তুমি রবে নীরবে… : ইসমত পারভীন রুনু

Tumi robe nirobeস্বপ্নের পথচলায় কখনও কখনও জীবন থমকে যায় কিছুক্ষণের জন্য, পরক্ষণেই আবার আপন গতিতে পথ খুঁজে পায়। সে মুহূর্তে অনুভূতির জায়গাটা আরও সু¯পষ্ট হয়ে ওঠে। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা জীবনের বাঁকে বাঁকে নিজেকে বড্ড বেশি অস্থির করে তোলে। নিজের অসহায়ত্বের কথা ভাবলে নিজেকেই তিরস্কার করার বাসনা জাগে।
সম্পর্কের গভীর বন্ধন সময়ের ব্যবধানে শ্যাওলাধরা লতাগুল্মের ন্যায় কালের স্রোতে ভেসে যাওয়া, দমকা হাওয়ার তোড়ে গতিহারা এক প্রশ্নবিদ্ধ সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে। এখানে কেউ যেন কারও নয়। অতীতের সুখস্মৃতি থেকে কিছুটা রোমন্থন মনের অজান্তেই আবেগাপ্লুত করে তোলে। জীবনের ধর্মই হচ্ছে উত্থান-পতন, তা এড়ানোর সাধ্য কারুরই নেই। এই চিরন্তন সত্য অস্বীকারের সাধ্যও কারুরই থাকে না।
একজন আদুরিনীর কথা বলছি। ভাইয়ের দেয়া নামেই (আদুরিনী) বেশি পরিচিতা। বাবা-মায়ের অকৃত্রিম স্নেহে বেড়ে ওঠা, সুখে-দুঃখে ভাই-বোন দুজনে দুজনার। একে অন্যের পরিপূরক, আবেগ-উচ্ছ্বাসে সমান অংশীদার, নিত্যদিনের সাথী যে বোনটি, তিনি আমাদেরই শ্রদ্ধেয়া বড় আপু; অনেক বছর আগেই চিরবিদায় নিয়েছেন এ পৃথিবী থেকে। ১৯৯১ সালের ২৯ আগস্ট। সে অন্তপ্রাণ ভাইয়ের হৃদয়ের মণিকোঠায় আজো তুমি আছো কি না আমি জানিনা।
তবে আজকের এই দিন আমাদের কাছে অনেক স্মরণীয়। নতুন উদ্যোম আর কর্মচাঞ্চল্য নিয়ে যেই আরও একটি দিনের সূচনা হলো, দিবসের কোলাহলে লোকজনের পদচারণায় মুখরিত চারপাশ যখনই, ঠিক তখনই আমাদের ভেতরের রক্তক্ষরণ থেমে নেই। কারণ আমরা এই দিনটিতেই তোমাকে চিরতরে হারিয়েছিলাম। তাই তো এ দিনের গুরুত্বও বেশি। ক্যান্সার নামক ব্যাধি তোমাকে আমাদের কাছ থেকে আলাদা করেছে। তোমার সে কষ্ট আজও আমাদের কষ্ট দেয়, আহত করে। আজ যখন দেখি ক্যান্সারের নতুন চিকিৎসা কেমোর কষ্ট কমাবে, তখন ভাবি সে সময় কেন এ কৌশল আবিষ্কৃত হয় নি! আসলে চলে গেলে কেউ আর ফিরবে না। এটাই বাস্তবতা।
জীবনের আনন্দ বেদনায় সর্বত্রই তোমার অনুপস্থিতি আমাদের প্রত্যেককে বিচলিত করে। শেষবারের মতো দেখা তোমার প্রাণহীন দেহ দেখেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তুমি নেই। অন্তরের গহীন থেকে একটি সুর বেজে ওঠে-
“তুমি রবে নীরবে…”
এ আবেগ আজ এতো বছর পরও এক অন্যরকম আবহ সৃষ্টি করে।
মহান আল্লাহ্পাকের কাছে চাওয়া, তোমাকে যেন তিনি শান্তিতে রাখেন। তোমাকে হারানোর ব্যথা সবসময়েই মনকে বিষণè করে, চোখ আপনা আপনিই ভিজে আসে। প্রিয় মানুষদের কেউ হারাতে চায় না। সে অতৃপ্তির জায়গাটা আজও শূন্যই থাকুক।

লেখিকাঃ সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক, সিলেট।
ঠিকানাঃ ফয়জুন ভিলা (৩য় তলা), এ-১৪ অনামিকা আ/এ, পূর্ব শাহী ঈদগাহ, টিবি গেইট, সিলেট-৩১০০।