যে নির্দেশ উপেক্ষা করে লাঞ্ছিত করা হয় ভিসিকে
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত ১৩ এপ্রিল থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষকদের একাংশ। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ জুলাই শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রথমে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করে। পরে ২৪ জুলাই উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়া এবং সর্বশেষ ৬ আগস্ট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কবির হোসেনের নেতৃত্বে শিক্ষকদের একটি প্যানেল এবং ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তচিন্তায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’র অপর একটি প্যানেলের সাথে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী।
সকল মহলের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয় ২৪ আগস্ট সোমবোর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জিন্নাত রেহানা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূঁইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা শিক্ষকদের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে আন্দোলন বন্ধ রেখে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনায় মনোযোগী হতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়াও চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়।
চিটির অনুলিপি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছেও পাঠানো হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে রোববার সকালে শাবি ভিসিকে ‘এডভান্সড স্টাডিজ বোর্ড’র সভা ও বিকেলে ‘একাডেমিক সিন্ডিকেট সভা’ প্রতিহতের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষকদের একাংশ। শনিবার রাতে তারা এ ঘোষণা দেন। নেই ঘোষণা অনুযায়ী রোববার সকালে ভিসিকে তার কার্যালয়ে প্রবেশে বল পূর্বক বাধা প্রদান করে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রেরিত চিঠিতে ১১টি বিষয়ে ‘অনুসরণের জন্যে’ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। উল্লেখিত ১১টি বিষয় উত্তরপূর্ব পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
- ১. সকল ধরনের আন্দোলন বন্ধ রেখে নিয়মিত ক্লাশ পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন অব্যাহত রাখা এবং কোনভাবে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় কোন বাধা সৃষ্টি সমীচীন হবে না।
- ২. উপাচার্য সম্পর্কে শিক্ষকদের অভিযোগসহ সকল বিষয়ে তাকে সচেতন করা হয়েছে, তিনি সকল বিষয়ে সচেতন থেকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখবে।
- ৩. শিক্ষকদের কোন অভিযোগ, সমস্যা বা পরামর্শ শান্তিপূর্ণভাবে কর্তৃপক্ষের যেকোন স্তরে তা জানাতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষ তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা ও সমাধানের চেষ্টা করবে।
- ৪. নতুন বছরের শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে যথাসময়ে সমাপ্ত করতে হবে। এ কাজে সকলে সহযোগিতা করবেন।
- ৫. সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল সকল নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে কোন নতুন শিক্ষক আপাতত নিয়োগ দিতে পারবেন না। পরিস্থিতি উন্নতি ও স্বাভাবিক হওয়ার পর নতুন নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
- ৬. প্রশাসনিক দায়িত্ব যাদের উপর রয়েছেন তারা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করবে। কিছু কাজ আছে যা এক দিনের জন্যও দায়িত্বহীন ভাবে চলতে পারে না। যেমন ছাত্রীদের হোস্টেলের তদারকি ইত্যাদি।
- ৭. উপাচার্য তার উপর ন্যাস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য আরো উদ্যোগী হবেন এবং সকল শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ রকম একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা উপাচার্য এর দায়িত্ব।
- ৮. সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করবেন, শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রণালয় সকলের কাছে এই প্রত্যাশা করে।
- ৯. শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই শিক্ষাথীরা দায়িত্বশীলতার সাথে নিয়মিত শিক্ষাজীবন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অব্যাহত রাখার জন্য সচেতন থাকবেন- শিক্ষামন্ত্রী তাদের কাছে এই প্রত্যাশা করেন।
- ১০. শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় সুনামের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য উপাচার্য ও সংশ্লিষ্ট সকলে কিভাবে কাজ করবেন এবং বিশেষ করে উপাচার্য সকল মহলকে সাথে নিয়ে কিভাবে পরিস্থিতির উন্নয়ন করেন তা মন্ত্রণালয় আগামী ৬ মাস পর্যবেক্ষণ করবে এবং তারপর পরিস্থিতির ও উন্নতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
- ১১. শিক্ষামন্ত্রণালয় আশা করে এবং উপাচার্যসহ সকল মহলের নিকট উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে, তারা আন্তরিকতার সাথে সম্মিলিতভাবে তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবেন শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলবেন মর্মে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট বিনীত আহবান জানাচ্ছেন।