তাহিরপুরে ৩ টি কয়লা শুল্কস্টেশন ৮ মাস যাবৎ বন্ধ, ৩০হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন যাপন

tahirpur borderকামাল হোসেন, তাহিরপুরঃ দেশের উত্তর-র্পূব সীমান্তে অবস্থিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলাটি বাটি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হলেও রয়েছে প্রকৃতিক সম্পদে ভরপুর। এ উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আমদানীকৃত কয়লার ৩টি শুল্কস্টেশন রয়েছে । জানাযায়,ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা উত্তোলনের করার কারণে ভারতীয় আদালতে ভারতের একটি পরিবেশবাদী সংগঠনেরদেয়া মামলা জনিত কারণে বিগত ১৬ মে থেকে আজঅবদি র্দীঘ ৮ মাস যাবৎ ওই ৩ টি শুল্কস্টেশন দিয়ে কয়লা আমদানী-রপ্তানী সম্পন্ন রপে বন্ধ রেেছ।শুল্কস্টেশন গুলো বন্ধ থাকায় সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, শুল্কস্টেশন গুলো বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা হাজিরার কাজ না করতে পাড়ার কারণে ওই কয়লা শুল্কস্টেশনে শ্রমিকের কাজে নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। ওই শ্রমিক পরিবারের লোকজন কোন রকম অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাতসহ করছে মানবেতর জীবন যাপন। অপর দিকে ভারত থেকে কয়লাা আমদানীর সাথে জরিত প্রায় ৫’শতাধিক ব্যবসায়ী রয়েছে বড় ধরনে লোকসানের মধ্যে। যারফলে ওই শুল্কস্টেশন গুলো থেকে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। এক সময়ে মানুষের প্রাণ চাঞ্চলল্য ও পর্যনট স্পট ওই শুল্কস্টেশনে ভারত থেকে কয়লা বোঝাই শতশত ট্রাক এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করত এবং সেই কয়লা লোড আনলোড ও ক্যারিংএর কাজে নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কোলাহলে মুখরিত ছিল শুল্কস্টেশন গুলো। কিন্তু এখন ওখানে নেই কোন মানুষের কোলহল যেন বুঝাযায় মৃত মানুষের কবর স্থানের মতো নিরব নিস্তব্দ। গতকাল সরেজমিনে বড়ছড়া, চারাগাঁও ও বাগলী ওই ৩ টি শুল্কস্টেশন ঘুরে কয়লা সমিতির সূত্রে জানাযায়, বাংলাদেশের ওপাড়ে মেঘালয় পাহাড়ের কায়লা খনি থেকে অপরিকল্পিতভাবে কয়লা উত্তোলন করার কারণে পরিবেশের যেমন মারাতœক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সাথে জড়িত শ্রমিকের জীবন মারাতœক হুমকির মুখে রয়েছে এমন অভিযোগ করে ভারতে একটি পরিবেশবাদি সংগঠন ভারতের উচ্চ আদালতে একটি মামলা করলে বিগত ১৬ মে থেকে আজঅবদি কয়লা আমদানী রপ্তানী সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পরে ভারতী কয়লা রপ্তানী কারকরা ওই মামলার বিপরিতে ভারতের উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত পরিবেশের ক্ষতি না করে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে রায় দেয়। এবং ওই মামলা প্রথম শুনানী হয় ২ জুন এবং পরবর্তী ৯ জুন ও ১৬ জুনসহ দফায় দফায় র্দীঘ শুনানী পরও এবং ভারত বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিনিধি দল বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতে বেশ কয়েকবার বৈঠক করার পরও এর কোন শুরাহ না হওয়ায় ৩ শুল্কস্টেশন ৮ মাস যাবৎ বন্ধ থাকার ফলে একদিকে যেমন কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে কয়লা ব্যবসায়ীরা অপর দিকে কয়লা লোড আনলোড ও ক্যারিংএর সাথে জরিত প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক শ্রমিক পরিবারের দিন কাটছে কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে। এব্যপারে কয়লা সমিতির সভাপতি হাজী আলকাছ উদ্দিন খন্দকারে সাথে আলাপ কলে তিনি বলেন, ৮ মাস ধরে