ছড়া উদ্ধারে তর্জন-গর্জনই সার!
সিলেট সিটি করপোরেশন প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় বছর ধরে ছড়া উদ্ধার অভিযান চালালেও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে সিলেট নগরীর ছড়া-খাল উদ্ধারে অভিযান চলছে প্রায় ছয় বছর ধরে। ছড়া উদ্ধারে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তবে কাড়ি-কাড়ি অর্থ ব্যয়ে এসব প্রকল্পে তেমন সাফল্য মেলে নি। ছয় বছর অভিযান চালিয়ে মাত্র ২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পেরেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে ছড়া দখলমুক্ত করা সম্ভব না হওয়ায় জলাবদ্ধতার দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর সড়ক-বাসা বাড়িতে জমছে জল। সর্বশেষ গত দু’দিদেনর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নগরীর অনেক এলাকা। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাতার অপ্রতুলতার কারণেই এমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
সিটি করপোরেশন সূ্ত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর ছড়া দখল করে অবৈধভাবে গড়িয়ে ওঠা ভবনের সংখ্যা ১ হাজার ৫৯ টি। তবে বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। ছড়ার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন, মার্কেট, বাসা, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লিনিক। ছয় বছর ধরে অভিযান চালিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনার মাত্র ২০টি উচ্ছেদ করতে পেরেছে সিটি করপোরেশন।
জানা যায়, সিলেট নগরীর ভেতর দিকে প্রবাহিত হয়ে গেছে ছোট বড় প্রায় ২৫ টি প্রাকৃতিক খাল, যা ছড়া নামে পরিচিত। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াগুলো গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এই ছড়াগুলো থেকেই পাওয়া যেনো নগরবাসীর ব্যবহারযোগ্য পানি, পানি নিষ্কাশনেরও আঁধার ছিলো এই ছড়াগুলো। এক সময় এসব ছড়া দিয়ে বড় বড় নৌকাও চলাচল করত। তবে এখন অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর উপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট বড় ২৫টি ছড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ১শ’ কিলোমিটার। নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান প্রধান ছড়াগুলো হচ্ছে- মালনি ছড়া, কালীবাড়ি ছড়া, মঙ্গলী ছড়া, যোগিনী ছড়া, হলদি ছড়া, ভুবি ছড়া, গোয়ালি ছড়া, ধোপা ছড়া, ধুবড়ি ছড়া, কেওয়া ছড়া ও গাভিয়ার খাল।
২০০৯ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনের ছড়াগুলো উদ্ধার অভিযান শুরু করে সিটি করপোরেশন। এ জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি টাকা।
এরপর ২০১৩ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ফের শুরু হয় ছড়া উদ্ধারের তোড়জোড়। ক্রয় করা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি। ছড়া উদ্ধারের পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে নেওয়া হয় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র পদ থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর থমকে যায় ছড়া উদ্ধার অভিযান। সম্প্রতি আবার ছড়া উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেছে সিসিক। তবে বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও ছড়ার উপর নির্মিত সহস্ত্রাধিক অবৈধ স্থাপনার মধ্যে সামান্যই উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ছড়া দখল করে স্থাপনা নির্মাণকারীদের প্রায় সকলেই প্রভাবশালী ব্যক্তি। রাজনৈতিকভাবেও তারা শক্তিশালী। ফলে অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করলেও তা উচ্ছেদ করতে পারছে না সিসিক।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, মিরাবাজার, পীরমহল্লা, লামাবাজার, শেখঘাট, কুয়ারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা, আম্বরখানা, আগপাড়া, রায়নগর, কানিশাইল, জিন্দাবাজার, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, উপশহর, মেন্দিবাগ, রিকাবীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়া দখল করে প্রভাবশালীরা বহতল ভবন নির্মাণ করেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ছড়ার উপর অবৈধভাবে নির্মিত ১০৫৯ টি ভবন আমরা চিহ্নিত করেছি। এগুলো উচ্ছেদ করে ছড়া উদ্ধার অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ টি অবৈধ ভবন উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব ছড়া দখল করে বাসা-বাড়ি নির্মাণ করে আছেন। তাদের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে সিটি করপোরেশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, অনেক অবৈধ স্থাপনা একবার উচ্ছেদ করার পর দখলদাররা আবার নির্মাণ করে ফেলে। সম্প্রতি নগরীর জল্লারপাড়ে এরকম একটি স্থাপনা আর দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ করেছি। প্রথম দফা উচ্ছেদের পর দখলদাররা ফের ছড়ার উপর ভবন নির্মাণ করেছিলো।
তিনি বলেন, ছড়ার উপর থেকে অবৈধ স্থাপনা সরানোর জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বারবার নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। যারা ছড়ার উপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তাদেরকে কোন ছাড় দেওয়া হবে না।