বাংলাদেশ-মেক্সিকো সম্পর্ক জোরদারে সচেষ্ট রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : মেক্সিকোর সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৪০ বছর পূর্তি হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে। সেই সূত্র ধরে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে গেল আগস্টে মেক্সিকো সিটি সফরে আসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। সফরকালে তিনি মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেয়া ছাড়াও মেক্সিকান ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে দেশটিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন পেশাদার কূটনীতিক সুপ্রদীপ চাকমা। মেক্সিকো সিটিতে যোগ দেয়ার আগে টানা ৫ বছর ভিয়েতনামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন তিনি।
১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া সুদীর্ঘ কর্মজীবনে সুপ্রদীপ চাকমা কলম্বো, রাবাত, আনকারা এবং ব্রাসেলসের বাংলাদেশ মিশনেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা জানাচ্ছিলেন মেক্সিকো-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রাসঙ্গিক ও সমসাময়িক বিষয়াদি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সফরের সময় আগস্ট মাসে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকের সুফল হিসেবে এখন থেকে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গভীরতর হওয়া ছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা আরো জানান, “মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেইঁয়া নিয়েতো বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে আান্তোনিও মিয়েদের দপ্তর পরিবর্তন করে সম্প্রতি তাঁকে মেক্সিকোর প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন সাবেক পর্যটন মন্ত্রী ক্লাউদিয়া রুইস মাসিউ সালিনাজকে। এখানকার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনে প্রেসিডেন্ট এনরিকে পেঁইয়া নিয়েতোর সম্ভাব্য উত্তরসূরী হচ্ছেন সদ্যসাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে আান্তোনিও মিয়েদে। গুরুত্বপূর্ন এই পটপরিবর্তন তাই বাংলাদেশের আগামীর জন্য অতীব তাৎপর্যবহ”।
রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আন্তরিকতায় ২০১২ সালের জুলাই মাসে মেক্সিকোতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ দূতাবাস। মেক্সিকো সিটিতে স্থাপিত বাংলাদেশ দূতাবাস হল ল্যাটিন আমেরিকার স্প্যানিশ ভাষাভাষী দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের একমাত্র দূতাবাস। মেক্সিকো ছাড়াও ল্যাটিন ও মধ্য-আমেরিকার বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে এখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে চলেছে”। উল্লেখ্য, প্রায় ১২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্পেনিশ ভাষাভাষী দেশ মেক্সিকোতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন সিনিয়র কূটনীতিক এম ফজলুল করিম, যিনি বর্তমানে চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন।
এদিকে বাংলাদেশ-মেক্সিকো দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যিক সম্পর্কের সর্বশেষ আপডেট নিয়েও রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। রাষ্ট্রদূত জানান, “এক দশক আগে দুই দেশের মোট বানিজ্য ছিল যেখানে মাত্র বিশ থেকে ত্রিশ মিলিয়ন ডলার, বর্তমানে তা ২শ’ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ মেক্সিকোতে প্রায় ২০৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পন্য রপ্তানি করে। একই বছর মেক্সিকো থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ পন্য। বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস, পাট ও চামড়াজাত সামগ্রী মেক্সিকোতে রপ্তানি হয়, অতি সম্প্রতি শুরু হয়েছে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিও। মেক্সিকো থেকে রাসায়নিক সামগ্রী বাংলাদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে”। ঢাকায় আগামী দিনে মেক্সিকান দূতাবাস স্থাপন সহ বাংলাদেশ-মেক্সিকো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা।