তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালানীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেড : অসহায় বিজিবি

তৎপর পুলিশ,মালামালসহ আটক ১

sunamgonj tahirpur-lakma  simanto pic(2)mk-29.09.15তাহিরপুর প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর সীমান্তে গড়ে উঠেছে চোরাচালানীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেড। এই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে চোরাচালানীরা অবাধে আনছে অস্ত্র,মদ-গাঁজা, হেরুইন,ইয়াবা,যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট,ঘোড়া,নাসির উদ্দিন বিড়ি,কাঠ,কয়লা ও চুনাপাথর। এসবের বিনিময়ে পাঁচার করছে দেশীয় পন্য মাছ,মুরগি,সিরামিকের থালা-বাসন,জগ,গ্লাস, ভৈজ্য তৈল,শাক-সবজি,মোবাইল কার্ড ইত্যাদি। চোরাচালান করতে গিয়ে ইতিমধ্যে বিএসএফের তাড়া খেয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে ও চোরাই কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ৭জন বাংলাদেশী শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার ভোর ৪টায় লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী থেকে ৪টন কয়লা ও রোববার সকালে ১৯টি বারকি নৌকাসহ ৫টন sunamgonj tahirpur- canpur simanto pic(1)mk-29.09.15চোরাই কয়লা আটক করলেও চোরাচালানীদের আটক করতে পারেনি বিজিবি। অথচ গতকাল সোমবার রাত ৯টায় লাকমা সীমান্তে অভিযান চালিয়ে বিজিবির নাকের ঢগার উপর দিয়ে গাঁজাসহ ১জনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানায়,স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও সীমান্ত চোরাচালানীরা সিন্ডিকেডের মাধ্যমে উপজেলার চাঁরাগাঁও সীমান্তের লালঘাট,বাঁশতলা, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা,টেকেরঘাট সীমান্তের বুরুঙ্গাছড়া,চানপুর সীমান্তের নয়াছড়া, রাজাই,কড়ইগড়,লাউড়গড় সীমান্তের বারেকটিলা,যাদুকাটা নদী,দশঘর ও পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে অবাধে অস্ত্র,মদ-গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা,কয়লা,চুনাপাথার,কাঠ ও ঘোড়া পাচাঁর করছে। সম্প্রতি সীমান্তের বরুঙ্গাছড়া থেকে অস্ত্রসহ ১জন,বড়ছড়া থেকে ইয়াবাসহ ১জন,লাকমা থেকে গাঁজাসহ ১জন ও বাদাঘাট বাজার থেকে ইয়াবা,মদ ও গাঁজাসহ ৪জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। কিন্তু বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত থেকে চিহ্নিত চোরাচালানীদের আটক করতে পারছেনা। অথচ চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য সুনামগঞ্জ ৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে করেছেন সভা-সমাবেশ। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০গজ দূরত্বে অবস্থান করার জন্য সীমানা নির্ধারণ করেও দিয়েছেন। কিন্তু সীমান্ত এলাকার ক্যাম্পগুলোতে দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যরা তাদের উপরস্থ কর্মকর্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চোরাচালানীদের সাথে হাত মিলিয়ে এই সীমান্তকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। এর ফলে চোরাচালানীদের পাঁচারকৃত মাদকের ছোবলে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্ররাসহ ধ্বংসের পথে যুব সমাজ। সেই সাথে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছে সরকারকে। অভিযোগ উঠেছে,ভারত থেকে পাঁচারকৃত মালামালের মধ্যে কয়লার বস্তা থেকে ১শত টাকা, প্রতিটন চুনাপাথর থেকে ২শত টাকা,প্রতি ঘোড়া থেকে ৩হাজার টাকা,কাঠ প্রতি ৫০টাকা, মদ-গাঁজা,নাসির উদ্দিন বিড়ি থেকে সাপ্তাহিক ৫হাজার টাকা,ইয়াবা-হেরুইনের জন্য ৭হাজার টাকা হারে চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব চাঁদা বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে দুধের আউটা গ্রামের চাঁদাবাজি মামলার আসামী জিয়াউর রহমান জিয়া,তার বাবা নূরজামাল,লাকমা গ্রামের চোরাচালানী ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী,লালঘাট গ্রামের চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী আবুল কালাম,চাঁরাগাঁও ক্যাম্পের নামে চোরাচালানী জানু মিয়া,নজরুল মিয়া,জয়নাল মিয়া,চাঁনপুর ক্যাম্পের নামে চানপুর গ্রামের মাদক চোরাচালান মামলা জেলখাটা আসামী আবু বক্কর,চোরাচালানী সম্রাট মিয়া,জম্মত আলী ও লাউড়গড় ক্যাম্পের নামে লাউড়গড় গ্রামের গ্রামের নুরু মিয়া,নবীকুল,এজাদ মিয়া ও সাখাওয়াত হোসেন এসব চাঁদা উত্তোলন করছেন। আর সাংবাদিকের নাম ভাঙ্গিয়ে একই ভাবে চাঁদা উত্তোলন করছে ৪টি চাঁদাবাজি মামলার আসামী চিহ্নিত চোরাচালানী আজাদ ও সাজ্জাদ মিয়াসহ তাদের সহযোগীরা। এব্যাপারে চাঁরাগাঁও শুল্কস্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন,আশরাফ আহমেদ,কামাল হোসেন বলেন-বিজিবি তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে মাঝে মধ্যে অবৈধ মালামাল নামমাত্র আটক করে শুধুমাত্র লোক দেখানো ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য। সম্প্রতি চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী আবুল কালাম, চোরাচালানী জানু মিয়া,নজরুল মিয়া ও রহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে চাঁরাগাঁও সীমান্তের লালঘাট এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গোহায় চাপা পড়ে ১শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বিজিবি আজ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনের ব্যবসায়ী রহিছ মিয়া,জয়নাল মিয়া,আছকর আলী,মনা মিয়া বলেন-টেকেরঘাট সীমান্তের লাকমা এলাকা দিয়ে বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী চাঁদাবাজি মামলার আসামী চোরাচালানী জিয়াউর রহমান জিয়া, ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারীর নেতৃত্বে ভারত থেকে কয়লা আনতে গিয়ে গুহায় চাপা পড়ে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও যাদুকাটা নদীতে বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে আরো ৩জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে যাদুকাটা নদী,চানপুর ও রাজাই এলাকা দিয়ে বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী মাদক মামলার জেলখাটা আসামী আবু বক্কর,চোরাচালানী জম্মত আলী,সম্্রাট মিয়া, আবুল মিয়া,আব্দুল গফ্ফার অবাধে চুনাপাথার ও কয়লা পাচাঁর করছে। এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত বিজিবির। তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আমাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। সুনামগঞ্জ ৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,তাহিরপুর সীমান্তের চোরাচালান প্রতিরোধ করাসহ চোরাচাকারবারীদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।