‘জাতীয় কবি’ পদক পেলেন সুভাষ সাহা

Suvash Saha‘জাতীয় কবি’ পদক পেলেন বিষেরবাঁশী সম্পাদক সুভাষ সাহা। কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম প্রয়াণ দিবসে দেশের ৫০জন গুনীজনকে এ পদক দেয় নজরুল চর্চা ও গবষেণা প্রতিষ্ঠান-অগ্নিবীণা।
গতকাল বুধবার এ উপলক্ষে দিনব্যাপী এক নান্দনিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে-‘অগ্নীবীণা’। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে এই আয়োজন। পুরো আয়োজন ছিল চমকে ভরা। এই অনুষ্ঠানে সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে অবদান রাখার জন্য ওই ৫০ ব্যক্তির হতে তুলে দেওয়া হয় সম্মাননা ক্রেস্ট।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কবি পদক পান- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নজরুল গবেষক নূরুল হুদা, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, সাবেক এমপি এসএম আবু সাঈদ, ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিঞা, ঢাকার সাবেক মেয়র মো. হানিফ, শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক উপ পরিচালক ড. সাধন কুমার বিশ্বাস, মোহাম্মদ মোশাররফ হোসের ভূইয়া পিপিএম, যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক মোঃ মশিউল আলম, এডিশনাল ডিআইজি সিআইডি এস এম হাফিজুর রহমান, পশ্চিম বাংলার ঔপন্যাসিক শেখর রায় প্রমুখ।
সকালে কবির মাজারে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ.আ.ম.স আরেফিন সিদ্দিক, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের চেয়ার পার্সন ড. লীনা তাপসী খান, ছড়াকার ও কবি আসলাম সানি, তাহমিনা কোরাইশী প্রমুখ।
আরও অতিথি ছিলেন মুম্বাইয়ের আর্ট ফিল্ম ডিরেক্টর সাদেক আলী। উদ্বোধনী এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন এই অনুষ্ঠান উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এস এম আবু সাঈদ।
আবৃত্তিকার ড. শাহাদাত হোসেন নিপুর সুললিত কণ্ঠের আবৃত্তির মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘অগ্নিবীণা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এইচ এ এম সিরাজ।
এইচ এ এম সিরাজ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো রক্ষা করা উচিৎ। সরকারের কাছে আমরা আহ্বান জানাই বাংলাদেশের যে যে স্থানে তিনি থেকেছেন। সেই সব জেলায় তার নামে অন্তত পক্ষে একটি করে চত্বর করা হোক।’
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব কবিকে নিবেদিত স্বরচিত কবিতা পাঠ। এই আয়োজনে স্বরচিত কবিতা পড়েন কবি দিলতাজ রহমান, রোকন জহুর, বদরুল আহসান খান, রহিমা আখতার, হোসেন আলী, জাহানারা জনি, শাহরিয়ার সোহেল, মালেক মাহমুদ, সরদার জাহানারা ফরিদ, বশিরুজ্জামান বশির, মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
কবিতা পাঠের আয়োজনের পরেই শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব আলোচনা সভা ও সম্মানা প্রদান। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি কাজী রোজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, নজরুল গবেষক মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। এই পর্বেও সভাপতি ছিলেন এই অনুষ্ঠান উৎযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এস এম আবু সাঈদ।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তার আলোচনায় বলেন, আমি জানি ‘অগ্নিবীণা সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, দরকারি প্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি এই প্রতিষ্ঠানটি নজরুল চর্চার ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। আরেকটি কথা বলতেই হয়, এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা সকলেই নজরুলকে মনেপ্রাণে ধারণ করার চেষ্টা করেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্ত হিসেব করলে দেখা যাবে আমরা নজরুল সম্পর্কে কিছুই জানি না। নজরুল জন্মশত বার্ষিকীর সময় বলা হয়েছিলো প্রতিদিন নজরুলের অন্তত পক্ষে দুটি চরণ পড়ার জন্য, আমরা পরিনি। নজরুলের কবিতা একবার পড়ার মতো বিষয় নয়। নজরুলকে ধারণ করতে হলে নিয়মিত নজরুলের লেখা পড়তে হবে।’
কাজী রোজী বলেন, ‘আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, নারীবাদী কবি। তাকে আসলে কোনো গ-ির মধ্যে বাঁধা যায় না, কারণ তিনি সব বিষয় নিয়ে লিখেছেন। সবার কাছে একটাই আহ্বান- আপনারা নজরুলকে আরও বেশি করে পড়ুন, বেশি করে জানুন।’
অনুষ্ঠানের একটি বড় অংশ জুড়েই ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ এই মাসেই ছিলো বঙ্গবন্ধুরও ৪০তম প্রয়াণ দিবস। বারবার আলোচকদের আলোচনায় কাজী নজরুলের পাশাপাশি উঠে এসেছেন বঙ্গবন্ধু।
অনুষ্ঠানের সভাপতি এই অনুষ্ঠান উৎযাপন পরিষদের আহ্বায়ক এস এম আবু সাঈদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। জয় বাংলা শব্দটিও তিনি নিয়েছেন নজরুলের কবিতা থেকে। নজরুলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এমন অনেক সম্পৃক্ততা আছে যে কারণে নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধুও এসে সামনে দাঁড়ান।’
এই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনায় শিশুশিল্পী ফারজানা তাসনিম স্নিগ্ধা। তার ভাষণে আন্দোলিত হয় দর্শকদের মন। অন্যলোক ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল।