আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না

ফ্লোরিডা বিএনপির আলোচনা সভায় সাদেক হোসেন খোকা

ফ্লোরিডা বিএনপির সভায় বক্তব্য রাখছেন সাদেক হোসেন খোকা। ছবি- এনা।
ফ্লোরিডা বিএনপির সভায় বক্তব্য রাখছেন সাদেক হোসেন খোকা। ছবি- এনা।

ফ্লোরিডা থেকে এনা: বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসে খোকা বলেছেন, ৭ নভেম্বরের চেতনায় শেখ হাসিনার স্বৈর সরকারের পতন ঘটাতে হবে এবং এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন করতে হবে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার সম্মিলিত বিপ্লবে যেভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করা হয়েছিল, সেই বিপ্লব ও ঐক্যের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আজ জাতিকে গণতন্ত্রের নামাবলী জড়িয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসীন বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম নিপীড়ক হাসিনা ও তার দোসরদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে সত্যিকার অর্থে জনগণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র পাশাপাশি চলতে পারে না। তিনি আরো বলেন, স্বৈরাচারি এই শেখ হাসিনা সরকারের আয়ু আর বেশি দিন নেই। পতন অনিবার্য্য।
তিনি বলেন, সেদিন বাংলাদেশ আধিপত্যবাদী শক্তির আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেয়েছিল। যোগ্য নেতৃত্বের আশায় ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে এনেছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান ও স্বাধীনতার ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। তিনি ক্যু করে ক্ষমতায় আসেননি। সিপাহি-জনতা তার সততা ও যোগ্যতার উপর আস্থা স্থাপন করে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করে এবং তিনি আওয়ামী বাকশালীদের প্রবর্তিত একদলীয় শাসনের শৃংখল থেকে দেশকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মন্ত্রে দেশবাসীকে উজ্জীবিত করেন। তিনি বলেন, আজ বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার দেশে রয়েছে তারা অবৈধভাবে দেশ শাসন করছে। তাদেরকে হটিয়ে সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গত ৭ নভেম্বর রাতে সাউথ ফোরিডার লডারডেল এ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা প্রদানকালে সাদেক হোসেন খোকা এসব কথা বলেন। ফোরিডা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ফোরিডা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ দিনাজ খান এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু ও সাবেক সহ সভাপতি আবদুর রশিদ খান হারুন, ফোরিডা শাখা জাসাস এর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শরীফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফোরিডা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারুক সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিন্টু, ফোরিডা যুবদলের সভাপতি মতিউর রহমান খান, ফোরিডা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো: শহীদ ফিরোজ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এহসান আহমেদ হিমেল প্রমুখ।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করে অপশক্তিকে উত্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। সেই অপশক্তি দেশে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে এবং কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হলেই সরকারের প্রচার মাধ্যম ও আওয়ামী লীগ ঢালাওভাবে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের উপর। এমনকি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতে গিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হলেও এসবের পিছনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের হাত রয়েছে বলে অপপ্রচার চালাতেও দ্বিধা করছে না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও তারা কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ মনে করে যে দেশটা এককভাবে তাদের এবং একটি মাত্র দলই দেশে রাজনীতি করতে পারবে, সে দলটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। অন্য কোনো দলের রাজনীতি করার অধিকার বা প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করে না। এ ধরণের অসহিষ্ণু মনোভাবের কারণে অপশক্তির উত্থান ঘটছে এবং এটিকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে সরকার দেশকে আওয়ামীকরণ করে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে, পিছু হটার আর সুযোগ নেই। এজন্য দেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বৈরাচারী সরকারকে রুখে দাঁড়াতে হবে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির চেতনায়।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, হাসিনার সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। তারা জোর করে জনগণ ও বিশেষ করে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে এবং পুলিশ, র‌্যাব লেলিয়ে দিয়ে এক ভীতির রাজত্ব কায়েম করে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। এভাবে জোর করে কতদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে? এই অবস্থার আশু অবসান করতে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানের আয়োজন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের মধ্যে ফোরিডা বিএনপির নেতৃবৃন্দ আবু ইদ্রিস লাবু, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মহসিন হাসান, জহির ইসলাম, বাচ্চু মিয়া, মো: সারোয়ার, ইফতেখার আহমেদ মিথেল, রফিকুল ইসলাম লিটন, নাঈম খান, মোহাম্মদ সাইফ সেন্টু, মনির হোসেন, রাইসুল আহমেদ সিজান, মোহাম্মদ টিটো মিয়া, মোহাম্মদ রিয়াজ, রাসেল মীর, জিল্লুর রহমান রাসেল, আবু তৈয়ব খান, মোহাম্মদ রানা, মোজাম্মেল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, তাসলিম আহমেদ রতœ, ফয়সল আহমেদ, আবুল হাসনাত এবং ফোরিডা যুবদল নেতা মোহাম্মদ মাসুমসহ আরো অনেকে।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণ। একটি সফল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়া একদলীয় বাকশালী শাসনের পরির্বতে বহুদলীয় শাসনের প্রবর্তন করেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন, সংবিধানে মৌলিক অধিকার পুনর্বহাল করেন। দেশে আইনের শাসন বহাল করার জন্য একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনেন।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ দিনাজ খান বলেন, গণতন্ত্র বাক ব্যক্তি স্বাধীনতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা যে গণতন্ত্রের মধ্যে নিহিত আমরা সে গণতন্ত্র ফিরে পেতে চাই। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ সকলে দেশে ও প্রবাসে যে আন্দোলন চালাচ্ছে তা গণতন্ত্রকে পুন:প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ আন্দোলন জোরদার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করার আহবান জানান তিনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস আহমেদের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি গত ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ব্রুকলীনে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদারের নেতৃত্বে গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের হাটবাজারে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং সাবেক সহ সভাপতি শরাফত হোসেন বাবু, টেস্ট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্যাহ আতিকুর রহমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভুইয়া, সাঈদুর রহমান ও খালেক আকন্দের নেতৃত্বে স্টেট বিএনপি জ্যাকসন হাইটসের ইত্যাদি অডিটোরিয়ামে ৭ নভেম্বর পালন করে। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহমেদ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসন দেখলে মনে হয় তিনি ১৫ আগস্টের কথা ভুলে গেছেন।