ওসমানী হাসপাতাল: ‘যেনো শরণার্থী শিবির’

Osmani Hospitalসুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৯০০। তবে প্রতিদিনি এ হাসপাতালে গড়ে চিকিৎসা নেন ১৮ শ’ রোগী। বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেন প্রতিদিন আরো দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী। ৯০০ শয্যার হাসপাতালে লোকবল প্রয়োজন ১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে আছেন মাত্র ৯৩৬ জন, শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৪৬টি পদ।

এ তথ্যগুলোই জানান দিচ্ছে ওসমানী হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার চিত্র। সিলেট বিভাগের বৃহত্তম এই চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দিগুণ রোগী ভর্তি হন। অথচ চিকিৎসক নার্সসহ প্রয়োজনীয় লোকবল রয়েছেন ধারণক্ষমতার অনুপাতে চাহিদারও অর্ধেক। ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীদের পোহতে হচ্ছে দূর্ভোগ। আর বিপুল পরিমান রোগীর চাপ সামলাত হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বল্পসংখ্যক জনবলকে।

এছাড়া অবকাঠামোগত সংকট, ঔষধপত্রসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, বেড-কেবিনের অভাব তো রয়েছেই। প্রতিদিন আন্ত:বিভাগ ও বর্হিবিভাগ মিলিয়ে ৪ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন মাত্র ১৭৭ জন চিকিসক।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৯৮ সালের ১৭ জুন ৫০০ শয্যার ওসমানী হাসপাতালকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে আজ পর্যন্ত সে অনুযায়ী বাড়ানো হয়নি অবকাঠামো-সুবিধা। নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় লোকবল। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে হাসপাতালটিকে ১৫শ’ শয্যায় উন্নীত করার দাবি সংশ্লিস্টদের।

ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দার মেঝেতে চাদর বিছিয়ে বসে ও শুয়ে আছেন অর্ধশতাধিক রোগী।

তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাঁচ দিন আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বেড, এমনকি ওয়ার্ডের ভেতরের মেঝেও খালি না থাকায় তাকে বারান্দায় রাখা হয়েছে। হাসপাতালের আরো কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে একইচিত্র দেখা যায়। বেড তো খালিই নেই-ই। ওয়ার্ডের মেঝে উপচে বারান্দায়ও শোয়ানো হয়েছে ভর্তি হওয়া রোগীদের।

রোগীরা জানিয়েছেন, শয্যা-সংকট তো আছেই। তা ছাড়া সময়মত চিকিৎসক ও নার্স পাওয়া যায় না। রোগীরা উপচে পড়ায় হাসপাতালজুড়ে তৈরি হয়েছে নোংরা পরিবেশ।

হাসপাতলে ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজন রুহেল আহমদ বলেন, পুরো হাসপাতাল জুড়ে যেভাবে রোগিদের গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে তাতে এখানে এসে অসুস্থ মানুষ সুস্থ হওয়ার বদলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এটি হাসপাতাল নয় যেনো শরণার্থী শিবির।

রোগীরা জানান, হাসপাতালের ২৬টি ওয়ার্ডে ২৬টি, আর বহির্বিভাগে ১০টি শৌচাগার আছে। প্রয়েজনের তুলনায় এগুলো একেবারেই অপ্রতুল। তা ছাড়া এসব শৌচাগার থেকে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ ছড়ায়।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপপরিচালকের দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ১১১ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রতিদিন কয়েক দফা শৌচাগারগুলো পরিচ্ছন্ন করছেন। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর কারণে কিছুক্ষণ পরপরই এগুলো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা যায়, নগরের কাজলশাহ এলাকায় অবস্থিত এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে আরও অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় এসব রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বহির্বিভাগে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসককে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রোগী দেখতে হয়।

হাসপাতালের উপপরিচালকের দপ্তর জানিয়েছে, ৯০০ শয্যার হাসপাতালে লোকবল প্রয়োজন ১ হাজার ৯৮২ জন। এর মধ্যে আছেন মাত্র ৯৩৬ জন, শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৪৬টি পদ। চিকিৎসকের ৪৩৭টি পদের মধ্যে শূন্য ২৬০টি, ৫৭৫ জন নার্সের বিপরীতে শূন্য আছে ২৮০টি, ৭১৭টি চতুর্থ শ্রেণির পদের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৪০৯টি পদ।

ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক মো. আবদুস ছালাম বলেন, ‘১৭ বছর আগে হাসপাতালটি ৯০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখন পর্যন্ত এর বিপরীতে কোনো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সেবা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হলেও আন্তরিকতার কোনো ত্রুটি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘লোকবল-সংকটের কারণেই একজন চিকিৎসক ও নার্সকে দুই থেকে তিন গুণ বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অন্তর্বিভাগের ৯০০ রোগীর ওষুধের ব্যবস্থা থাকলেও প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৯০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তাই ওষুধও রোগীদের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিতে হচ্ছে। এরপরও রোগীদের সঠিক সেবা দিয়ে চলেছি আমরা। আর লোকবল নিয়োগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’