দূর্ভোগের জনপদ গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি : বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দি যেন দূর্ভোগের জনপদ। বৃহত্তম পাথর কোয়ারী ও সম্প্রতি পরিচিতি পাওয়া পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দি এলাকার অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম বর্ষায় নাও হেমন্তে পাও। যাতায়তের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের জনসাধারণ ও পাথর কোয়ারীতে কর্মরত শ্রমিকদের পাশাপাশি নতুন করে দূর্ভোগে সামীল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দিতে আগত পর্যটকেরা। হাদার পাড় বাজার থেকে বিছনাকান্দি পর্যন্ত সাড়ে ৪ কিলোমিটার দুরত্বের এ পথ পাড়ি দিতে বর্ষায় একমাত্র ভরসা নৌকা। আর হেমন্তে যেতে হয় পায়ে হেটে। এ দূর্ভোগের যেন শেষ নেই। সম্প্রতি স্থানীয় গণ মাধ্যম কর্মীদের বদৌলতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ পরিচিতি পেয়েছে বিছনাকান্দি। প্রায় বছর দুই যাবত পরিচিতি পাওয়া এ পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিনই ভিড় করছেন পর্যটক। বিশেষ করে ঈদ পরবর্তী দিন গুলোতে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে এই পর্যটন কেন্দ্র। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে বিকাশ ঘটছে না বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রের।
ওপারে ভারতের পাহাড়ে সবুজের সমারোহ। এ পারে বহমান নীল জলরাশি। সীমান্ত রেখা অতিক্রম করে ওপারের পাহাড় থেকে নেমে আসছে স্বচ্ছ জল। সেই জল পাথরের গা ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়ছে পিয়াইন নদীতে। পাহাড়, পাথর আর সুনীল জলের এই মিলন ঘটেছে সিলেটের সীমান্ত জনপদ গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দিতে। প্রকৃতির এ অপার সৌন্দর্যই বদলে দিতে পারে অবহেলিত সীমান্ত জনপদ গোয়ইনঘাটের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। একই সাথে সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় যোগ হবে নতুন মাত্রা।
বন্ধুদের সাথে ঢাকা থেকে বিছনাকান্দি বেড়াতে আসা পর্যটক লাভলু সিদ্দিকী জানান অনেক সুন্দর একটা যায়গা। এখানে আসার পর যে কারো শত ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত মন নিমিষেই জুড়িয়ে যাবে। তবে এই পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়তের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন। কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা গেলে নতুন এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতিদিন নামবে পর্যটকের ঢল নামবে বলে তিনি দাবি করেন।
বিছনাকান্দি আগত পর্যটকের পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে যাতায়তের ক্ষেত্রে দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন এই অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। হাদারপাড় বাজারের উত্তর পাশে সীমান্তবর্তী বিছনাকান্দি, কুলুম ছড়ার পাড়, উপরগ্রাম, নতুন ভাঙ্গা, বগাইয়া, বগাইয়া হাওড়, বগাইয়া মুসিলম পাড়া, দারিখেল, ভিতরগুল, দমদমা ও বাদেবাসা গ্রামের প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষের বসবাস এই এলাকায়। দূর্ভোগের যেন শেষ নেই এই এলাকার স্কুল, কলেজ পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের। সবচেয়ে বড় ভোগান্তি পোহাতে হয় এই এলাকার কোন রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার সময়। রাস্তাঘাট না থাকায় কোন কোন সময় মূমুর্ষ রোগী পথিমধ্যেই মৃত্যু বরণ করেন। সবকিছু মিলিয়ে যাতায়তের ক্ষেত্রে এই এলাকা দূর্ভোগের জনপদ নামে পরিচিত।
বগাইয়া গ্রামের হারুণ অর রশিদ জানান অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রায় দুই যুগ ধরে এই এলাকার ব্রীজ, কালভার্ট ও ভাঙ্গা রাস্তাঘাটের সরকারি ভাবে কোন মেরামত কাজ হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যেকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একাধিকবার অবহিত করার পরও কোন কাজ হচ্ছে না।
এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান হাদারপাড় থেকে বিছনাকান্দি হয়ে দমদমা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তা হচ্ছে এলজিইডি’র । তাই এলজিইডি কর্মকর্তাদের কাছে দীর্ঘদিন যাবত তাগিদ দেওয়ার পরও তারা এ বিষয়ে তেমন কর্ণপাত করছেননা। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য একাধিকবার ধরনা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন বেহাল দশার কারণে যাতায়তের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন অত্রাঞ্চলের সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, পর্যটক ও স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।