী করা হচ্ছে ফসল ফলানোর জন্য। এলাকাবাসীর দাবি ঐ চর পরিকল্পিতভাবে খনন করলে হয়তো পূর্ব পারের ভাঙ্গন ঠেকানো যেত। তবে প্রভাবশালীদের বাধার কারণে এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করলেও কেউ কেউ কান দিচ্ছেনা তাতে।
লালারগাঁওয়ের বাসিন্দা ঈসমাইল, মজমিল আলীর ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্যত্র সরে গিয়ে কোনরকমে বসবাস করছেন তারা। ভাঙ্গনের ফলে নিঃস্ব হয়ে আবার গ্রামের কেউ কেউ পাড়ি জমিয়েছে অন্য উপজেলায় স্বজনদের কাছে। ঘর বাড়ি হারিয়ে একই গ্রামের আব্দুন নূর ও গেদা দুই ভাই আজ সর্বশান্ত। শেষ ভিটাটুকু চলে গেছে নদীগর্ভে। ফলে অনেকটা পথে বসে গেছেন তারা। খালপারের ফরিদ মিয়ার ঘর বাড়ি নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। তিনিও অন্যত্র ঘর করে বসবাস করছেন। নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আরো অনেকের ঘর বাড়ি হারিয়ে যাবে নদীগর্ভে।
স্থানীয় সামাজিক সংগঠন আল ইখওয়ান সমাজ কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আকতার হোসেন জানান, কয়েক বছর ধরে লামাকাজী সেতুর পাশে কনক্রিটের তৈরী ব্লক ও পাথর রাখা হয়েছে। তবে এগুলো আসলে কী কারণে রাখা হয়েছে কেউ জানেনা। আকতার হোসেন দাবি করেন এই ব্লকগুলো দ্রুত বসালে হয়তো কিছুটা হলেও ভাঙ্গন ঠেকানো যেত। ভাঙ্গনে বেশকিছু দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলেও জানান। মোগলগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক টুনু জানান, একাধিকবার মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভাঙ্গন প্রবল এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে কার্যতঃ কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছেনা। তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন রোধ একটি বিশাল কাজ। ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ দিয়ে নদী শাসন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর সৃদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশফাক আহমদ জানান, ঠিকাদার গত দুই বছর ধরে লামাকাজী এলাকায় কিছু ব্লক ও পাথর ফেলে রেখেছে, কাজ করছেনা। কয়েকবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে, ঠিকাদার গাফিলতি করছে। আশফাক আহমদ আরো জানান তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। সিলেটে আসার পর পুনরায় বিষয়টির খোঁজ নিবেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি সিলেটে নতুন যোগদান করেছেন। মাত্র কয়েক কর্মদিবস অফিস করেছেন। তিনি লামাকাজী এলাকার ঐ ভাঙ্গন ঠেকানোর কোন প্রজেক্ট চলমান আছে কি না খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। অপরদিকে, এলাকাবাসী নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এছাড়া আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর মানববন্ধন কর্মসূচী পালনের ডাক দিয়েছেন তারা।