জামায়াতে ইসলামিতো ১৯৭১ সাল থেকে নিষিদ্ধ নতুন করে দাবি কেন?
সংবর্ধনা সভায় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
ঠিকানা রিপোর্ট: ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, নতুন করে জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধের দাবি আসছে কেন? তাদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। নিশ্চন্ন করতে হবে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করে সেখানে পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পাশাপাশি তাদের সহযোগি ফোর্সের আত্মসমর্পণের কথাও বলা হয়েছে। জামায়াত পাকিস্তানীদের সহযোগি সংগঠন এবং ফোর্স ছিলো। পাকিস্তানী সেনা বাহিনী যেহেতু ক্যান্টনমেন্টে অফিস করার অধিকার হারিয়েছে, জামায়াতে ইসলামিও বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। তা ছাড়া আমাদের সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা আছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ স্কুলের অডিটোরিয়ামে প্রবাসী বাঙালি সমাজ আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিসি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ কথা বলেন।
সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক গিয়াস উদ্দিন বাবু এবং সদস্য সচিব জাকির হোসেন বাচ্চু ও প্রগ্রেসিভ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিম উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিভির সাবেক প্রযোজক বেলাল বেগ, প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম, উদীচী যুক্তরাষ্ট্র শাখার উপদেষ্টা ডা. ওয়ালেদ চৌধুরী।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ৯ মাসের নয়। অনেকেই বর্তমানে এ কথা বলার চেষ্টা করেন। কারণ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তাদের কোন ভূমিকা ছিলো না। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আমরা যুদ্ধ করেছি আর্দাশিকভাবে। আবার অনেকে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন ঘটনার পরমপরায়। মূলত: ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজ ছিলো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বিভিন্ন আন্দোলনেরই ধারাবাহিকতা। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিলো না। তিনি বলেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং রুটি- রুজির আওয়াজ প্রথম তুলেছিলো কমিউনিস্টরা। জেল হত্যা শুরু হয়েছিলো ১৯৫০ সালে রাজশাহী থেকে। এগুলো আজ ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করি। আমরা কী স্মরণ করি ক্ষুদিরামকে? সূর্যসেনকে? তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, পাকিস্তানী স্টাইলের রাষ্ট্রের জন্য নয়। পাকিস্তানী স্টাইলে দেশ পরিচালনার জন্য নয়। ৭২ সালের সংবিধানেই দেশ পরিচালিত হবে। আজ দু:খ করে বলতে হয় বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলন্ঠিত। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বর্জুয়া রাজনৈতিক দল। তবে দুটো এক নয়। তাদের গঠনের মধ্যে প্রার্থক্য আছে। অনেকেই বলেন, পার্থক্য ১৯-২০। কোন কোন সময় ১৯-২০ এর তফাৎও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আর্থ- সামাজিক নীতির প্রশ্নের আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তবে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিশ্চিন্ন করতে চায়, প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামিকে কাজে লাগিয়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন সন্ত্রাস চলছে। ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার কাজ চলছে। কিন্তু ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার কৌশল শেষ পর্যন্ত কাজে আসে না, অতীতে আমরা দেখেছি। এখন বলা হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে- যে কোন কৌশলে। যেখানে গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই। জনমতের প্রয়োজন নেইÑ এটা একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে বলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই- শেখ হাসিনাকে তাহলে শেখ মুজিবের পথ পরিত্যাগ করে মাহাথিরের পথ অনুসরণ করুন। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে আছি এবং থাকবো। তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারি দলও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেখতে চাই আবার বিরোধী দলও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দেখতে চাই। খালেদা জিয়াকে বলতে চাই জামায়াত ছাড়–ন। তবে মনে রাখতে হবে হাসিনার অলটারনেটিভ খালেদা নয়, আওয়ামী লীগের অলটারনেটিভ বিএনপি নয়। তিনি দেশের বর্তমান পরিস্থিতে থেকে উত্তরণের জন্য কমিউনিস্ট, সিপিবি এবং বামদলগুলোর ঐক্য কামনা করেন। আমরা যদি এক হতে পারি তাহলে বিকল্প শক্তি হবে। এই বিকল্প বি চৌধুরীর বিকল্প নয়।
অনুষ্ঠানে গোলাম মর্তুজা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের জীবনী তুলে ধরেন।