উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা : সিলেট হয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত জুলাই মাস থেকে সিলেটের পাঁচটি স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। প্রায় ৩ মাস ধরে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই বর্গফুট প্রতি চুনাপাথরের দাম বেড়েছে ৩৩ টাকা।
সিলেট ভ্যাট ও কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেটের ভোলাগঞ্জ, তামাবিল এবং সুনামগঞ্জের ছাতক, বড়ছড়া ও চেলা শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে চুনাপাথর আমদানি হয়ে থাকে। এই পাঁচ শুল্কস্টেশন দিয়েই দেশে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চুনাপাথর আমদানি করা হয়। গত জুলাই মাস থেকে এই শুল্কস্টেশনগুলো দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সরকারও রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশ অধিদফতরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার উচ্চ আদালত গত ৩০ জুলাই চুনাপাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে এর আগে থেকেই, এপ্রিলের শেষের দিকেই বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চুনাপাথর আমদানি। ফলে দেশে চুনাপাথরের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এতে বাড়তে শুরু করেছে দাম।
চুনাপাথর আমদানিকারকদের কাছ থেকে জানা যায়, কেবলমাত্র সিলেটের তামাবিল ও ভোলাগঞ্জ শুল্কস্টেশন দিয়েই প্রতিবছর ২০ লাখ টন চুনাপাথর আমদানি করা হয়। কিন্তু এ দুই শুল্কস্টেশন ও অন্য ৩টি শুল্কস্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সম্পৃক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় সিমেন্ট কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে সিলেটের পাথর ভাঙার কলগুলোতে ব্যবসায়িক মন্দা দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ চুনাপাথর আমদানি করা হয় ভারত থেকে। কিন্তু সে দেশ থেকে আমদানি বন্ধ থাকায় দেশীয় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই চুনাপাথরের দাম বর্গফুট প্রতি বেড়েছে ৩৩ টাকা।
সিলেটের চুনাপাথর ব্যবসায়ী আবদুন নুর জানান, বর্তমানে প্রতি ফুট চুনাপাথর ১১১-১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাস দুই আগেও এর দাম ছিল ৮১-৮২ টাকা। আমদানি বন্ধ থাকায় চুনাপাথরের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দাম বেড়েছে। আমদানি শুরু না হলে দাম আরো বাড়বে বলে জানান তিনি।
সিলেটের তামাবিল শুল্কস্টেশনের তত্তাবধায়ক মোস্তাক আহমেদ নোমানী বলেন, চুনাপাথর আমদানি বন্ধের কারণ সম্পর্কে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণেই বন্ধ রয়েছে।
সিলেট স্টোন ক্রাশার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের হোসেন জানান, ভারতীয় আদালত চুনাপাথর উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তবে এর স্থগিতাদেশ চেয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীরা আপিল করেছেন।
তামাবিল পাথর, চুনাপাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু বলেন, ভারত থেকে চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে এখানকার আমদানিকারক, সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, বিভিন্ন ক্রাশার মেশিন ও পরিবহন খাতসহ সবাই লোকসানে পড়েছেন।