আমদানী বন্ধ থাকার কারণে হাজা হাজার শ্রমিক পরিবারে যেমন দিনকাটছে অতি কষ্টে তেমনি অনেক ব্যবসায়ী রয়েছে লোকসানে। অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে টাকা এনে এলসি দেওয়ার পর যার গাড়ি আসার কথা ১০০ টি ওই জায়গায় তার গাড়ি এসেছে ১৫-২০ টি বাকি ৮০ টি গাড়ি তার ভারতের রপ্তানী কারকদের কাছে পাওনা। এতে করে দেখা যাচ্ছে কয়লা আমদানী শুরু না হলে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা কোন মতেই তাদের (ভারতীয়) কাছ থেকে উদ্ধার করা যাবেনা। এব্যপারে বিশিষ্ট কয়লা আমদানীকারক মের্সাস মাসুক এন্টাপ্রাইজের মালিক হাজী মোঃ ইউনুছ আলী বলেন, ভারতের আদালতে একটি মামলার কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে কয়লা আমদানী বন্ধ রয়েছে। এত করে বাংলাদেশের প্রায় ৫শ কয়লা ব্যবসায়ী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে রয়েছে। পাশাপাশি এই কয়লার সাথে জড়িত প্রায় ৩০/৪০ হাজার শ্রমিক পরিবার তাদের পরিবারপরিজন নিয়ে সংসার চালাতে পড়ছে বেকাদায়। কয়লা আমদানী বন্ধ থাকার কারণে প্রায় কয়লা ব্যবসায়ীর কারও ৫০০ টনের এলসি , কারও ১ হাজার টনের এলসি ভারতের কয়লা রপ্তানীকারকদের কাছে পাওনা রয়েছে। তিনি আরও জানান, আমার ভারতের কয়লা রপ্তানীকারকদের কাছে ১ হাজার টন(১শত গাড়ি) কয়লা পাওনা রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা। একজন ব্যবসায়ীর যদি ৮০ লক্ষ টাকার মাল পাওনা থাকে তাহলে তার ব্যবসা কিভাবে চলবে। অচিরেই যদি কয়লা শুল্কস্টেশন গুলো চালু না হয় তাহলে ব্যবসায়ীরা যেমন পথে বসবে, তমনি শ্রমিকরা যখন খেতে না পারবে, তখন আবার এএলাকায় আগের মত চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পাবে। পুটিয়া গ্রামের কয়লা শ্রমিক সর্দার আব্দুল হালিম(৪০) জানান, এই ইনফুট থাইকা দেশের বিভিন্ন জায়গার ইট ভাটায় কয়লা যায়। আমি বিগত ৬ বছর ধরে কয়লা শ্রমিকের কাজ করে ৩ বেলা ৩ মুঠো ভাত খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালই চলতাম। কিন্তু আতকা মাইরা দুই আড়াই মাস ধইরা কয়লার ইনফুট বন্ধ অইয়া যাইলে কোন রকম খাইয়া না খাইয়া দিন কাডাই তাছি। তিনি জানান, আমার সাথে আরও ১শত লোক কাজ করে। কারও পরিবারে ৮/১০ জন কইরা লোক আছে। কাজ না থাতার কারণে হেরার অবস্থা আমার মতই। আগে ( বন্ধ থাকার র্পূবে) সারাদিন কাম কইরা একজনে(প্রতিজনে) ৫/৬শ টাকে পাই তাম। এহন এক বেলা খাইলে ২ বেলা খাইতারিনা। ইন্ডিয়ার সরকারে কি একটা মামলা কইরা বুঝি ইনফুট বন্ধ কইরা দিছে। কাস্টম সুত্রে জানাযায়, ৮ মাস যাবৎ কয়লা আমদানী বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন সরকার প্রায় ১ কোটি টাকার মত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতকরে সরকান ৮ মাসে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার মত রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার । ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ওই ৩টি কয়লা শুলাকস্টেশন থেকে সরকারকে ১শত ৭৪ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এলাকা সচেতন মহলের ধারনা এরকম আরও কিছুদিন স্টেশন গুলো বন্ধ থাকলে এ এলাকায় আগের মত আবারও বৃদ্ধি পাবে চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন গঠনা। তাই ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ সরকারে আন্তরিক প্রচেষ্টায় যদি আবারও কায়লা শুল্কস্টেশন গুলো চালু করা যায় তাহলে একদিকে যেমন কয়লা ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখ থেকে বাচঁবে অপর দিকে এলাকার হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।