সমুদ্রপথে মানব পাচার : দেড় বছরে ১১০০ প্রাণহানি
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ গত দেড় বছরে (২০১৪-২০১৫ সালের জুন) বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে সমুদ্রপথে বিদেশে মানব পাচারকালে প্রায় ১১০০ অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে চলতি বছরে মারা গেছেন ৩৭০ জন। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইউএনএইচসিআর দফতর এপ্রিল-জুন ২০১৫ মেয়াদে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া : সমুদ্রপথে মিশ্র চলাচল শিরোনামের প্রতিবেদনটির কপি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য মোতাবেক, মায়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারকারীরা মালয়েশিয়ায় নেয়ার কথা বলে মে মাসে পাঁচ হাজার শরণার্থী ও অভিবাসীকে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে ফেলে চলে যায়। অতিরিক্ত আরও এক হাজার মানুষ ওই সময়ে সমুদ্রে ভেসেছিলেন।
মানব পাচারকারীরা মে মাসে যাদের বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে ফেলে চলে যায় তাদের মধ্যে ৭০ জন সাগরবক্ষে জাহাজেই মারা যান। তাদের মারা যাওয়ার কারণ হল- ক্ষুধার জ্বালা, ডাইরিয়া, রোগে ভোগা ইত্যাদি। নৌকার ক্রুদের নির্যাতনেও কেউ কেউ মারা গেছেন। তার বাইরে অনেকেই সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে মারা গেছেন কিংবা নিখোঁজ রয়েছেন বলেও রিপোর্ট পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলের নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ পাচারকারীদের ফেলে যাওয়া জাহাজগুলোকে তীরে ভিড়তে দেয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদেরকে আবার সমুদ্রে ঠেলে দেয়া হয়েছে। পরে অবশ্য মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সাগরে ভাসা মানুষদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে রাজি হয় তারা। ওই অঞ্চলের দেশগুলো বৈঠক করে ওইসব মানুষকে মানবিক সহায়তা, মানব পাচার প্রতিরোধ এবং সমুদ্রপথে এই চলাচলের মূল কারণ খুঁজে পেতে প্রস্তাব দেয়।
প্রতিবেদনের তথ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও মায়ানমার থেকে ৯৪ হাজার শরণার্থী কিংবা অভিবাসী সমুদ্রপথে যাত্রা করে। তাদের ৩১ হাজার চলতি ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে সমুদ্রপথে বিদেশে পাড়ি দিতে চেষ্টা করে। চলতি বছরের মে থেকে নতুন করে কেউ সমুদ্রপথে বিদেশে যাত্রা না করলেও ২০১৪ সালের প্রথমার্ধের তুলনায় ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে সমুদ্রপথে যাত্রার সংখ্যা ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিকভাবে এসব মানুষকে থাইল্যান্ডের গহিন বনে পাচারকারীদের ক্যাম্পে নামানো হয়। সেখান থেকে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের টেলিফোন করিয়ে অর্থ আদায়ের পরই শুধু মালয়েশিয়ার মূল গন্তব্যে পাঠানো হয়। মুক্তিপণ আদায়ের এই কাজ কখনও কখনও সমুদ্রের মাঝেও করা হয়।
পাচারকারীদের দালালদের কাছে অর্থ পরিশোধ করা হলে তাদেরকে মালয়েশিয়ার লঙ্কাবি, কিংবা মালয়েশিয়ার মূল ভূখণ্ড কিংবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে নামানো হয়। ২০ এপ্রিল এমন একটি জাহাজ থেকে ৭৮ জন যাত্রীকে পেনাং নামানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা পাচারকারীকে খুঁজে পেতে একটি অনুসন্ধান চালায়। ইউএনএইচসিআর এই প্রতিবেদনে পহেলা মে থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিনের সমুদ্রপথে পাচার ঘিরে প্রকাশিত ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে মানব পাচারের ঘটনা মে মাসে সরকার ও জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ে আগ্রহের সৃষ্টি করে। ২০ ও ২১ মে এই সমস্যায় আক্রান্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পেতে বৈঠকে বসেন। পাশাপাশি, গোটা বিশ্বের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা এসব ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় সরাসরি আক্রান্ত পাঁচ দেশ বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মায়ানমার ও থাইল্যান্ড- ২৯ মে বিশেষ সভায় মিলিত হয়। বৈঠকে আটকেপড়া অভিবাসীদের সহায়তা, নিয়মিত মানব পাচার প্রতিরোধ এবং এই অভিবাসনের মূল কারণ খুঁজে পেতে ১৭ দফা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
২ জুলাই কুয়ালালামপুরে এ নিয়ে আসিয়ানের বৈঠক হয়। ইউএনএইচসিআর অভিবাসী সমাধানে এক কোটি ৩০ লাখ ডলার সহায়তার আবেদন জানালে এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ তহবিল পাওয়া যায়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আগামী বৈঠকে এই সংকট তুলে ধরা হবে বলে আশা করছে।