লাগামহীন দূর্নীতির দায়ে ফেসে যাচ্ছেন ওসি আব্দুল হাই (ভিডিও)
https://www.youtube.com/watch?v=LP4KgIMBlg8&feature=youtu.be
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ এবার ফেসে যাচ্ছেন গোয়াইনঘাট থানার বহু বির্তকিত ও দূর্নীতিবাজ ওসি আব্দুল হাই । একের পর এক লাগামহীন দূর্নীতির দায়ে গত ০৩/০৮/২০১৫ ইং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়া গত ২৯ জুলাই ২০১৫ ইং বুধবার ডিআইজি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন জাফলং এলাকাবাসী। শতাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষরযুক্ত স্মারকলিপিটি বুধবার দুপুরে প্রদান করা হয়। গত ২৫ জুলাই ২০১৫ ইং তারিখে গোয়াইনঘাট এলাকাবাসীর উদ্যোগে সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে ওসি আব্দুল হাই’র ঘুষ দূর্ণিতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এলাকার শতাধিক মুরব্বিয়ানদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করন বিশিষ্ট মুরব্বি আব্দুল মালিক। এসময় উপস্থিত ছিলেন- নাছির উদ্দিন, মুজিবুল হক, সিরাজ মিয়া, আবুল হোসেন, মফিজ উদ্দিন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জাফলংসহ গোয়াইনঘাট বাসীর জানমালের নিরাপত্তায় ওসি আবদুল হাইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
অভিযোগে প্রকাশ, গোয়াইনঘাট থানায় যোগদানের পর হতে অবৈধ অর্থ উপার্জনে ওসি আব্দুল হাই নানান অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। তিনি এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ,মাদকব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীদের নিকট থেকে মাসোহারা গ্রহন করায় গোটা গোয়াইনঘাট যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে প্রকৃত আসামীদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়া এলাকার নিরীহ ও ঘটনার সহিত সম্পর্কহীন ব্যক্তিদের অভিযোগপত্রে অর্ন্তভুক্ত করা যেন এখন গোয়াইনঘাট থানার নিত্য দিনের ঘটনা । আস্তাভাজন পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওসি আব্দুল হাই গোয়াইনঘাট থানাকে ঘুষ দূর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিনত করেছেন।
সুত্রমতে ,গত ১৩/১২/২০১৪ ইং তারিখে জাফলং সড়কে সড়ক ও জনপথ এবং বন বিভাগের জায়গায় অবৈধভাবে স্থাপিত স্টোন ক্রাসার মিল উচ্ছেদের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স । এই অভিযানে ক্ষিপ্ত হয়ে স্টোন ক্রাশার মিল মালিক ও তাদের সহযোগী সন্ত্রাসীগন একত্রিত হয়ে টাস্কফোর্সের সদস্যগনের উপর হামলা চালিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ ও বিজিবির সরকারী গাড়ি ভাংচুর ও সড়ক অবরোধ করতঃ এলাকায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এই ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার সহকারী কমিশনার (ভুমি) এস.এম ফেরদৌসআলম বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত ৩০০-৪০০ জনকে আসামী করে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মাই টিভি কর্তৃপক্ষের নিকট এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে এবং ঘটনার সময় হামলাকারীরা উক্ত টিভি সাংবাদিকের একটি ক্যামেরা ভাংচুর করে বলে জানা যায়। কিন্তু মামলা দায়ের পর ওসি আব্দুল হাই এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ইউনুস এজাহার নামীয় আসামীগণকে গ্রেপ্তার না করে অজ্ঞাত আসামীদের গ্রেপ্তারের নামে অবৈধগ্রেপ্তারী বানিজ্যে লিপ্ত হন। এজাহার নামীয় আসামীগনের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহন করে তাদের গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকেন। অথচ লোক দেখানো অভিযানের নামে ঘটনার সাথে সম্পর্কহীন নিরীহ গরীব লোকদের গ্রেপ্তারের জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশী শুরু করেন। ফলে এলাকা পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে। নিরীহ লোকজন গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য হন। ফলে এলাকায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকথায় ওসি আব্দুল হাইয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ইউনুস হামলার নেতৃত্বে দানকারী ৬ জনসহ এজাহার নামীয় ২৫ জন আসামীকে অভিযোগপত্র হতে বাদ দিয়া এলাকার নিরিহ ১৩ জনকে অর্ন্তভুক্ত করে মোট ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। অভিযোগপত্র হতে ঘটনার সহিত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এজাহার নামীয় উক্ত আসামীদের বাদ দেওয়ার বিনিময়ে থানার ওসি আব্দুল হাই প্রায় কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন।
এই ঘটনায় তদন্তে অনিয়মের অভিযোগে পরবর্তীতে এস আই ইউনুসকে ক্লোজড করা হলেও ওসি আব্দুল হাই অদ্যাবধি বহাল তবিয়তে থেকে তার অনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া নিরীহ লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা করিয়ে এবং পরবর্তীতে উক্ত মামলায় চুড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে ওসি আব্দুল হাই লক্ষ লক্ষ টাকা উৎকোচ গ্রহন করেন।
এ সংক্রান্তে গত ০১/১০/১৪ ইং এবং ডি আই জি অব পুলিশ সিলেট এর কার্যালয়ে গত১১/১২/১৪ইং তারিখে পৃথক পৃথক লিখিত আবেদন করেন গোয়াইনঘাট থানার বীরকুলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম । শুধু তাই নয় , কারনে অকারনে মিথ্যা পুলিশ এসল্ট মামলা সৃজন ও অবৈধ ধরপাকড় বানিজ্য ওসি আব্দুল হাই এর অন্যতম ব্যাবসা এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। গত ১৩/১২/২০১৪ ইং তারিখের টাস্কফোর্সের অভিযানে সওজ এবং বন বিভাগের ভুমি থেকে অবৈধভাবে নির্মিত স্টোন ক্রাশার মিল উচ্ছেদ হলেও ফের অবৈধ দখলদাররা স্টোন ক্রাশার মিল চালু করে তাদের অবৈধ কর্মকান্ড নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন। থানার ওসির সহায়তা ছাড়া এই ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া যে একেবারেই অসম্ভব, তাহা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া পাথর কোয়ারীতে অবৈধ বোমা মেশিন ব্যবহার করে অসাধু ব্যবসায়ীগন জাফলংয়ের পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে। অথচ থানার ওসি এই ব্যপারে একেবারে নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে এখানেও ওসি আব্দুল হাই নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, থানায় সেবা নেওয়ার জন্য আগত লোকজনের সথেও চরম দুর্ব্যবহার করেন ওসি আব্দুল হাই । তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী লোকজনদেরকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তিনি হয়রানী করছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। ওসি আব্দুল হাইয়ের বেআইনী ও অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে জাফলং তথা গোয়াইনঘাট এলাকায় সরকারী ভুমি দখল , পরিবেশ বিপর্যয় , নিরীহ লোকজনের অহেতুক হয়রানী নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, যার কবল থেকে গোয়াইনঘাটবাসী পরিত্রান চায়। এসব অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডের কারনে বর্তমান ওসি আব্দুল হাইকে অত্র থানা থেকে অপসারন পুর্বক তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্ঠি কামনা করেন ভুক্তভোগীরা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ও.সি আব্দুল হাই ইতিপূর্বে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট থানায় কর্মরত থাকাকালেও অনুরুপ দূর্নীতি,অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যে লিপ্ত ছিলেন বলে জানা যায়। ফলে ঐ দুই থানার লোকজন তার অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল।