একটি হুইল চেয়ারের জন্য…..
দু’হাতের উপর ভর করে আর ভিক্ষা করতে চাননা কানাইঘাটের প্রতিবন্দী এতিম আলী
কানাইঘাট প্রতিনিধি : “দুই হাতই আমার একমাত্র অবলম্বন। যে হাতের উপর ভর করে আছে আমাদের চার সদস্যের পরিবার সেই হাতদু‘টি এখন আর আগের মতো চলেনা। একটু যায়গা যেতেই যেন অবস হয়ে যায়। মানুষের দরজায় যেতে না পারলে কে ভিক্ষা দেবে ? অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়ে দু’টিকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবো কিন্তু তাও সম্ভব হলোনা।”
এভাবেই অসহায় কন্ঠে কথাগুলো বলেছেন কানাইঘাট উপজেলার ২নং লক্ষিপ্রসাদ পশ্চিম ইউপির নিয়ালপুর গ্রামের মৃত সিকন্দর আলীর পুত্র প্রতিবন্দী এতিম আলী (৬৫)। জন্ম থেকেই দু‘টি পা নেই। অভাবের সংসার তা ও আবার ছোট বেলাতেই পিতা চলে যান না ফেরার দেশে। সেই থেকেই মা সুনাবান বিবিকে নিয়ে শুরু হয় এতিম আলীর ছোট সংসার। স্বামীর বসৎ ভিটা না থাকায় প্রতিবন্দী ছেলেকে নিয়ে সুনাবান বিবি উঠেন তার ভাই একই গ্রামের রহমত আলীর বাড়ীতে। কিন্তু এতেই কপাল পুড়ে এতিম আলীর। কিছুদিন যেতেই ভাগনাকে রেখে বোনকে অন্যত্র বিয়ে দেন রহমত আলী। এক পর্যায়ে জীবন রক্ষার তাগিদে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেন এতিম আলী। আজও সেই আগের মত দু’মুঠো ভাতের জন্য রাত পোহালেই দুই হাতের উপর ভর করে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভিক্ষা করতে হয় তাকে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্ত্রী আয়শা খাতুন (৩৫) মেয়ে সুমানা বেগম (৬) ও রুবি বেগম (৪)।
এতিম আলীর বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, সাড়ে ৩ শতকের একটি ভিটার উপর বাঁশ বেতের তৈরী অনেক দিনের পুরনো একটি ঘর রয়েছে। এই ঘরের মধ্যেই স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে এতিম আলী থাকেন। প্রতিবন্দী এতিম আলী বলেন, ২/১ টাকার জন্য দুই হাতের উপর ভর করে প্রতিদিন মানুষের কাছে আমাকে হাত পাততে হয়। এখন আর আগের মতো হাতদুটিও চলেনা। মানুষের দরজায় যেতে না পারলে কে ভিক্ষা দেবে ? অনেকে আমার কষ্ট দেখে সাহায্য করেন আবার কেউ দুর দুর করে তাড়িয়েও দেন। সারা জীবন কেবল ভিক্ষাই করে যাচ্ছি। নিজেকে আজ নিজের কাছে বড় বুঝা মনে হচ্ছে। তাই একটি হুইল চেয়ারের জন্য সবার ধারে ধারে ঘুরছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, মৃত্যুর আগে যেন আমার ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। আমি আর ভিক্ষা করতে চাইনা।