সেই তিন শিশুর বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত আজ
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের আলোচিত শিশু- আছিয়া, সাদিয়া ও ইরহাম কার কাছে থাকবে, এই ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত দেবেন আদালত। এখন তারা তাদের ফুফুর হেফাজতে রয়েছে।
মা মঙ্গলবার তাদেরকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করলে সৎমা ও পিতার বিরুদ্ধে শিশুরা তাদের জবানবন্দি প্রদান করে। আদালতে তারা বলে, ‘আম্মু (সৎমা) আমাদেরকে শুধু মারে। নিয়মিত খেতেও দেয় না। আব্বুকে এসব বলেও লাভ নেই। আব্বু আমাদের কথা বিশ্বাস করেন না। তাই আমরা আব্বু আম্মুর কাছে যেতে চাই না’।
এরপর তিনদিনের জন্যে ফুফু জ্যোৎস্না বেগমের হেফাজতে শিশুদের দেন আদালত। বৃহস্পতিবার তিন শিশুকে পুনরায় আদালতে হাজির ও তাদের কাউন্সিলিং করতে প্রবেশন অফিসারকে নির্দেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ৭ অক্টোবর নগরীর কাজলশাহ এলাকার ৪৩/১নং বাসা থেকে নিখোঁজ হয় আছিয়া বেগম (১২), ছাদিয়া বেগম (৮) এবং ইরহাম (৩) নামের তিন শিশু। এ ব্যাপারে পরদিন তাদের পিতা প্রাণ আরএফএল কোম্পানীর কর্মচারী দুলাল আহমদ কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেন। তখন তিন শিশু নিখোঁজের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার ক্লু উদ্ধার করতে পুলিশ শিশুদের পিতা ও সৎমাকে থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদে শিশুদের উদ্ধারে কোনো ক্লু মেলেনি। ১২ অক্টোবর সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থেকে তাদের উদ্ধার করে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এরপরই সৎ মায়ের নির্যাতনের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে শিশুদের পিতা দুলাল সন্তানদের নিতে আসলে তার সাথে যেতে শিশুদের আপত্তি জানায়।
সোমবার রাতে তাদের রাখা হয় কোতোয়ালী থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে থেকে মঙ্গলবার শিশুদেরকে হাজির করা হয় আদালতে।
সিলেট পৌঁছে শিশুরা জানায়, তারা সৎ মা সেলিনার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ট্রেনে ঢাকায় চলে যায়। পরে সহৃদয় এক বক্তির মাধ্যমে দোয়ারাবাজারে ফিরে আসে। ঐ ব্যক্তি তাদেরকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেন। চেয়ারম্যান তাদেরকে দোয়ারা থানায় সোপর্দ করলে খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
তিন শিশুর এইভাবে একা ঢাকায় যাওয়া এবং সেখান থেকে সিলেটে না ফিরে দোয়ারাবাজারে ফেরা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
শিশুদের ফুফু জ্যোৎস্না বেগম জানান, মঙ্গলবার আদালত আছিয়া ও ছাদিয়ার বক্তব্য শুনে শিশুদেরকে তার জিম্মায় দিয়েছেন। ইরহাম খুব ছোট হওয়ায় তার কোন বক্তব্য নেয়া হয় নি।
জানা গেছে, ঢাকা জেলার লৌহজং থানার বিক্রমপুর গ্রামের দুলাল আহমদ প্রথমে বিয়ে করেন চাঁদপুর জেলার রওশন আরাকে। তাদের প্রথম সন্তান আছিয়ার ৮ মাস বয়সে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে কন্যা সন্তান আছিয়াকে নিজের কাছে রেখে স্ত্রী রওশন আরাকে তালাক দেন দুলাল আহমদ। এরপর বিয়ে করেন হবিগঞ্জের ইমরানা বেগমকে।
ইমরানার গর্ভে জন্ম নেয় ছাদিয়া ও ইরহাম। ইরহামের বয়স ৭-৮ মাসের সময় এই দু’শিশুকেও নিজের কাছে রেখেই তালাক দেন ইমরানাকে। এরপর বিয়ে করেন নির্যাতনকারী হিসেবে অভিযুক্ত বর্তমান স্ত্রী পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা সেলিনাকে। সেলিনার নির্যাতনের কারণেই কাউকে না বলে তারা ঘর ছেড়ে পালিয়েছিল বলে জানিয়েছে শিশুরা।
জ্যোৎস্না বেগম জানিয়েছেন, তার ভাইর দুলাল আহমদের প্রথম স্ত্রীর পুনরায় বিয়ে হয়েছে সুনামগঞ্জে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী নগরীর খাসদবির এলাকার এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার তমির হোসেন চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার আদালত শিশুদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। এর আগ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে ফুফুর হেফাজতে থাকবে।