ন্যাশনাল গ্রীড লাইন নির্মাণে মন্তরগতি : জন দুর্ভোগ চরমে, আন্দোলনের প্রস্তুতি

গোলাপগঞ্জ সহ পাঁচ উপজেলার গ্রাহকদের ভোগান্তি

427852ADBকে.এম আব্দুল্লাহ, গোলাপগঞ্জ থেকে ঃ গোলাপগঞ্জসহ পূর্ব সিলেটের পাঁচ উপজেলার লক্ষ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভোগান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনদুর্ভোগ লাগবে সরকারের উপরের মহল থেকে অর্থ বরাদ্দ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হলেও অধিনস্থদের খাম খেয়ালী পনার কারণে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে না। বিশেষ করে পূর্ব সিলেটের পাঁচ উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে চারখাইয়ে তিনশত কোটি টাকা ব্যয়ে ন্যাশনাল গ্রীড লাইন নির্মানে একটি বড় ধরণের উদ্যোগ নেয়া হলে অজানা কারণে গ্রীডের কাজে কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। মন্তর গতিতে চলছে গ্রীড লাইনের কাজ। এভাবে কাজ চলতে থাকলে নির্ধারিত সময়ে শেষ করাতো দূরের কথা আগামী এক যুগেও তা শেষ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জসহ ৩ উপজেলায় ইতি মধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকদের উদ্যোগে একাধিক সভা-সমাবেশ ও মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে প্রাপ্ত সংবাদে জানাযায়।
উল্লেখ্য যে, সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও বড়লেখার উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করণের লক্ষে প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী নুর”ল ইসলাম নাহিদের প্রচেষ্টায় তিনশ কোটি টাকা ব্যায়ে চারখাইয়ে ন্যাশনাল গ্রীড লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিগত ক’বছর ধরে গোলাপগঞ্জ সহ পূর্ব সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় লোড শেডিং আশংকা জনক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। গ্রীষ্মের মৌসুমে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই একাধিকবার লোড শেডিংয়ের কবলে জনগণকে পড়তে হয়। এছাড়া দিনের বেলাও বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ স্বাভাবিক থাকে না। শুধু লোড শেডিং এর জন্য বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহে তারের ক্যাপাসিটি না থাকার বিষয়টি অন্যতম কারণ বলে সংশিষ্ট সূত্রে জানাযায়।
আজ থেকে প্রায় ৪২ বছর পূর্বে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর সহ আশ পাশের কিছু এলাকায় সিলেট থেকে পিডিবি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলায় একই লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিগত ২০ বছর পূর্বে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ঐ সব উপজেলায় একই লাইন দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে থাকলে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে নির্মিত লাইন দিয়ে যে পরিমান বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো এখন তার ৭০/৭৫ গুন বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলেও সেই পুরনো লাইন নতুন করে নির্মাণ না করায় প্রায়ই অভার লোডে তার অত্যাধিক তাপে জ্বলে মাটিতে পড়ে যায়। বিগত ৫/৬ বছর ধরে এমন সমস্যা গোলাপগঞ্জ তথা পূর্ব সিলেটের মানুষের জন্য বড় ধরনের যন্ত্রনার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জন দূর্ভোগ লাগবে ও বিদ্যুতের উন্নয়ন কল্পে চারখাইয়ে পূর্ব সিলেটে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বড় ধরনের একটি উদ্যোগ নেয়া হয়। কুমার গাঁও থেকে সিলেট নগরীর পাশ দিয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাইয়ে ন্যাশনাল গ্রীড লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিলে তাতে তিনশ কোটি টাকা সরকার বরাদ্দ করে। যথা সময়ে ভূমি অধিগ্রহণ করে জমির মূল্য পরিশোধ করা হলেও একটি অশুভ চক্র তাদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় ন্যাশনাল গ্রীড লাইন নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পূর্ব সিলেটের মানুষ স্বপ্ন দেখে ছিল চারখাইয়ে ন্যাশনাল গ্রীড লাইন হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিনিয়োগে ন্যাশনাল গ্রীড লাইনকে কেন্দ্র করে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। আজ অজানা কারণে ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের কাজ বন্ধ হওয়ায় পূর্ব সিলেটের লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিগত যে কোন সময়ের তুলনায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কারণ লাইনের উন্নয়ন না করে সর্বত্র বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় পূর্ব সিলেটে একই সময়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করতে গিয়ে প্রায়ই অভার লোডের কারণে লাইনে আগুন ধরে তার ছিড়ে মাটিতে পড়ে। অতীতে দেখা গেছে তা মেরামত করতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগেছে। অনেক সময় লাইন স্বাভাবিক করতে গোলাপগঞ্জ সহ পূর্ব সিলেটের লক্ষ লক্ষ মানুষ ১২/১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ একদিকে চার দশক পূর্বের স্থাপিত লাইন সংস্কার না করে জোড়া তালি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, অন্যদিকে ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের কাজে অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়ায় সকল মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ন্যাশনাল গ্রীড লাইন প্রজেক্ট ডাইরেক্টর দেবাশিষ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সঠিক কোন উত্তর না দিয়ে বলেন আমরা কাজ করার লক্ষে প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রজেক্টের কাজে একটি বিশেষ মহল কেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে এর কোন জবাব না দিয়ে কৌশলী বক্তব্য দেয়ার চেষ্ঠা করেন। জানা যায় ভারতীয় কোম্পানী এবিবি চারখাই ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের কাজ ছাড়াও বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র নির্মাণের ঠিকাদারী পেয়েছে। সুইডেনে তাদের হেড অফিস থাকলেও ঢাকার লিয়াজো অফিস থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুতের বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ তারা করে যাচ্ছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একাধিক বোর্ড সভায় নির্বাচিত পরিচালকরা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেছেন বলে একটি সূত্র জানায়। পরিচালকদের বক্তব্য হচ্ছে সরকার সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়নে এত বড় একটি প্রকল্প হাতে নিয়ে বরাদ্দ দেয়ার পরও নানা অজুহাতে ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের নির্মাণ কাজে দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের উপর মানুষকে ক্ষোদ্ধ করে তুলবে। এদিকে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ/ প্রতিনিধিদের উপস্থিতি সম্প্রতি গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিদ্যুতের ভোগান্তি সহ বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের কাজ দ্রুত সম্পন্নের জন্য সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়। এ সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে ঐ কমিটির মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী নুর”ল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজারের এমপি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কে গোলাপগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে অবহিত করা হলে, গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজারের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করণের লক্ষে সব ধরণের পদক্ষেপ নিতে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ১ এর জি.এম. কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানাযায়। পূর্ব সিলেটের জনগণকে বিদ্যুতের ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে হলে ৩৩ কেভিএ লাইনের জোড়াতালি বন্ধ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত ন্যাশনাল গ্রীড লাইনের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করা খুবই প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। আগামী গ্রীস্মের পূর্বে গোলাপগঞ্জ তথা পূর্ব সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি না হলে ভোগান্তি আরও বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এদিকে গোলাপগঞ্জ বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ইতিমধ্যে বিশিষ্ট নাগরিকদের উদ্যোগে একাধিক সভা ও মত বিনিময় সভা অনুষ্টিত হয়েছে। ঐসব বিষয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার লক্ষে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানাযায়।