মাধবপুরের ক্ষতিগ্রস্থ দুটি রাবার ড্যাম পরির্দশনে এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের বিশেষ প্রতিনিধি দল

দ্রুতই সংস্কারের আশ্বাস প্রতিনিধি দলের

madhabpur pic 3-10-15 1হামিদুর রহমান,মাধবপুর থেকে: হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের মহব্বত পুর ও বহরা ইউনিয়নের বহরা নামক স্থানের সোনাই নদীর উপর ক্ষতিগ্রস্থ ও বিধ্বস্থ দুটি রাবার ড্যাম পরিদর্শন করেছেন এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের পিডি- এক্সজেঞ্জ খলিফা আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের বিশেষ একটি প্রতিনিধি দল । প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন টিম লিডার একরামুল রেজা,এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র ডিজাইন বিশেষজ্ঞ আমিনুল হক শাহ, ডিজাইন বিশেষজ্ঞ আব্দুল মালেক,হবিগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকির সিকান্দার,মাধবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম ও সকল উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীবৃন্দ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি রহম আলী,সোনাই নদী রাবার ড্যাম সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন মনির,ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজহার উদ্দিন ভূইয়া,উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অধের্ন্দু দেব অসিত, সোনাই নদী রাবার ড্যাম সমবায় সমিতির সহ সভাপতি আবু তালেব,সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান প্রমুখ। প্রতিনিধি দল দ্রুতই রাবার ড্যাম দুটি আশ্বাস প্রদান করেন। সূত্রমতে জানা যায়, মাধবপুর উপজেলার সোনাই নদীতে ৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত দুটি রাবার ড্যাম বিধ্বস্থ হয়ে পড়েছে। এতে প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে বোরো ধান ও শাকসবজি চাষ হচ্ছেনা। উপকার ভোগী কৃষকরা বিধ্বস্থ ড্যাম দুটি মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও দু’বছরে তা মেরামত না হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
madhabpur pic 3-10-15 2মাধবপুর উপজেলার সোনাইনদীর চৌমুহনী ইউনিয়নের মহব্বতপুর নামকস্থানে কৃষি মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে এলজিইডি ২০০০- ২০০১ অর্থ বছরে ৪৫ মিটার দীর্ঘ একটি রাবার ড্যাম নির্মান করে। এতে ব্যয় হয় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০০২- ২০০৩ অর্থ বছরে একই নদীর বহরা ইউনিয়নের বহরা নামকস্থানে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮ মিটার দীর্ঘ আরেকটি রাবার ড্যাম নির্মান করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে চৌমুহনী , বহরা ও ধর্মঘর ইউনিয়নে বোরো ধান ও শাক সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। রাবার ড্যাম দুটি বিধ্বস্থ হয়ে যাওয়ায় প্রায় আড়াই হাজার একর (এক হাজার হেক্টর) জমিতে বোরো ও সবজি চাষ হচ্ছেনা । প্রায় ১০/১১ বছর ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক সহজ সেচের মাধ্যমে ধান ও সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। এখানকার উৎপাদিত ফসল যেমন স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে তেমনি উৎপাদিত টমেটো, তরমুজ, লাউ,করলা,জিঙ্গা,বাধাঁ কপি,ফুল কপি, শীম সহ নানা জাতীয় সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হতো। কিন্তু রাবার ড্যামের অবকাঠামোর পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় রাবার ড্যামের পাটাতন থেকে মাটি সরে যায়। ফলে গত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী চৌমুহনী রাবার ড্যামটির দেয়াল ও পাঠাতন ধ্বসে পড়ে। একই কারনে বহরা রাবার ড্যামটিও মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাবার ড্যাম দুটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ফলে ব্যবহার অন-উপযোগী হয়ে পড়েছে। বর্তমান শুস্ক মৌসুমে রাবার ড্যামের একদিকে পানি থাকলেও অপরদিকে বালু জমে নদীর স্বাভাবিক চিত্র পাল্টে গেছে। পানি শূন্য মাঝ নদীতে শিশুরা খেলা করছে। সেচের অভাবে অনেক কৃষকই বোরো আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে শীত মৌসুমে সবজি উৎপাদনেও চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। মাধবপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই রাবার ড্যামের আওতায় সুবিধাভোগী ছিলেন। রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত বরুড়া গ্রামের কৃষক আঃ মমিন গেদু ও রাজনগর গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান, রাবার ড্যাম বিধস্থ হওয়ার ফলে আমরা সাধারণ কৃষকরা সেচ সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাই বর্তমান সরকারের নিকট দ্রুত রাবার ড্যামটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সোনাই নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল আলীম মীর বাদল বলেন, রাবার ড্যাম দুটি সংস্কার না হওয়ার ফলে সাধারণ কৃষকরা সেচ সুবিধা না পেয়ে কৃষি কাজ থেকে পিছিয়ে পরছে। বিধস্থ রাবার ড্যাম সংস্কারের দাবি জানিয়ে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছি। আশা করি বর্তমান সরকার সাধারণ কৃষকদের কথা চিন্তা করে দ্রুত রাবার ড্যাম দুটি সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করবেন।
পূর্বেও ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি এলজিইডির বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্থ দুটি রাবার ড্যাম পরিদর্শনের পর তা পুনরায় ব্যবহার উপযোগি করতে ৩ কোটি ৯ লাখ টাকার প্রাক্কলন কৃষি মন্ত্রনালয় বরাবরে দাখিল করে। জাইকা এটি মেরামতের আগ্রহ দেখালেও আমলাতান্ত্রিক জঠিলতার কারনে প্রায় দুই বছরেও কৃষি উন্নয়নে সম্ভাবনাময় প্রকল্প দুটি মেরামত করা হচ্ছেনা।
এলজিইডি মন্ত্রনালয়ের পিডি- এক্সচেঞ্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাবার ড্যাম দুটি সংস্কারের জন্য দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। চলতি বছর অর্থ বরাদ্দ পেলে এলজিইডি মন্ত্রনালয় থেকে দরপত্র আহব্বান করে। দ্রুতই রাবার ড্যাম দুটি সংস্কারের কার্যক্রম শুরু করতে পারবো।