হবিগঞ্জে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত, ব্যাপক ক্ষতি ফসলের
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জের নদ-নদী ও হাওড়ে ব্যাপকভাবে পানি বেড়েছে। ইতোমধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বীজতলা ও জমির ফসল। অনেক পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। খোয়াই ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বড় ধরণের আশংকা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে কুশিয়ারা ও খোয়াই নদীতে তেমন পানি না হলেও এবছর পানিতে টুইটুম্বুর দুই নদী। খোয়াই নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে তা স্থির অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ার নদীর তীরবর্তী এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ একর ফসলি জমি।
কুশিয়ারা ডাইকের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্থানীয় ভাবে জানা গেছে। স্থানীয় লোকজন ডাইকের পারে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ওই ডাইক ভেঙ্গে গেলে নবীগঞ্জে ব্যাপক বন্যার আশংকা রয়েছে। দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক গ্রাম, কসবা, চরগাঁও, উমরপুর, গালিমপুর, মাধবপুর, কুমারকাঁদা (একাংশ), আহম্মদপুর, ফাদুল্লা, রাধাপুর, জামারগাঁও, রাধাপুর প্রাইমারী স্কুলসহ বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রাধাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাধাপুর মাদ্রাসা মাইকিং করে বন্ধ করে ঘোষণা করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোফায়েল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে হবিগঞ্জের চুনারুগাট উপজেলা ছাড়া ৭টি উপজেলাতেই ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমির রূপা আমন ও ৫০ হেক্টর বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরণের সব্জি গাছ মরে গেছে। বিশেষ করে যারা আগাম ফুলকপি, টমেটো, বাধাকপিসহ শীতকালিন শব্জি চাষের জন্য চারা উৎপাদন করেছিলেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তিনি জানান, যদি পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তাহলে শব্জির জন্য আকাল দেখা দিবে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার শতাধিক পুকুর ও জলাশয়ের মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তবে পানি বৃদ্ধির ফলে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
জেলা পশু সম্পদদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবুল আলম জানান, বন্যার পানিতে গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। সামনে কোরবানীর হাট। বন্যায় গবাদিপশু পালক ও বিক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা রয়েছে। এই সময়ে গবাদী পশুকে টিকা ও কৃমির ঔষধ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি আরও জানান, কোরাবানীর হাটকে সামনে রেখে পশুসম্পদ বিভাগের আওতায় জেলায় ৮টি মেডিক্যাল টিম তৈরি করেছে।
জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান জানান,কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানি বাড়লে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি ও বন্যার ফলে এলজিইডির বেশ কিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনের কাজ চলছে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম জানান, বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা প্রস্তুতের জন্য ত্রাণ ও পূর্ণবাসন শাখার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। বন্যার বিষয়টি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।