ফাঁসানো হচ্ছে আলোকচিত্রী ইদ্রিস আলীকে : তার ফেসবুক পেজে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি (ভিডিও)

Idris-Anantaসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার ঘটনায় সিলেট থেকে ইদ্রিছ আলী নামক ফটোসাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ইদ্রিস আলী ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দৈনিক সংবাদ-এ আলোকচিত্র পাঠাতেন। এছাড়া তিনি দৈনিক সবুজ সিলেট-এর ফটোসাংবাদিক। গ্রেফতারের পরদিন তাকে আদালতে নিয়ে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে ১৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, অনন্ত হত্যা মামলার তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও বিভিন্ন সোর্সের ভিত্তিতে সন্দিগ্ধ আসামি ইদ্রিছকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিআইডির বিশেষ সুপার (অর্গানাইজড ক্রাইম) মির্জা আবদুল্লাহেল বাকী বলেছেন, ইদ্রিছের তোলা কিছু ছবি ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সাংবাদিকের পরিবার দাবি করেছে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ব্লগার অনন্তকে গত ১২ মে সিলেটে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পর এর দায় স্বীকার করে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। আর সিআইডি গ্রেফতার করেছে একজন আলোকচিত্রী সাংবাদিককে। গোয়েন্দারা এমন এক ব্যক্তিকে সন্দেহ করছে যার কাছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোন অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তার তোলা কিছু ছবি গোয়েন্দাদের সন্দেহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া ইদ্রিস আলী দীর্ঘদিন থেকে কারাগারে। তার ফেসবুক আইডি, পাসওয়ার্ড সহ যাবতীর তথ্য সিআইডি’র কাছে। এখন তার ফেসবুক পেজে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। তাহলেকি সিআইডি ইদ্রিস আলীকে ফাসানোর জন্যেই ওইসব নোংরামি করে যাচ্ছে।
এরপর ক্রমান্নয়ে সিআইডি, র‍্যাব সহ সরকারের বিভিন্ন বাহিনী একের পর এক কথিত জঙ্গী গ্রেফতার করছে, তাদের মত করে দেশে ব্লগার হত্যা মামলাগুলোর সুরাহা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্লগার অনন্ত বুজয় হত্যা মামলার আসামী হিসেবে কানাইঘাট থেকে দুই সহোদরকে আটক করার পরও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ করমিশনারের প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকরা ইদ্রিস’র ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলা হয়, কোন তথ্য প্রমান না পেলে চার্জসীট প্রদানের সময় ইদ্রিস আলীকে বাদ দেয়া হবে। এদিকে গ্রেফতারকৃত দুই সহোদরের পিতা, ওলামালীগ নেতা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন তার দুই সহোদরকে ফাসানো হয়েছে। নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী আদায় করা হয়েছে। আমরা ধরে নিলাম ওলামালীগ নেতার বক্তব্য সঠিক নয়। কিন্তু র‍্যাব-সি আইডি কতৃক এত জংগী গ্রেফরার ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী গ্রহনের পরও ইদ্রিস আলীকে কেন কারাগারে রাখা হচ্ছে। কেন জামিন হচ্ছেনা ইদ্রিস আলীর। জজ আদালতে ইদ্রিস আলীর জামিন আবেদনে মাননীয় আদালত লিখেছেন, পুলিশ বলছে ইদ্রিস আলী জঙ্গী সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য, কিন্তু ইদ্রিস আলীর পক্ষ থেকে প্রদান করা ছবি ও কাগজাদি প্রমান করে ইদ্রিস আলী আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
আজ অবদি সিআইডি ইদ্রিস আলীর কোন ১৬৪ অথবা কোন ধরনের তথ্য প্রমান আদালতে দাখিল করতে পারে নাই। দেশের প্রথম সারির একটি দৈনিক ও সিলেটের প্রথম সারির একটি দৈনিকের আলোকচিত্রিকে এভাবে মিথ্যা মামলায় হয়রানির আসল উদ্দেশ্য আসলে সাংবাদকদের মনে ভীতি সঞ্চার করা। ব্লগার হত্যা মামলা সুরাহা করতে পুলিশ ব্যার্থ, এসব নিয়ে যাতে সাংবাদিকরা লাখালেখি না করে তাই তাদেরকে বিভ্রান্ত করতেই পুলিশের এমন নাটক।
একজন আলোকচিত্রী ঘটনাস্থলে ক্যামেরা নিয়ে উপস্থিত থাকলে সে তার ছবি তুলবেন এটাই স্বাভাবিক। ঢাকায় যখন ব্লগার অভিজিৎকে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় তখনও কিছু আলোকচিত্রী তার ছবি তুলেছিল। অভিজিৎ হত্যার ঘটনাস্থলে উপস্থিত আলোকচিত্রী কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালন করেই ক্ষান্ত হয়নি, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্যেও সর্বপ্রথম এগিয়ে গিয়েছিল। আমরা ভুলে যাইনি যে, সেদিন সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ থাকলেও তারা না পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে, না মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে। এসব পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার দায়ে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হলেও সিলেটে দায়িত্ব পালনের ফলেই একজন আলোকচিত্রীকে গ্রেফতার করা হলো। এর চেয়ে নিন্দনীয় আর কি হতে পারে। আমরা যে কথাটি বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে, কোন ফটোসাংবাদিক অভিজিৎ হত্যার ছবি তার ক্যামেরায় ধারণ করেছে মানে এই নয় যে, সে অভিজিৎ হত্যায় অংশ নিয়েছে। কেন রক্তাক্ত হুমায়ুন আজাদের ছবি তুলেছে মানে এই নয় যে, সে হামলায় অংশ নিয়েছে। কেউ অনন্ত হত্যার ছবি তুললেই তাকে গোয়েন্দারা সন্দেহ করে রিমান্ডে নিয়ে যাবে এটা যৌক্তিক নয়। হত্যার রহস্য উদঘাটনে কোন আলোকচিত্রীর ছবি কাজে লাগতে পারে। এক্ষেত্রে পুলিশ সেই আলোকচিত্রীর সহায়তা চাইতে পারে বা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, ইদ্রিছের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো পুলিশ অনুসরণ করেছে কিনা। নাকি অহরহভাবে যাকে যখন ইচ্ছে হলো তাকে তখন গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অনেক পুরনো যে, অনেক সাধারণ মানুষকে তারা জঙ্গি হিসেবে গ্রেফতার করে। এর পেছনে মূলত দুটি কারণ কাজ করে। প্রথমত, গ্রেফতার বাণিজ্য, দ্বিতীয়ত, তদন্তে কূলকিনারা না পেয়ে যেনতেন প্রকারে মামলার অগ্রগতি দেখানো। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের মামলায় দেখা গেছে, একেক সময় একেকজনকে পুলিশের সন্দেহ হচ্ছে আর একেকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমরা অনন্ত বিজয় হত্যাকা-ের বিচার চাই, বস্নগার হত্যার প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। এসব হত্যার ন্যায়বিচার করতে হলে প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে সাজা দিতে হবে। পুলিশের কাজ হচ্ছে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা। তদন্ত সুষ্ঠু না হলে, প্রকৃত অপরাধী গ্রেফতার না হলে ন্যায়বিচার বিঘি্নত হয়। অনন্ত হত্যা মামলায় ইদ্রিছকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে যেন কোন জোরপূর্বক এই মামলায় জড়ানো না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের কোন নাগরিক কোনভাবে পুলিশি হয়রানির শিকার হোক সেটি আমরা চাই না।