জাফলং’র সেই নারী কংকালের পরিচয় মিলেছে, স্বামী আটক
হাতের চুড়ি দেখে মেয়েকে সনাক্ত করলেন বাবা, হত্যার দায় স্বীকার স্বামীর
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ গত ৩১ অক্টোবর জাফলং থেকে উদ্ধার করা হয়েছিলো অর্ধগলিত এক অজ্ঞাত নারীর মরদেহ। পুরো শরীর পচে যাওয়ায় মরদেহের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি সেসময়। ওই নারীর হাতে ছিলো কেবল একটি চুড়ি। সনাক্তকারী পরিচয় বলতে এইটুকুই। অবশেষে সেই চুড়ি দেখেই মেয়েকে সনাক্ত করলেন বাবা রফিক মিয়া। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই নারীর নাম পুতুল বেগম।
হাসপাতালে ওই নারীর কংকালের আলামত রেখে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবেই দাফন করা হল সিলেট নগরীর মানিক পীর (রহ.) গোরস্থানে। আর চুড়িটি রাখা ছিলো জৈন্তাপুর থানায়। আর থানায় রাখা চুড়ি দেখে পরিবারের লোকজন শনাক্ত করেন গৃহবধূ পুতুল বেগমকে। নিহত পুতুল বেগম সিলেট নগরীর মেজরটিলা স্কলারর্স হোম প্রিপারেটরি স্কুলের আয়া। একই ধরনের চুড়ি রয়েছে পুতুলের মায়ের হাতেও। পরিচয় জানার পর গত মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ আটক করে পুতুলের স্বামী জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে উমর ফারুক দুলনকে। দোলন স্ত্রী হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলেও জানায় পুলিশ।
দোলনের বরাত দিয়ে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ জানায়, ২০১১ সালে জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট গ্রামের মৃত হেলাল মিয়ার ছেলে উমর ফারুক দোলনের (৩৩) সাথে বিয়ে হয় বি-বাড়ীয়া জেলার নাছিরনগর থানার পান্দাউক গ্রামের মোঃ রফিক মিয়ার মেয়ে পুতুল বেগমের (২১)। গত ২ বছর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। পুতুল চলে আসে পিতার বর্তমান ঠিকানা সিলেট সদরের নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার বাসায়। পিতার কর্মস্থল স্কলার্স হোম একাডেমীর আয়া হিসাবে চাকরি নেয় পুতুল। আবার যোগাযোগ শুরু করে দোলন। কিছুদিন পূর্বে স্ত্রী পুতুলকে স্কলার্সহোমের কর্ণধান হাফিজ মজুমদারের মালিকানাধীন জাফলং ভ্যালী বোডিং স্কুলের নতুন অফিস দেখাতে নিয়ে যান স্বামী দোলন। সংরক্ষিত সেই এলাকায় স্ত্রী পুতুলকে হত্যা করে দোলন।
তিনি পুলিশকে জানান, গত ১৯ অক্টোবর স্ত্রী পুতুলকে মোবাইলে ফোন দিয়ে নিয়ে যান জৈন্তাপুর আলুরতল ব্লক ফ্যাক্টরিতে। ওই ফ্যক্টরিতে তিনি চাকরি করেন। সেখানে স্ত্রী আসার পরপরই তারা দুজন মিলে সাংসারিক কথাবার্তা বলেন। এরপর স্ত্রী পুতুলকে নিয়ে আলুরতল জঙ্গলের ভেতর যান। সেখানে তাদের দু’জনের কথাবার্তা হয়। একপর্যায়ে স্ত্রী পুতুলের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্ক রয়েছে কি না জানতে চান। স্ত্রী না বলার পর দুজনের মধ্যে এনিয়ে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে পুতুলকে পাথর দিয়ে মাথায় ৩/৪ টি আঘাত করলে সে মাটিতে পড়ে যায়। এরপর মরদেহ তার ফেলে দেন জঙ্গলের পাশে একটি খালে।
জানা গেছে, গত ১৯ আক্টোবর সিলেট কতোয়োলি থানায় একটি জিডি করেন পুতুলের বাবা নগরীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার রফিক মিয়া। জিডিতে তার মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি কংকাল পাওয়ার সংবাদ প্রকাশ হয়। এমনকি একটি চুড়ি পাওয়া গেছে বলে গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়।
এসব জানার পর মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় করা সাধারন ডায়েরির কপিসহ জৈন্তাপুর থানায় যান পুতুলের বাবা রফিক মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ছিল ছেলে বায়েজিদ। সেখানে প্রথমে তারা পুলিশের কাছে রাখা চুড়ি দেখতে পান। ওই চুড়ি দেখার পর পরই তারা নিশ্চিত হন এটি পুতুলের। একপর্যায়ে পুতুলের মায়ের হাতে থাকা চুড়ির সঙ্গে মিলে যায় গত ৩১ অক্টোবর জৈন্তাপুর জাফলং ভ্যালী স্কুল এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া কংকালের হাতে থাকা চুড়ির। আর এর সূত্র ধরেই আটক করা হয় পুতুলের স্বামী দুলনকে।
নিহতের ভাই বায়েজিদ জানান, কয়েকদিন আগে তার বোনকে চুড়িগুলো কিনে দিয়েছিলেন তার মা আনোয়ারা বেগম। আর চুড়ির সূত্র ধরেই তার নিখোঁজ বোনের সন্ধান মিলেছে বলে তিনি জানান। এ ঘটনায় তার মা বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন বলেও তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর থানার ওসি সফিউল কবির বলেন, যে কংকালটি উদ্ধার হয়েছিল সেটির রহস্য উদঘাটন হয়েছে। নিহত পুতুলের মায়ের কাছে রয়েছে একই ধরনের চুড়ি। মেয়েকে শখ করে চুড়ি কিনে দিয়েছিলেন মা আনোয়ার বেগম। আর তাদের কাছেও প্রথামিকভাবে পুতুলের স্বামী হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে তিনি জানান।