মা হলো ‘কিশোর’ নাজমুল!

Nazmul aka nazmaসুরমা টাইমস ডেস্কঃ বাগেরহাটের শরণখোলায় নাজমুল (১৫) নামের এক কিশোরের মা হওয়া নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার ভোরে বাগেরহাটের শরণখোলা হাসপাতালে সে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাসপাতালে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে আছে। সবাই এক নজর দেখতে চায় ভ্যানচালক নাজমুল ইসলামের ফুটফুটে কন্যাসন্তানটিকে। জনগণের চাপ সামলাতে তাই হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
তবে নাজমুল আসলেই কিশোর, না কিশোরী তা নিয়েও সন্দেহের দোলায় দুলছে শরণখোলার মানুষ। গতকালও যে ছিল দরিদ্র ভ্যানচালক কিশোর নাজমুল, আজ তার পরিচয় পাওয়া গেল এক কিশোরী মাতা হিসেবে। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, পরম মমতায় সন্তানকে পাশে নিয়ে শুয়ে রয়েছে নাজমুলরূপী ‘নাজমা’।
এলাকাবাসী জানান, শার্ট-প্যান্ট পরা, দেখতে কিশোর। মাথায় ছেলেদের মতো চুলের ছাঁট। আসল নাম নাজমা আক্তার। বর্তমান বয়স ১৫ বছর। শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের মৃত আ. খালেকের মেয়ে নাজমা। পেটের দায়ে বছর দুই আগে নিজের নাম গোপন করে নাজমুল ইসলাম নাম দিয়ে ছেলেদের ছদ্মবেশে রিকশা-ভ্যান চালাতে শুরু করে সে। তবে এক লম্পটের লালসার শিকার হয়ে এখন সে কুমারী মা।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি নাজমা বলে, ‘আমার বয়স যখন চার বছর তখন আমার বাবা মারা যান। মা মরিয়ম বেগম বছর পাঁচেক আগে অন্যত্র বিয়ে করে আমাকে ছেড়ে চলে যান। সব হারিয়ে আমার আশ্রয় হয় বৃদ্ধ দাদির কাছে। এরপর গত এক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে রিকশা-ভ্যান চালানোর কঠিন সংগ্রামে নেমে পড়ি।’
নাজমা আরো বলে, ‘মানুষরূপী পশুদের হাত থেকে বাঁচতে আমি পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করি। নিজের নাম পাল্টে রাখি নাজমুল ইসলাম। তার পরও নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি।’
এ কথা বলার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে নাজমা। সে জানায়, শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের হার্ডওয়ার ব্যাবসায়ী রফিকুলের লালসার শিকার হয় সে। অবশেষে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বারবার এ কথা জানলেও রফিকুল তাকে স্বীকৃতি দেননি। সোমবার সন্ধ্যায় প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যায় নাজমা। ভোরে ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেয় সে।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, নাজমা ও তার মেয়ে সুস্থ আছে। পুরুষ ছেলের সন্তান হয়েছে, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সকাল থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে ভিড় করছে। এখন ভিড় সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে (৩৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী। রফিকুল উপজেলা সদরের মৃত শামছু তালুকদারের ছেলে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম জানান, নাজমার স্বীকারোক্তি মতে সোমবার রাতেই থানায় একটি ধর্ষণ মামলা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মামলার আসামি লম্পট রফিকুলকে গ্রেফতার করে বাগেরহাট আদালতে পাঠানো হয়েছে।