রাকিব হত্যার রায় : আদালত ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ খুলনার চাঞ্চল্যকর শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে আদালত চত্বর ও এর আশ-পাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ইতিমধ্যেই আদালতপাড়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আইনজীবী এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত হয়েছেন। এ ছাড়া উৎসুক জনতাও ধীরে ধীরে ভীড় করছেন। এ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) দিলরুবা সুলতানা আজ রায় ঘোষণা করবেন।
সকাল ৯টায় আদালতপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ের জন্য নির্ধারিত খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রস্তুতি চলছে। আদালত চত্বর ও এর আশ-পাশ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের ব্যাপক উপস্থিতি। চারদিকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রাকিব হত্যা মামলায় অভিযুক্ত মোটরসাইকেল গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার কথিত চাচা মিন্টু খানকে খুলনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনতে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের প্রস্তুতি চলছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, খুলনা ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টায় আদালত বসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ আদালতে আজ মোট ৪০টি মামলার কার্যক্রম তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি মামলার শুনানি হতে পারে। তবে রাকিব হত্যা মামলার রায়টি সর্বশেষে ঘোষণা করবেন আদালত। আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়ে তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন।
মোমিনুল ইসলাম জানান, মাত্র ৩ মাস ৫ দিন অর্থ্যাৎ ৯৭ দিনে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। তবে আদালতের বিচারিক কার্যদিবস ছিল মাত্র ১১টি। এত স্বল্প সময়ের মামলার রায় ঘোষণা বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই। মূলত এ মামলায় মিডিয়ার ভূমিকা, আদালতের অধিকতর গুরুত্ব প্রদান, সাক্ষীদের আন্তরিকতা এবং আইনজীবীদের সময় ক্ষেপনের প্রবণতা না থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
আদালত সূত্র জানায়, গত ২৫ আগস্ট আলোচিত এ হত্যা মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা ও খুলনা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী মোস্তাক আহম্মেদ মুখ্য মহানগর হাকিম মেজবাহ উদ্দিন আহমদের আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন। এতে এজাহারভুক্ত তিন আসামি নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ের শরীফ মোটর্সের মালিক ওমর শরীফ, তার সহযোগী কথিত চাচা মিন্টু খান ও শরীফের মা বিউটি বেগমকে অভিযুক্ত করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী তিনজনসহ চার্জশিটে মোট ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. ফারুক ইকবালের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করেন। একই দিন আদালত মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান।
গত ১ অক্টোবর মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা মামলার নির্ধারিত দিনে চার্জশিট আমলে নেন। গত ৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠন (চার্জ) পূর্বক আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। চার্জশিটভুক্ত ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালত গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর টানা পাঁচদিন ও গত ২২ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ২৮ অক্টোবর আসামিদের ৩৪২ ধারায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। ১ নভেম্বর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত ৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, নিজের গ্যারেজের কাজ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অন্য একটি গ্যারেজে কাজ নেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোডের শরীফ মোটর্স গ্যারেজের মালিক ওমর শরীফ ও তার সহযোগী কথিত চাচা মিন্টু খান দোকানে নিয়ে শিশু রাকিবের পায়ুপথে মোটরসাইকেলের চাকায় হাওয়া দেয়ার মেশিন দিয়ে বাতাস প্রবেশ করায়। এতে রাকিবের নাড়ি ভুড়ে ছিড়ে গিয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত পৌঁনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় রাকিবের বাবা আলম হাওলাদার তিনজনকে আসামি করে পরদিন খুলনা সদর থানায় ঘাতক শরীফ মটর্সের মালিক মো. শরীফ ও সহযোগী মো. মিন্টু খান ও শরীফের মা বিউটি বেগমের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রাকিবের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওইদিন রাতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ জনতা শরীফ ও মিন্টুকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুলিশ শরীফের মাকেও গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হওয়া তিনজনই হত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শী তিন সাক্ষীও একই ধারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেন।
পৈশাচিক এ হত্যাকান্ডের খুলনাসহ সারাদেশের মানুষ ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে উঠে। বিচারের দাবিতে শিশু সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।