কমলগঞ্জে জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরীর নতুন উদ্ভাবন
হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম ধানের সফল ফলন
কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার) বিশ্বজিৎ রায়ঃ অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী ধান গবেষক বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরী দেশীয় নতুন উদ্ভাবন হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম নামিয় ৪ ধরনের ধানের উদ্ভাবন করে সফল ফলন পেয়েছেন। আমন মৌসুমে এ ৪ জাতের ধান বীজতলা তৈরী থেকে রোপন করে আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি ধান মাঠে পেকে এই আশ্বিনেই ফসল ঘরে তুলা হয়। বুধবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর স্যুইস ভেলী রিসোর্টে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে উদ্ভাবিত নতুন ৪ জাতের ধানের সফল ফলন পাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরী।
জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরী বলেন, তিনি বিগত ৫ বছর ধরে গবেষনা করে দেশীয় ধান থেকে ব্রিডিং করে ৪ জাতের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো হচ্ছে হাফিজা ১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম ধান। প্রদর্শণী এই ৪ জাতের ধান উদ্ভাবন করে গত জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পৃথকভাবে ৪টি জাতের বীজতলা তৈরী করা হয়। বীজতলা থেকে শুরু করে মাত্র ১০৮ দিনের মধ্যে মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করা হয়। যেখানে একই ব্রি-২৯ ধান ১৩৫ থেকে ১৪০ দিন সময় লাগে। আমন মৌসুমে উদ্ভাবিত ৪ জাতের ধান চাষাবাদ করায় সেখানে বাড়তি কোন সেচ দিতে হয়নি। তবে বছরের অন্যান্য সময়েও উদ্ভাবিত এই ৪ জাতের ধান চাষাবাদ করা যাবে বলেও তিনি জানান। আমন মৌসুমে এ ধান চাষ করে ১ মাস আগেই ফসল কাটতে শুরু করেছেন। তাতেই আশপাশের কৃষকরা তারাও আগামীতে এই ৪ জাতের ধান চাষাবাদে আগ্রহী বলে যোগাযোগ করছে। ড: আবেদ চৌধুরী আরও বলেন, হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম উৎপাদিত ধান কাটার সময় একটু সতর্কভাবে কাঠলে এই মাঠ থেকে ৪৫ দিন পর ২য় বার ফসল সংগ্রহ করা যাবে। তার উদ্ভাবিত ৪ জাতের ধান সম্পর্কে ইতিমধ্যেই তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। প্রাথমিকভাবে আবার ফসল থেকে তিনি বীজ সংগ্রহ করবেন। আর আগামীতে যাতে তার এলাকার আগ্রহী কৃষকরা এসব ধান চাষাবাদ করে সফলতা পায় সে জন্য তিনি প্রয়োজনে কৃষকদের বীজ প্রদানসহ সার্বিক সহায়তা করবেন। মতবিনিময় কালে জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরী ও মাঠের চাষাবাদকালে তদারককারী তাঁর কর্মচারী মজিবর রহমান উদ্ভাবিত ৪ জাতের নতুন ধান সম্পর্কে পৃথকভাবে ব্যাখ্যা দেন।
হাফিজা ১ : ২১ জুন ২০১৫ থেকে হাফিজা ধানের বীজতলা তৈরী করে ৩০ দিন পর চারা উত্তোলন করে মূল প্রদর্শণী মাঠে রোপন করা হয়েছে। ধান রোপনের পর এক কিয়ার (৩০ শতক) জমিতে ১বার মাত্র ১৫ কেজি পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। কীট আক্রমণ প্রতিরোধে হালকাভাবে ১বার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। হাফিজা ১ ধান ২ মাস ২২ দিন পর ১৫ অক্টোবর (৩০ আশ্বিস) কাটা শুরু হয়। এ জাতের ধান গাছ উচ্চতায় ৮০ সে:মি:। এক কিয়ারে ধান উৎপাদন হয়েছে ১২ মন।
জালালিয়া : ২৬ জুন ২০১৫ জালালিয়া ধানের বীজতলা তৈরী করা হয়। ২৬ দিন পর বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে ৩১ জুলাই প্রদর্শণী মাঠে রোপন করা হয়েছে। হাফিজা ১ ধান ক্ষেতের মত জালালিয়া ধান ক্ষেতেও ১বার এক কিয়ার পরিমাণের জমিতে ১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। কীট দমনেও হালকা কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। দুই মাস ২০ দিন পর ধান কাটা শুরু হয়। জালালিয়া ধান গাছের উচ্চতা ৭৫ সে:মি:। এক কিয়ার পরিমাণ জমিতে জালালিয়া ধান উৎপাদন হয়েছে ১৪ মন।
তানহা : জালালিয়ার মত তানহা ধানের বীজতলা শুরু করা হয় ২৬ জুন ২০১৫। হালকা কীটনাশক ও একবার এক কিয়ারের হিসাবে ১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। এ জাতের ধানে পাখির আক্রমণ বেশী হয় বলে এক কিয়ার পরিমাণ জমিতে ১০ মন ধান পাওয়া যায়। এ ধান গাছের উচ্চতা ১ মি: ১০ সে:মি:।
ডুম : জালালিয়া ও তানহার মত ডুম ধানের বীজতলা শুরু হয় ২৬ জুন ২০১৫। ২৬ দিন পর ৩১ জুলাই মূল মাঠে ডুম জাতের ধানের চারা রোপন করা হয়। এখানেও হাফিজা ১, তানহা ও জালালিয়া ধানের মত একবার কীট নাশক প্রয়োগ ও ১বার কিয়ার প্রতি ১৫ কেজি পরিমাণ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। এ ধান গাছের উচ্চতা ১ মি:। এ জাতের ধানেও পাখির আক্রমণ থাকে বলে কিয়ার প্রতি ফসল পাওয়া যায় ১১ মন করে। ডুম ধানটি আকারে অনেকটা বাঁশমতি ধানের মত।
মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের নানামুখী প্রশ্নের জবাবে ধানের গবেষক বিশিষ্ট জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, তিনি কিভাবে দেশীয় ধান সংরক্ষণ করা যায়, বিলুপ্তপ্রায় ধান খোঁজে বের করা ও দেশীয় ধান থেকে কোন প্রকার হাইব্রিড প্রদ্ধতিতে না গিয়ে ব্রিডিং করে নতুন ধান উদ্ভাবন করা যায় সেই চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অগ্রহায়নে নতুন ফসল ঘরে তুলে নবান্ন করা হয়। আর অগ্রহায়নের আগে দেশের বেশীর ভাগ কৃষকের ঘরে তেমন খাদ্য থাকে না। তার উদ্ভাবিত ধান আগে ঘরে উঠবে খাদ্য সংকট কাটাতে সাহায্য করবে আর আশ্বি^নে নবান্ন করতে পারবে কৃষক।
কৃষি কর্মকর্তার কথা : জিন বিজ্ঞানী ড: আবেদ চৌধুরীর নতুন ৪ ধরনের ধান উদ্ভাবনে সন্তোষ প্রকাশ করে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন বলেন, তিনি উদ্ভাবিত এই ৪ জাতের ধান দেখেছেন। এটি দেশের জন্য একটি সুখবর। তবে তিনি উদ্ভাবিত ধানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি বিধি মোতাবেক গ্রহন করা উচিত। তাঁর এই ৪ জাতের ধান কৃষক, সমাজ ও দেশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।